সভ্যতার আঁতুড়ঘর’ হিসেবে যে দেশগুলোকে মনে করা হয়, তার মধ্যে ইউরোপীয় দেশগুলো প্রথম কাতারে। যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য নারীদের জন্য নিরাপদ হিসেবেই সাধারণভাবে ভাবা হয় যদিও দেশগুলোর যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলোর রেকর্ড ভিন্ন দিকেই ইঙ্গিত দেয়।
বৃটেনভিত্তিক দি ইন্ডিপেনডেন্টসহ কয়েকটি সংবাদপত্র যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের কনকর্ড শহরতলির ঐতিহ্যবাহী সেন্ট পল বোর্ডিং স্কুলে যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ এক চিত্র তুলে ধরেছে।
এই স্কুলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের গণ্যমান্য ও দেশসেরা রাজনীতিকরাও পড়েছেন। সে তালিকায় রয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও। কয়েক ডজন সিনেট সদস্য রয়েছেন স্কুলটির সাবেক ছাত্রের তালিকায়। যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর খ্যাতনামা বহু নির্বাহী কর্মকর্তা এই স্কুল থেকেই পাস করেছেন। ১৫ বছর বয়সী এক ছাত্রী সম্প্রতি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনলে, তদন্তে পুরো বিষয়টি সামনে আসে। নিউ হ্যাম্পশায়ারের একটি আদালতে ১৯ বছর ওয়েন ল্যাব্রি নামে এক ছাত্রের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় শুনানি চলছে।
আদালতে পেশ করা বক্তব্যে বেরিয়ে আসে জঘন্য এক চিত্র। প্রতি বছর যখন নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, স্কুলের সিনিয়র ছাত্রদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
এ প্রতিযোগিতা, কোন সুস্থ-স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা নয়, বিকৃত মানসিকতার প্রতিযোগিতা। ছাত্ররা ‘স্কোরিং’ প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। স্কুলে নতুন ভর্তি হওয়া কতোজন জুনিয়র ছাত্রীর সঙ্গে কোন ছাত্র যৌন সম্পর্ক গড়তে পারলো, তাতেই তাদের স্কোরটা নির্ধারিত হয়। অনেকটা ফুটবলে কোন দল কতো গোল দিলো, সেরকম একটা ব্যাপার। এমন গোল দিতে পারা তাদের কাছে কৃতিত্বেরই! এই প্রথা আজকের নয়। বহু বছর ধরেই সেন্ট পল বোর্ডিং স্কুলে এ রীতি চলে আসছে।
স্কুলে ‘সিনিয়র স্যালুট’ বলে দীর্ঘদিনের একটি রীতি প্রচলিত। সিনিয়রদের সম্মান করা নয়, বরং তাদের যৌনভাবে তৃপ্ত করতে হয় নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রীদের। রীতিমতো ছাত্রীদের একটা তালিকা করে তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠায় ছাত্ররা।
ছাত্রীরা বুঝতে পারে চুম্বন ও অন্তরঙ্গতা বা আরও বেশি কিছু চাওয়া হচ্ছে তাদের কাছ থেকে। স্কুলের ছাদে অবস্থিত একটি স্টোররুম ‘মেকানিক্যাল রুম’ হিসেবে পরিচিত। ওই কক্ষের চাবি থাকে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের কাছে। সিনিয়র স্যালুটের অন্তরালে সেখানে চলে যৌন হয়রানি। পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে ল্যাব্রি জানিয়েছে, সিনিয়র ছাত্রদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা চলছিল।
স্কুলে নতুন ভর্তি হওয়া মেয়েদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্কোর করতে চেয়েছিল সে। ১৮৫৬ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অত্যন্ত কঠোরভাবে যাচাইয়ের পর ৫০০ শিক্ষার্থীর ভতির করা হয়। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলটি ২,০০০ একর জমির অবস্থিত।
চারপাশে গাছপালা, আর কল-কাকলীতে মুখর পরিবেশ। কঠোর অনুশাসনের মধ্যে রাখা হয় সেখানকার শিক্ষার্থীদের। তার মধ্যেই কিভাবে এসব ঘটলো, তা বিস্ময়ের জন্ম দেয়। ১৯৭১ সাল থেকে স্কুলটিতে ছাত্রী ভর্তি হওয়া প্রথম শুরু হয়। এর আগে স্কুলটিতে মেয়েদের পড়ার কোন অনুমতি ছিল না।
নিউজ ডেস্ক ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ১০:৩৬ এএম, ২০ অক্টোবর ২০১৬ বৃহস্পতিবার
এইউ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur