Home / কৃষি ও গবাদি / চাঁদপুরে বোরো ঘরে তোলার মূহুর্তেই ঝড়-বৃষ্টি:উৎপাদন আড়াই লাখ মে.টন
rice
চাঁদপুর সদরের কল্যাণপুরের সায়েরা খাতুন কিন্ডার গান্ডেনের পেছন থেকে ছবিটি তোলা ; ফাইল ছবি

চাঁদপুরে বোরো ঘরে তোলার মূহুর্তেই ঝড়-বৃষ্টি:উৎপাদন আড়াই লাখ মে.টন

চাঁদপুরে ইরি-বোরো ঘরে তোলা শুরুর মূহুর্তেই ঝড়-বৃষ্টি ও জনবলের কারণে সঠিকভাবে ধান মাঠ থেকে কেটে আনতে পারছেনা। ফলে কৃষাণÑকৃষাণীরা নানা সমস্যার সম্মুখীন এখন। ধান কেটে আনা ও মাড়াই করার লোকবল পাচ্ছে না। ফলে বৃষ্টির ফাঁকে ফাঁকে তারা ধান কাটা ও মাড়াই করার চেষ্টা করছে। অন্যান্য বছর তারা মাঠেই ধান মাড়াই করতে পারত। কিন্ত এবার ঝড়-বৃষ্টি ও জনবলের অভাবের কারণে তা করতে পারছে না। এদিকে আবার রমজান মাস এসে গেছে ।

চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করলে কর্মরত একজন কৃষিবিদ জানান, আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় ধান ঘরে তোলা সাময়িক সমস্যা হলেও উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। মাঠে ধান থাকায় চূড়ান্ত উৎপাদন রিপোর্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা হলেও তা আপাতত বলতে পারছি না ।

চাঁদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে , চাঁদপুরে চলতি অর্থবছরে বোরো মৌসুমের চাল ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করা লক্ষ্যে সরকারের এ পদক্ষেপ বলে জানা গেছে । চাঁদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অনুমোদিত ১৫ জন মিল মালিকগণ এ কার্যক্রম শুরু ও চাল সংগ্রহ করার কথা রয়েছে।

চাঁদপুরে এবার সরকারিভাবে কেজি প্রতি বোরো ৩৮ টাকা করে সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে। চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১ হাজার ১শ’ ৯২ মে.টন। তথ্য মতে, জেলায় ২ মে চাল শুরু করার সিদ্ধান্ত রয়েছে যা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চাল ক্রয় করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের আপতকালীন মজুতকরার জন্যেও নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই চাল ক্রয়ের সরকারি নির্দেশে চলে আসছে বলে একজন কর্মকর্তা জানান।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে, চলতি বছরের ২ মে ২০১৮ থেকে সারা দেশসহ চাঁদপুরের সকল উপজেলায় কৃষকদের কাছ থেকে মিলারগণ বোরো ধান ক্রয় করবে সংশ্লিষ্ঠ চাঁদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অনুমোদিত ডিলারগণের কাছ থেকে চাল ক্রয় করবে। তবে বর্তমান মাঠে মাড়াইকৃত ধানের বাজার মূল্য ২০-২২ টাকা ।

প্রসঙ্গত , চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ইরি-বোরো চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দু’লাখ ৪৫ হাজার মে. টন নির্ধারণ করা হয়েছে বলে চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছেন ।

হাইব্রিড, স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়ে থাকে । চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়।

চাঁদপুররে ৮ উপজলোয় ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ২০১৭-২০১৮ র্অথবছরে ১শ’৭১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে সোনালী,অগ্রণী,জনতা ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১শ’৭১ কোটি টাকা ।

চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়,চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬১ হাজার ২শ’৬৬ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪শ’ ৫৩ মে.টন চাল। যা গেলো বছরের চেয়ে ১ হাজার ৩শ ’৩০ হেক্টর জমি কম চাষাবাদ হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুর সদরে ৫ হাজার ৫ শ’ ১৪ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২১ হাজার ৪শ’ ৩০ মে.টন। মতলব উত্তরে ৯ হাজার ১শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৫ হাজার ৮শ’ ২৯ মে.টন।

মতলব দক্ষিণে ৪ হাজার ৭শ’ ২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৮ হাজার ৫শ’ ৪৭ মে.টন। হাজীগঞ্জে ৯ হাজার ৭শ’ ২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৯ হাজার ৫ শ’ ৪৪ মে.টন ।

শাহারাস্তিতে ৯ হাজার ৪শ’ ১৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪০ হাজার ৪৬ মে.টন।কচুয়ায় ১২ হাজার ১শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৭ হাজার ৮শ’৯৪ মে.টন।

ফরিদগঞ্জে ৯ হাজার ৯শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৯ হাজার ৭ শ’ ৭৯ মে.টন এবং হাইমচরে ৬ শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ হাজার ৩শ’ ৮৪ মে.টন চাল।

কৃষকরা বর্তমানে লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাক্টর, হোচার পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত স্যালো বা ডিপ নলকূপ দিয়ে পানি সেচ,গোবরের সারের পরিবর্তে বিভিন্ন প্রকার উন্নত রাসায়নিক সার ব্যবহার,বোনার পরিবর্তে সারিবদ্ধ ভাবে ধান রোপণ,উন্নত বীজ,পরিমিত কীটনাশকের ব্যবহার,নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি কারণে ইরি-বোরোর বাম্পর ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষিবিদরা জানান।

এ ছাড়াও চাঁদপুর জেলা একটি নদীবিধৌত কৃষি ভিক্তিক অঞ্চল বিধায় সময়মত চাষাবাদ,বীজ রোপণ বা বীজবপন করে সঠিক পরিচর্যায় কৃষকরা পারদর্শী। এদিকে সরকার প্রতিবছরই চাঁদপুরের চাষীদের সার,উন্নতমানের বীজ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা ও ২০% বিদ্যুৎ ভর্তূকি দিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবেদক : আবদুল গনি
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ১১:৪০ এএম,১৮ মে ২০১৮,শুক্রবার
এজি

Leave a Reply