চাঁদপুর হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য রক্ত টানছেন ল্যাবএইডের কর্মচারীরা,রমরমা অর্থ বাণিজ্য

চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নাম করে প্রতিদিন মোটা অংকের অর্থ বানিজ্য করছেন ল্যাব এইড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এতে দুর্ভোগ ও বাড়তি অর্থ খোয়াচ্ছেন রোগীরা। জেলার এই প্রধানতম সরকারি হাসপাতালটিতে প্রায় সময় অনেকের কাছে ল্যাবএইড নামের একটি ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অনিয়মের অভিযোগ শোনা যায়। 

সরজমিনে দেখা গেছে প্রায় প্রতিদিনই ল্যাব এইডের নিয়োগকৃত কয়েকজন কর্মচারী হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে তাদের ল্যাবে পরীক্ষার জন্য রোগীদের শরীর থেকে সিরিজের মাধ্যমে নিজেরাই রক্ত টেনে নিচ্ছে এবং সেখানেই রিসিট কেটে টাকা আদায় করছেন। যদিও এটি সম্পর্ণ নিয়মের বাহিরে তবুও সরকারি হাসপাতালে নিয়মিত এমন অনিয়ম করে চলেছেন ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। 

২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে  গিয়ে  দেখা যায়, ল্যাবএইড নামের চাঁদপুর শাখার একটি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মচারী চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ঢুকে বেশ কিছু শিশুর শরীর থেকে সিরিজের  মাধ্যমে রক্ত কালেকশন করছেন এবং রোগীর অভিভাবকদের  কাছ থেকে রিসিট দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর ওই পরীক্ষা বাবদ একেকজন রোগীর কাছ থেকে ১৫,শ টাকা করে নেয়া হচ্ছে বলে রোগীরা জানিয়েছেন। অন্যান্য ওয়ার্ডের পাশাপাশি হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডেই তারা এমন কার্যকালাপ বেশি করে থাকেন বলে জানা গেছে। তবে এমন কর্মকান্ডের সাথে হাসপাতালের নার্সরা এবং বেশ ক,জন চিকিৎসকও জড়িত রয়েছেন বলে রোগীরা জানিয়েছেন।

শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা এক শিশু রোগীর অভিবাবক জানান, শিশু ডাক্তার মাহাবুব আলী খান ল্যাবএইডে তাদেরকে নতুন করে রক্ত পরীক্ষার কথা বলেছেন। একাধিক রোগীরা জানান, তারা প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক এবং হাসপাতালে বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা করালেও শিশু বিশেজ্ঞ মাহাবুব আলী খান সহ বেশ ক,জন চিকিৎসক জানান, তাদের সেই পরীক্ষা সঠিক হয়নি। তাই পুনরায় পরীক্ষার জন্য ল্যাবএইডে কথা জানিয়ে দেন। এর বিনিময়ে তারা পেয়ে থাকেন মোটা অংকের কমিশন।  আর এভাবেই নার্স ও চিকিৎসকের সমন্বয়ে সরকারি হাসপাতালে চলছে এমন অনিয়ম। 

হাতে নাতে ধরা পড়া ওই কর্মচারীদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা  বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে এই ব্লাডের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করবো এইজন্য রক্ত নেওয়া হচ্ছে। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোন অনুমতি নেওয়া  আছে কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন এইভাবে কোন  অনুমতি নেওয়া হয়নি। 

এ বিষয়ে ডিউটিরত নার্সরা জানান, তারা যে কাজটি হাসপাতালে গিয়ে করছেন তা নিয়ম বর্হিভূত।  

হাসপাতালের নিকটে থাকা পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষ জানান, হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, চিকিৎসক, স্টাফ ও নার্সদের সহযোগিতায় তারা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদপুর  সরকারি হাসপাতাল থেকে এ ধরনের অর্থ বাণিজ্য করে আসছে। 

এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এ কে এম মাহবুবুর রহমানের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, এই বিষয়টি আমার নজরে ছিলোনা আপনাদের মাধ্যমে তা জানাতে পারলাম। আমাকে বিষয়টি অবগত করার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। 

যে প্রতিষ্ঠানটি হাসপাতালে এসে এ ধরনের কার্যকলাপ চালাচ্ছেন তা কোন ভাবেই নিয়মে পরেনা। আমরা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। যে সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা এই হাসপাতালে  রয়েছে তা বাইরে গিয়ে করানো কোন ভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু 

যে সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা এই হাসপাতালে ব্যবস্থা নেই, সেগুলো আমাদের সিস্টারের মাধ্যমে বাইরে নিয়ে করাতে পারে। এছাড়া বাইরের কেউ হাসপাতালে  এসে নিজেরাই ব্লাড কালেকশান করে, রিসিট এর  মাধ্যমে টাকা আদায় করে নিয়ে যাবে তা কোন ভাবেই কাম্য নয়। যদি কেউ এমনটি করে থাকেন। তাহলে তা সম্পূর্ণ অন্যায়, অনিয়ম। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি,২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

Share