মতলব উত্তর

চাঁদপুর পৌর পরিষদের বিদায়-বরণ

চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচিত প্রথম মেয়র হিসেবে আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। টানা দ্বিতীয় মেয়াদেও মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি দীর্ঘ সাড়ে ১৪ বছরেও বেশি কার্যদিবস দায়িত্ব পালন করেছেন। ১২৫ বছরের প্রচীণ এই পৌরসভার ইতিহাসে যা অতীতের সকল নির্বাচিত পৌর প্রধানের চেয়ে বেশি।

২৫ অক্টোবর সোমবার পৌরসভার দ্বিতীয় নির্বাচিত মেয়র এবং ১২তম পৌর প্রধান হিসেবে অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েলকে চেয়ারে বসিয়ে দীর্ঘদিনের সেই দায়িত্ব তুলে দেন সাবেক মেয়র নাসির উদ্দিন আহমেদ। এ যেনো কবি সুকান্তের বলে যাওয়া নিয়ম-‘এসেছে নতুন, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান।’

সোমবার সকাল ১০টায় চাঁদপুর পৌরসভা কার্যালয়ে পৌর পরিষদের বিদায়-বরণ অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিদায়ী মেয়রকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। পরে নতুন মেয়র এবং কাউন্সিলদের একইভাবে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয়া হয়। এরপর নতুন মেয়রকে বিদায়ী মেয়র দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।

বিদায়ী বক্তব্যে সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি আমার দায়িত্বকালীন সময়ে সর্বোচ্চ দিয়ে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করেছি। চাঁদপুর পৌরসভার স্বচ্চতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছি। প্রতি মাসে পরিষদের সবাইকে নিয়ে সভা করেছি। এর আগে এমন চর্চা ছিলো না। পৌরসভার টাকা পয়সার লেনদেন এখন আর হাতে হয় না। সবকিছুর অনলাইনে ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। পৌর কর, টোক্স, ভাড়া থেকে শুরু করে সকল টাকা অনলাইনে নেয়া হয়।

এতে করে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে। পৌরসভায় এখন আর দুর্নীতি নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে এটি একটি উদাহরণ। তাই এটাকে ধরে রাখতে হবে। যেহুতু ভালোর কোনো শেষ নেই, তাই আরো ভালো করতে হবে। পৌরবাসীর সেবার মান আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি তখন পৌরসভার আয় ছিলো সাড়ে তিন কোটি টাকা। এবারের বাজেটো আয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ পৌরসভার সকল ব্যয়ভার বহন করার পরেও পৌরসভার নিজস্ব ফান্ড থেকো বছরে ৭/৮ কোটি টাকার কাজ করা হয়। এটাকে আরো উন্নতি করতে হবে।

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে নাসির উদ্দিন আরো বলেন, প্রত্যেক মানুষের জীবনে আনন্দ এবং বেদনার দিন আসে। আজকের দিনটি আমার জন্যে খুবই আনন্দের এবং বেদনার। কারণ আজকে আমার বিদায়ের দিন। এটিই নিয়ম। নতুন মেয়র আমার ছোট ভাই। তিনি আমাদের দলের লোক। অত্যন্ত ভদ্র এবং ভালো মানুষ। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলেছি, আপনারা নতুন মেয়রকে আমার চেয়েও বেশি সহযোগিতা করবেন। তাহলেই আমি আরো বেশি খুশি হব।

তিনি আরো বলেন, মেয়র হিসেবে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চাঁদপুর পৌরসভাকে একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় রূপ দিতে পেরেছি। পৌরসভার উন্নয়নে আমি যে কাজ করেছি, নতুন মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর তার চেয়ে বেশি কাজ করলেই আমি আরো বেশী খুশী হব।

নব-নির্বাচিত মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও সম্পদ মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর অন্তর অন্তর নতুন কেউ আসেন এবং পুরাতনকে বিদায় জানাতে হয়। এভাবেই একটি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন ও শ্রীবৃদ্ধি হয়।

বিগত ১২৪ বছরে বছরে চাঁদপুর পৌরসভা যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা প্রত্যেকে নিজেদের যোগ্যতা এবং কাজে পৌরসভার উন্নয়নে কিছু না কিছু করে গেছেন। আমাদের নাসির উদ্দিন সাহেবও তেমনই অনেক কাজ করেছেন।

তিনি বলেন,আমরা পৌরসভার নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের কাছে যে ইশতেহার দিয়েছি, এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তা বাস্তবায়ন করা। সেই ইস্তেহার বাস্তবায়নে এই পরিষদের সবাইকে একটি পরিবার হয়ে কাজ করতে হবে। বিগত সময়ে যারা পৌরসভার নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে ইউসুফ গাজী ও নাসির উদ্দিন আহমেদ জীবিত আছেন। আমরা তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব। তাদের ভালো কাজগুলো অনুসরণ করবো। কোন ভেদাভেদ না রেখে আমরা সবাই মিলে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করব।

চাঁদপুর পৌরসভার প্রধান হিসাবরক্ষক ও পৌর কর্মচারীদের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন হাওলাদারের পরিচাৈনায় বক্তব্য রাখেন, সচিব আবুল কালাম ভূঁইয়া, নব-নির্বাচিত কাউন্সিলর অ্যাড. হেলাল হোসাইন, আয়শা রহমান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, ১নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আলী মাঝি, ২নং ওয়ার্ডের মোঃ মালেক শেখ,৩নং ওয়ার্ডে আব্দুল লতিফ গাজী, ৪নং ওয়ার্ডের মামুনুর রহমান (দোলন), ৫নং ওয়ার্ডের মোঃ সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়া, ৬নং ওয়ার্ডের মুহাম্মদ সোহেল রানা, ৭নং ওয়ার্ডের মোঃ সফিকুল ইসলাম, ৯নং ওয়াডের চাঁন মিয়া মাঝি, ১০নং ওয়ার্ডের মোঃ ইউনুছ শোয়েব, ১১নং ওয়ার্ডের ইকবাল হোসেন বাবু পাটওয়ারী, ১২নং ওয়ার্ডের মোঃ হাবিবুর রহমান দর্জি, ১৩নং ওয়ার্ডের মোঃ আলমগীর গাজী, ১৪নং ওয়ার্ডের মোঃ খায়রুল ইসলাম নয়ন, ১৫নং ওয়ার্ডে মোঃ কবির হোসেন চৌধুরী।

সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের ফেরদৌসী আক্তার; ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের খালেদা বেগম;৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের ফরিদা ইলিয়াছ; ১০, ১১ ও রহমান; ১৩, ১৪ ও ১৫নং ওয়ার্ডের শাহিনা বেগম।

উল্লেখ্য,গত ১০ অক্টোবর চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মেয়র পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। একই সাথে পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে ১৫ জন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত পাঁচটি ওয়ার্ডে পাঁচজন মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম,২৫ অক্টোবর ২০২০

Share