বিনোদন

চেহারায় চেনা, কিন্তু নাম না জানা এ মানুষটির সফলতার গল্প

সবাই চেহারায় চিনলেও নামে চেনে খুবই কম মানুষ। অথচ এই অচেনা মানুষের অভিনয়ে দর্শক বেশ উপভোগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় করলেও ব্যক্তিগত সঞ্চয় বলতে তেমন কিছুই নেই। ঢাকায় থাকেন ভাড়া বাসায়।

অভিনয়ের এক বুক স্বপ্ন নিয়ে সিরাজগঞ্জের প্রসূন থিয়েটারে আঙিনায় পা রাখেন তারিক স্বপন নামের এক কিশোর। সেটা ১৯৮৮ সালের কথা। সারা দেশে তখন ভয়াবহ বন্যার চলছে।

তারপর চলে গেছে ১০ বছর। এরই মধ্যে প্রসূন থিয়েটারের এক নাটকের মাধ্যমে জাহিদ হাসানের চোখে পড়ে যান তারিক। জাহিদ হাসান তারিককে বলেন, তুমি ঢাকায় আসলে আমি তোমাকে সহযোগিতা করতে পারি।

১৯৯৮ সালে একটা ছোটখাটো চাকরি নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। এসেই শহীদুল আলম সাচ্চুর থিয়েটারে যোগ দেন। সেখানে চার বছর মঞ্চে কাজ করে ২০০২ সালে তারিক আনামের নাট্যকেন্দ্রে যোগ দেন।

টেলিভিশনে প্রথম অভিনয় জাহিদ হাসানের হাত ধরেই। ১৯৯৯ সালে ছয় পর্বের একটি ধারাবাহিকে কাজ করেন। কিন্তু সেটা অন এয়ার হওয়ার আগেই একই বছর মাহি বি চৌধুরী ও লোপার উপস্থাপনায় আনন্দঘণ্টা ম্যাগাজিনের একটি নাটিকায় অংশ নেন।

সেখানে তাঁর অভিনয় দর্শদের মুগ্ধ করে। এরপর টেলিভিশনে নিয়মিত হন। তবে জাহিদ হাসানের প্রতি কৃতজ্ঞতা তাঁর অপরসীম। তারিক ভাই বলেন, হয়ত জাহিদ ভাইয়ের জন্যই দর্শক তারিক স্বপনকে চেনে।

এ জন্য তারিকের স্ত্রীও মাঝে মাঝে বলেন, অভিনয় করে কি হবে, আমাদের তো বাড়ি গাড়ি নেই। তারিক বলেন, বাড়ি গাড়ির জন্য আমার আক্ষেপ নেই। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে একদিন কাকলীর কাছে সিএনজির জন্য অপেক্ষা করছি।

এমন সময় একজন সার্জেন্ট এসে বললেন স্যার আপনার গাড়ি কোথায়? আমি বললাম আমার তো গাড়ি নেই ভাই। তিনি অবাক হয়ে বললেন গাড়ি নেই? এরপরে তিনি আন্তরিকতার সাথে সিএনজি ডেকে দিলেন। বললেন, স্যার আপনার অভিনয় আমার ভালো লাগে। তারিক বলেন, এটাই তো আমার বড় পাওয়া। স্ত্রীকে বললাম ২০০ কোটি টাকার মালিক হলেও আমি এ রকম ভালোবাসা পেতাম না। বাড়ি গাড়ি দিয়ে কি হবে?

অভিনয়ে বড় প্রাপ্তি কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তারিক স্বপন বলেন, নাট্যকেন্দ্রে বিচ্ছু নাটকে কেরোসিন আলী চরিত্রটি অনেক বড় একটি রোল। এটা করার জন্য ১০ জনকে বাছাই করা হয়। শেষের বেশ কিছু প্রযোজনার জন্য আমি কেরোসিন আলী করলাম। এটা আমাকে জানানো হয়েছিল আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। ইতিমধ্যে টেলিভিশন নাটকে ৫০০ চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। ভবিষ্যতে একজন নাট্যকার ও পরিচালক হতে চান তিনি।

খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না?
তারিক স্বপন বলেন, আমি অভিনয় দিয়ে দর্শকদের আটকে রাখতে চাই। আমাদের দেশে নাটকের বাজেট কম। আমরা বড় বড় বাজেটের কাজগুলোকে আমাদের অভিনয় দিয়েই পূরণ করার চেষ্টা করি। খ্যাতির বিড়ম্বনাও আছে। যেমন মহাখালীর ইএনটি হাসপাতালে আমার ভাই ভর্তি রয়েছেন। রক্ত দরকার। তাঁর চোখমুখ রক্তের অভাবে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ডাক্তার বললেন, দ্রুত রক্ত ম্যানেজ করুন। এক ঘণ্টার মধ্যেই রোগীর শরীরে রক্ত দিতে হবে। আমি রক্ত ম্যানেজ করার চেষ্টায় ব্যস্ত। সে সময় ভক্তরা বারবার আমাকে ঘিরে ধরছেন। ছবি তুলতে চাচ্ছেন। আমি বারবার বোঝাতে চাচ্ছি সিচুয়েশন। কিন্তু তাঁরা বোঝার চেষ্টাই করছেন না।

কিছু আনন্দ মিশ্রিত ঘটনাও রয়েছে। ‘লাল নীল বেগুনী’ নামের একটি নাটকে ‘হালিম’ চরিত্রে অভনয় করেছি। আমি জানি না দর্শকদের এতটা মনে ধরে যাবে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পেছন থেকে কেউ কেউ ডেকে ওঠে এই যে ‘হালিম’। পেছনে ঘুরে কাউকে দেখতে পাই না। একদিন কে যেন ডাক দিল ‘এই যে হালিম ভাই’ আমি পেছনে তাকিয়ে এক যুবককে দেখলাম। ছেলে কিছুটা বিব্রত, কাছে যেতেই দুঃখিত হয়ে বলল ভাই ‘সরি’। আমি হেসে ফেললাম। বললাম সরির কিছু নেই ভাই, আপনি যে আমার নাটকের চরিত্রের নাম মনে রেখেছেন এটাই বিশাল ব্যাপার।’

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৭:০০ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ

Share