চাঁদপুর

চাঁদপুর-ঢাকা রুটের লঞ্চে বাড়তি ভাড়া আদায় অব্যাহত

দেশের সকল গণপরিবহরের ভাড়া ১ সেপ্টেম্বর থেকে সরকার কমিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিলেও চাঁদপুরে সরকারের নির্দেশনা না মেনে চাঁদপুর ঢাকার মধ্যে নিয়মিত ২৪টি লঞ্চ চলাচল করছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ লঞ্চ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বৃদ্ধি করে প্রতিদিন হাজার-হাজার টাকা হাতিয়ে নিচেছ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বারবার সংবাদ প্রকাশ হলেও চুপচাপ স্থানীয় প্রশাসন।

এতে করে এ পথে প্রতিদিন চলাচলকারী সাধারন যাত্রীরা লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মি হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচেছ। যাত্রীদের অভিমত নদী পথে চলাচলের সময় মধ্যনদীতে লঞ্চ মালিকদের নির্দেশে লঞ্চের ভিতরে দায়িত্বে থাকা কেরানী ও স্টাফরা যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরন, তাদেরকে এক প্রকার জিম্মি ও তাদের সাথে প্রতারণা করে তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নিচেছ বলে যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকার সদরঘাট নৌ-টার্মিনাল থেকে এমভি দেশান্তর প্রস্তাবিত সোনার তরী নামক লঞ্চটি ছেড়ে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে এসে পৌছে রাত সাড়ে ৯টায়। এ লঞ্চটিতে বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ৩শ’ যাত্রী ছিল। সৌখিন শ্রেণির যাত্রীদের টিকেটের মূল্য ২৫০ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও প্রতিজন যাত্রীর কাছ থেকে ২৮০টাকা।

আরও পড়ুন…. চাঁদপুরে সোনার তরী লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ায় যাত্রীদের বিক্ষোভ

নিচের চেয়ার সিটের যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকার স্থলে ১৮০ টাকা, কেবিনের ভাড়া ৫০০ টাকার স্থলে ৬০০ টাকা, ডাবল কেবিনের ৮০০ টাকার স্থলে ১ হাজার টাকা ও ডেক শ্রেণির যাত্রীদের কাছ থেকে ১শ’ টাকার স্থলে ১৩০ টাকা- এভাবে প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার ফলে যাত্রীরা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করে।

তখন তাদেরকে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিবে বলে লঞ্চের সুপার ভাইজার আশ্বস্ত করে। পরে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে লঞ্চটি ভিড়লে যাত্রীদের মধ্যে ২জন সংবাদকর্মীসহ প্রায় ২০/২৫জন যাত্রীকে ৫০ টাকা ও ১শ’ টাকা করে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং প্রায় ৩শ’ যাত্রীকে টাকা ফেরত না দিয়ে তাদের সাথে রীতিমতো প্রতারণা করে তাদের কাছে থেকে নেওয়া হাজার-হাজার টাকা অতিরিক্ত ভাড়া ফেরত দেওয়া হয়নি।

এ লঞ্চটি শুক্রবার একই সময় ঢাকা থেকে প্রায় ৪শ’ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে রাত সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর এসে পৌছে। তখনও শত-শত যাত্রী এক হয়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করলে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রতারণা ও পরিস্থিতি শান্ত করতে বাধ্য হয়ে তাদের প্রতিজনের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত ভাড়া বাবদ প্রায় ৩০ হাজার টাকা ফেরত দেয় বলে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার মোঃ শওকত আলী বেপারী এ প্রতিনিধির কাছে সত্যতা স্বীকার করেন।

লঞ্চ কর্তৃপক্ষের এ ধরনের প্রতারণায় এতে করে সরকারের নির্দেশনা ভেস্তে যাচেছ। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন করা একান্ত প্রয়োজন বলে ভুক্তভোগী যাত্রীরা তাদের মত প্রকাশ করতে গিয়ে এ প্রতিনিধিকে জানান। চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা এ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস্ত করেন।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে কয়েক মাস ঢাকা-চাঁদপুর এর মধ্যে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে সরকারি নির্দেশনায় চলাচল শুরু হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব লঞ্চগুলোতে যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তা না মেনে পরিপূর্ন যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর থেকে যাত্রা করতে দেখা যায়। এতে করোনা মহামারি কমবে দূরের কথা আরও বৃদ্বি পাচেছ বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

এ অবস্থার কারণে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন কয়েকটি লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করেন ও হুশিয়ার করে দেয়। তবে তারা অনির্ধারিতভাবে কিংবা কোন প্রকার নির্দেশনা ছাড়াই লঞ্চে সকল শ্রেণির যাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে যাচেছ বলে অসংখ্য যাত্রীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়। মঙ্গলবার সরেজমিনে নৌ-টার্মিনালে গিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় অব্যাহত রয়েছে বলে যাত্রীদের কাছ থেকে জানা যায়।

সরকার ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে গণপরিবহনে পূর্বের ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন। যদি কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এদিকে চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী লঞ্চগুলো নিজেদের ইচ্ছেমত যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছেন। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন নোটিশ কিংবা যাত্রীদের অবগতির বিষয়ে নির্দেশনাও নেই। তবু তারা পেশীশক্তি প্রয়োগ করে যাত্রীদের বিপদে ফেলে ও জিম্মি করে ভাড়া বাড়িয়ে নিয়ে নিজেরা লাভবান হছেছ। প্রতিটি লঞ্চ কর্র্তৃপক্ষ প্রতিদিন লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে।

মঙ্গলবার শওকত আলী, মাদুদ আলম, জিলান খান, তৌহিদ, মিজানুর রহমান ও শাওন নামে কয়েকজন যাত্রী সোনারতরী-২ লঞ্চের যাতায়াত কালের টিকিট দেখালেন- ওই টিকিটের গায়ে ছাপার অক্ষর চেয়ারের ভাড়া ১৫০ টাকা। কিন্তু তারা আলাদা সীল মেরে নিচ্ছে ১৮০ টাকা, সৌখিন শ্রেণির ভাড়া ২৫০ টাকা হলেও নেওয়া হচ্ছে ২৮০টাকা ভাড়া আদায় করছেন। এ ব্যাপারে জরুরীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ভুক্তভোগী যাত্রীরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক মোঃ কাউছার আহম্মেদ জানান, প্রতিটি লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে ঢাকা ও চাঁদপুর থেকে লিখিতভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও তারা সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ উঠেছে। কোন যাত্রী যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে। তারপরও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেস্টা করবো। আমাদের উধর্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

স্টাফ করেসপন্ডেট,১৬ সেপেটম্বর ২০০২০

Share