Home / চাঁদপুর / পানি দূষিত ও দুর্গন্ধময়ের কারণে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে ৮০ ভাগ মাছ বিলুপ্ত
পানি দূষিত ও দুর্গন্ধে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে ৮০ ভাগ মাছ বিলুপ্ত

পানি দূষিত ও দুর্গন্ধময়ের কারণে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে ৮০ ভাগ মাছ বিলুপ্ত

চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে (সিআইপি) গত ৪০ বছর ধরে জোয়ার-ভাটার পানির প্রবাহ না থাকায় প্রকল্প এলাকার ৮০ ভাগ মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একই সঙ্গে নদীর পানি হয়ে গেছে বিবর্ণ ও দূষিত। শুষ্ক মৌসুমে পানির দূষণ প্রকট আকার ধারণ করে। ওই সময় দুর্গন্ধে নদীর পাড়ের মানুষের বসবাস করাই দুঃসহ হয়ে উঠে। এ ছাড়া দূষিত পানির কারণে প্রতিনিয়তই চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।

জানা যায়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধাসহ পানি সংশ্লিষ্ট সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে রায়পুর, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর সদর (আংশিক), ফরিদগঞ্জ, হাইমচর ও চাঁদপুর সদর (আংশিক) উপজেলা নিয়ে গঠিত এ সিআইপির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৯৭৫ সালে।

এ ব্যাপারে প্রকল্প এলাকার অধিবাসীরা জানান, এক সময় ডাকাতিয়া নদী ও নদীর সাথে সংযুক্ত এ খালে রুই, কাতলা, মৃগেল, আইড়, কালিবাউশ, বোয়ালসহ প্রায় ১ শ’ প্রজাতির ছোট ও বড় আকারের মাছে ভরপুর থাকত। নদীর পাড়ের স্থানীয় লোকজন সারা বছর বিভিন্ন ধরনের জাল, আনতা, টেঁটা, বড়শি ইত্যাদি দিয়ে মাছ ধরে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করত। শত শত জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত।

সিআইপির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সিআইপি কর্তৃপক্ষ ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত হাজীমারা স্লুইস গেট ও চরবাগাদী নেভিগেশন (নৌ পারাপার) গেটের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রিত করে প্রকল্প এলাকায় জোয়ার-ভাটার পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এতে বাইরে থেকে প্রকল্প এলাকায় পানি প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। পানি নিষ্কাশনের সময় ছাড়া অন্য সময় স্লুইস গেট বন্ধ রাখা হয়। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে বেশিরভাগ পানি বের করে দেওয়ার ফলে প্রকল্পের ৮০ ভাগ খাল পানিশূন্য হয়ে যায় এবং পানি তলদেশে নেমে যায়। ফলে কমে যাওয়া পানি দূষিত হয়ে পড়ছে এবং মরে যাচ্ছে সকল প্রকার মাছ।

চাঁদপুর (সিআইপির) নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) শওকত আলী জানান, প্রকল্প এলাকায় ৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাকাতিয়া নদী ও ৭৫৬ কিলোমিটার খাল আছে। প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে নিয়ম না থাকায় স্লুইস গেট ও নেভিগেশন গেট দিয়ে জোয়ার-ভাটার পানিপ্রবাহ করা হচ্ছে না। প্রত্যেক বছর নভেম্বরের শেষ দিকে চরবাগাদী পাম্প হাউসের নিচের দিকে যান্ত্রিক মেরামত কাজের সুবিধার্থে প্রকল্প এলাকার বেশিরভাগ পানি বের করে ফেলা হয়। এতে অধিকাংশ খাল পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং নদীর তলায় পানি চলে যায়।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্যা জানান, স্লুইস গেট বন্ধ রাখায় দীর্ঘ সময় স্থির হয়ে থাকা পানি দূষিত হয়ে পরিবেশ দুর্গন্ধময় করে ফেলে। পানি সংকট আর পানি দূষণের কারণে প্রকল্প এলাকার ৮০ ভাগ মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রে রেণু ও পোনা উৎপাদন ব্যাহত হওয়াসহ নদী খাল পুকুরে মাছের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

‘মৎস্য ও পরিবেশবান্ধব লক্ষ্য নিয়ে স্লুইস গেট দিয়ে জোয়ার-ভাটার পানিপ্রবাহ রাখা হলে প্রকল্প এলাকায় মৎস্য সম্পদের ব্যাপক উন্নতি হবে এবং এবং পানি দূষণ কমে যাবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঢাকার মৎস্য অধিদফতরের ‘ওয়েট ল্যান্ড বায়োডাইভারসিটি রিহ্যাবিলিটেশন’ প্রকল্পের (ডব্লিউবিআরপি) সহকারী পরিচালক তৌহিদুর রহমান ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, ডব্লিউবিআরপি’র মাধ্যমে সেচ প্রকল্পগুলোর স্লুইস গেট কৃষি ও মৎস্য সম্পদবান্ধব হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনা কৌশল বাস্তবায়নের জন্য একটি গাইড লাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। গাইড লাইনটি অনুসরণ করে ২০১১ সাল থেকে পাবনা সেচ প্রকল্পের স্লুইস গেট খোলা রাখায় প্রকল্প এলাকায় বাইরে থেকে আসা মাছের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর গাইড লাইন অনুসরণের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য প্রকল্প এলাকার জলাভূমিতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্ভব হবে।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ||আপডেট: ১১:২১ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০১৫, বুধবার

এমআরআর