বেচাঁদপুর আড়াইশ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালের নানা সম্ভাবনা, অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণার খবর গত ৫টি ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিদনে বেরিয়ে এলে রয়ে গেছে আরো কিছু অজানা কাহিনী। যে কাহিনীগুলো হয়তো কর্তৃপক্ষের চোখের অগোচরে অথবা তারা জেনেও না জানার ভাণ করে তাদের ‘সরকারি কাজ’ করে যান। এর মধ্যে গত ক’দিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরো কিছু চমকপ্রদ ঘটনা।
সরেজমিনে হাসপাতালে রোগী বেশে থেকে দেখা গেছে এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে, এ হাসপাতালটিতে নানা ধরনের প্রতারকের প্রবেশ, বিভিন্ন ধরনের দালাল বাহিনী, ঘরোয়া দালাল বাহিনীর আনাগোনা রয়েছে। যারা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ছলছুতায় রোগীদের পকেট কাটছে এবং রোগীদের সাথে প্রতারণা করছে।
শুধু তাই নয়, দেখা গেছে চাঁদপুর শহরের অনেক ঔষধের দোকানের কর্মচারীরা ভিজিটিং কার্ড নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করে। তারা ওইসব ঔষধের দোকানের এসব ভিজিটিং রোগীদের দিয়ে কম দামে ঔষধ বিক্রি করবে বলে তাদের ঔষধের দোকানের প্রচারণা চালায়। এতে রোগীরা নানাভাবে বিভ্রান্ত হয়।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর অভিভাবক জানান, তিনি তার কন্যাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন প্রায় তিনদিন হয়েছে। রোববার সকালে হাসপাতালের সন্নিকটে এক ঔষধের দোকানের কর্মচারী এসে ওই ঔষধের দোকানের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে যায় এবং বলে যে, তাদের দোকানে ন্যায্যমূল্যে ঔষধ বিক্রি হয়। ওই রোগীর অভিভাবক কর্মচারীর কথা বিশ্বাস করে ওই দোকান থেকে প্রায় দু’হাজার টাকার ঔষধ ক্রয় করেন। পরবর্তীতে তার এক নিকটাত্মীয় তাকে জানান যে, ওই ঔষধগুলোর মূল্য প্রায় পাঁচশ’ টাকা বেশি রাখা হয়েছে। তিনি আবার ওই প্রেসক্রিপশন নিয়ে কালীবাড়ির একটি ঔষধের দোকানে গিয়ে ওই একই ঔষধের মূল্য পাঁচশ’ টাকা কমে পান।
এভাবে চাঁদপুর ২৫০ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চলছে নানা ধরনের প্রতারণা।
অন্য এক রোগী জানালেন, শুধু এ ধরনের প্রতারণাই নয়, আরো নানা প্রতারণা রয়েছে। যেমন ডাক্তার রোগীকে যে ঔষধের ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন সে অনুসারে অনেক ঔষধের দোকানদার ঔষধ দেন না। বরং যে ঔষধের নাম লেখা রয়েছে ঔষধের দোকানদাররা অন্য ঔষধ দিয়ে দেন। জরুরি সঙ্কটাপন্ন রোগীদের বেলায় তাদের অভিভাবকদের সে সময় তা যাচাই করার সময় থাকে না। তারা তাড়াতাড়ি ঔষধ ক্রয় করে নিয়ে এলে সিস্টার বা ডাক্তার তাদের ওপর নারাজ হন। কারণ ডাক্তার ব্যবস্থাপত্রে যে ঔষধ লিখে দিয়েছেন, ঔধষের দোকানদাররা ওই ঔষধ না দিয়ে মানহীন ঔষধ কোম্পানীর ঔষধ গছিয়ে দেন।
রোগীদের কাছ থেকে আরো জানা যায়, তারা এসব ঔষধ ফেরত দিতে গেলেও ঘটে নানা বিপত্তি। অনেক ঔষধ দোকানদার ওই সময় উপস্থিত থাকে না, দোকান বন্ধ থাকে, আবার দোকানদার থাকলেও তারা ফেরত দিতে চান না। আবার অনেকে ফেরত দিলেও যে মূল্যে কেনা হয়েছিল তার অর্ধেক মূল্য দিয়ে থাকেন অনিচ্ছাসত্ত্বে। রোগী বা রোগীর অভিভাবকদের তখন তাই গ্রহণ করতে হয় নিরূপায় হয়ে, কারণ এছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
আরো জানা গেছে, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রোগীদেরকে বয়, গেটম্যান, সিস্টারসহ অনেককেই ‘বখশিশ’ দিতে হয়। না দিলে গেটম্যানরা তাদের অভিভাবকদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেন না, সিস্টাররা ঠিকমতো রোগীর কাছে আসেন না, খোঁজ-খবর নেন না।
তবে এ ধরনের চিত্র সবক্ষেত্রে নয়, ৮০ভাগ নার্সের বেলায় ঘটে বলে জানিয়েছেন রোগী ও রোগীর অভিভাবকরা। অন্যদিকে গেটম্যান, বয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা আবার অন্যভাবে রোগীদের হয়রানি ও প্রতারণা করে থাকে।
জানা গেছে, রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট অনেক নার্স দেখে এসব ঠিকমতো হয়নি মন্তব্য করে তাদের মনোনীত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রেরণ করে কমিশন গ্রহণ করেন। ওয়ার্ড বয়রা, গেটম্যানরা সদরঘাটের যাত্রী ছিনতাইয়ের মতো রোগীদের টেনে হেঁছড়ে তাদের মনোনীত প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করান বিভিন্ন অপারেশনের জন্যে অথবা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সদর হাসপাতালে ভালো হয় না মন্তব্য করে তাদের কমিশনপ্রাপ্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাবার জন্যে উদ্বুদ্ধ করে থাকে।
এভাবেই চলছে দিনের পর দিন এই হাসপাতালটিতে নানা প্রতারণা, অনিয়ম। এগুলো দেখার দায়িত্ব কার? যাদের হাতে এসব দেখার বিষয়, তারা হাজার কাজের কাজী। তাদের কি সময় হবে রোগীদের প্রতারণা থেকে বেঁচে সুষ্ঠু সুন্দরভাবে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের?
আপডেট: ০৪:৪৭ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০১৫, রোববারচাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫