স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
চাঁদপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের দর্জিঘাট এলাকায় ঝগড়াটে শ্বাশুড়ি নূরজাহানের একগুঁয়েমিতে প্রাণ হারালো এক নবজাতক।
গৃহবধুকে হত্যার উদ্দেশে বাড়িতে রেখে জোরপূর্বক প্রসব করানোর সময় মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করায় স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে অবশেষে চাঁদপুর প্রিমিয়ার হাসপাতালে নেওয়ার পর সিজারিয়ান শিশুা প্রসব করালেও অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলে গৃহবধূ কিন্তু বাঁচানো যায়নি শিশুটিকে।
দীর্ঘ সময় মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করার পর শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসা না করানোর কারণে অবশেষে সে মারা যায়।
শিশুটির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর শ্বাশুড়ি নূরজাহান বেগম হাসপাতাল থেকে শিশুটির মাকে না জানিয়ে তাকে কাপড়ের ভেতরে পেঁচিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় এই ঘটনা ঘটার পর মৃত শিশুটিকে মানুষের অজান্তে মাটিচাপা দেওয়ার চেষ্টাকালে স্থানীয়রা এসে বাধা দেয়।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সড়ক দর্জিঘাট খান বাড়ি মুসলিম খানের ছেলে আলাউদ্দিন খান ১৫ বছর পূর্বে লাবণি নামের মেয়েকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে তার শাশুড়ি নূরজাহান বেগম তাকে নির্যাতন করতো। ৭ বছর পূর্বে লাবণি বিষপানে রহস্যজনক মৃত্যুতে ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
পরে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার পর আলাউদ্দিন খান মায়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে চট্টগ্রামে চলে যায়। দীর্ঘ ২ বছর পূর্বে নেত্রকোণার জেলার মোহনগঞ্জ থানার নীল চাঁন মিয়ার মেয়ে হাসিনা বেগম গার্মেন্টেসে চাকুরি করা অবস্থায় আলাউদ্দিন খান তাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর চাঁদপুরে আসায় আলাউদ্দিনের মা নূরজাহান বেগম তার ছেলের বউকে মেনে না নিয়ে অত্যাচার শুরু করে। বঙ্গবন্ধু সড়ক দর্জিঘাট এলাকায় মুসলিম খানের টিনশেড বিল্ডিং থাকা সত্ত্বেও তার ছেলে ও ছেলের বউকে সে ঘরে না রেখে ভেতরে টয়লেটের পাশে ভাঙ্গা একটি দোচালা ঘরে থাকতে দেয়।
গত বুধবার রাতে হঠাৎ প্রসব যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ায় আলাউদ্দিনেরর স্ত্রী হাসিনা বেগমকে হাসপাতালে না নিয়ে তার শ্বাশুড়ি নূরজাহান ঘরের ভেতরে জোরপূর্বক আটকে রেখে গৃহবধূকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাচ্চা প্রসব করানোার চেষ্টা চালায়। এসময় গৃহবধূর আত্মচিৎকারে আশেপাশের লোকজন দৌড়ে এসে গৃহবধূকে উদ্ধার করে দ্রুত শহরের হাজী মহসিন রোডস্থ প্রিমিয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার দ্রুত তার অপারেশন করে বাচ্চা প্রসব করিয়ে গৃহবধূকে রক্ষা করে। কর্তব্যরত ডাক্তার বাচ্চাটি বাঁচানোর উন্নত চিকিৎসা দিতে ঢাকা পাঠানোর নির্দেশ দেয়। কিন্তু আলাউদ্দিন খান ঢাকা নেওয়ার কথা বলেও তার মা নূরজাহান বেগম বাধা দিয়ে হাসপাতালে বাচ্চাটিকে রাখে। শুক্রবার রাত ১২টায় শিশুটির মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করার পর অবশেষে মারা যায়।
শিশুটির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর শ্বাশুড়ি নূরজাহান তার ছেলের বউকে না জানিয়ে পালিয়ে শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে প্রিমিয়ার হাসপাতালের মালিক ডাক্তার মোাবারক হোসেন জানান, গৃহবধুর শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে হাসপাতাল না এনে বাড়িতে জোরপূর্বক প্রসব করানোর চেষ্টা করাকালে তার জরায়ু ফেটে যায়। দীর্ঘ সময়পর তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে আনায় অবশেষে অপারেশনের মাধ্যমে শিশুটিকে প্রসব করিয়ে গৃহবধূকে প্রাণে বাঁচানো হলেও দর্জাল শ্বাশুড়ির কারণে বাচ্চাটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে শ্বাশুরি নূরজাহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়িতে প্রসব করানোর চেষ্টা করে না পারায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর শিশুটি মারা যায়।
ছেলে আলাউদ্দিন খানের প্রথম স্ত্রী বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনাটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, হারপিক খেয়ে মারা গেছে সেই ঘটনায় কারো দোষ না। এদিকে মৃত শিশুটি বাড়িতে এনে শ্বাশুড়ি নূরজাহান মাটিচাপা দেওয়ার সময় এলাকার মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধরে। এ নিয়ে বাগবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। পরে মুসলিম শরীয়ত অনুযায়ী শিশুটিকে গোসল করিয়ে দাফন করা হয়। ঘটনার পর চাঁদপুর নতুনবাজার ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে এলাকাবাসী শ্বাশুড়ি নূরজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়।
আপডেট : বাংলাদেশ সময় : ১১:৫০ অপরাহ্ন, ১৯ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার ০৩ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি