সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড বিটিসিএল’র এখন দুর্দিন। দিন দিন এর কমছে গ্রাহক। জেলাজুড়ে মাত্র ২ হাজার ৩ শ’ ১৯ গ্রাহক। এদের অধিকাংশই সরকারি অফিস।
এক সময় যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিংবা বাসা বাড়িতে একটি টেলিফোনের সংযোগ নিতে অনেক কাঠখড়ি পোড়ানোর পর পাওয়া যেতো এমন কথা প্রবাদ বাক্যের মত শোনা যেতো। বর্তমানে আবেদন করলেই সংযোগ পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন চাঁদপুরের বিটিসিএল কর্মকর্তারা।
১৯৮৪ সালে চাঁদপুর জেলার প্রতিটি উপজেলা সদরে একটি করে টেলিফোন একচেঞ্জ স্থাপিত হওয়ার পর এর গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে । তখন দেশের সকল টেলিফোন ব্যবস্থা ছিল এনালক পদ্ধতির।
১৯৯০ সালের পর বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড বিটিসিএলের পদ্ধতি পরিবর্তন করে আনে ডিজিটাল পদ্ধতি। এতে চাঁদপুরের কোনো কোনো একচেঞ্জে অপটিকেল ফাইভার সংযোগ করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল- বিটিসিএল এর গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি ও আধুনিক সেবায় গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানো। তখন চাঁদপুরের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬ হাজারেরও অধিক।
চাহিদার চাপে কচুয়ার রহিমানগর, সাচার ও চাঁদপুরের পুরাণবাজার একচেঞ্জ স্টেশনগুলো বাড়ানো হয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বর্তমানে চাঁদপুর জেলার একচেঞ্জগুলোর গ্রাহক সংখ্যা দিন দিনই কমছে।
বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত বিশ্বায়নের তাগিদে মোবাইলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ডিজিটাল হলেও টেলিফোনের ব্যবহার কমতে শুরু করে । এরপর কম্পিউটার ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইমো, স্কাইপি ও ই-মেইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলায় টেলিফোন ব্যবহারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
মানুষের মধ্যেও যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারের মনমানসিকতার দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। অন্যদিকে টেলিফেন ব্যবহারের চেয়ে মোবাইলের ব্যবহার সহজলভ্য বিধায় মানুষকে আরো আকৃষ্ট করেছে। যার ফলেই বিটিসিএল’র দুর্দিন দেখা দিয়েছে ও গ্রাহক কমছে ।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড বিটিসিএল চাঁদপুরের দেয়া এক তথ্যে জানা গেছে, জেলা শহর ও উপজেলা একচেঞ্জগুলোর বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ২ হাজার ৩শ’ ১৯ জন। এর মধ্যে চাঁদপুরের ১ হাজার ৭শ’২৫ জন, হাজীগঞ্জে ১শ’৮৯ জন, শাহারাস্তিতে ৫৪ জন, কচুয়ায় ১শ’২ জন,মতলব উত্তরে ৪১ জন,মতলব দক্ষিণে ৮৭ জন,ফরিদগঞ্জে ৭৩ জন এবং হাইমচরে ৩৬ জন টেলিফোন গ্রাহক রয়েছে
এদিকে পুরাণবাজার ,কচুয়ার সাচার ও রহিমানগর টেলিফোন একচেঞ্জগুলো গ্রাহক সঞ্চালন না থাকায় কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ঠ একজন কর্মকর্তা জানান।
বাংলাদেশ টিলিকমিউনিকেশন লিমিটেড বিটিসিএল চাঁদপুরের সহকারী প্রকৌশলী এটিএম মাকসুদুল মাওলা চাঁদপুর টাইমসকে জানান,‘উন্নত প্রযুক্তির ফলে মানুষের মধ্যে টেলিফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে। তাই টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ বেশ ক’টি পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করলে গ্রাহক সংখ্যা বাড়বে।’
তিনি আরো বলেন, ‘একজন ব্যক্তি ব্যবসায়ী হলে ট্রেডলাইসেন্সের কপি, আইডির কপি, ৪ কপি ছবি ওহ ৬শ’ ৪৫ টাকার ডিমান্ড নোটসহ আবেদন করলেই একজন গ্রাহক টেলিফোন পেতে পারেন। কল রেটও তুলনামূলক কম।’
সারাদেশ ব্যাপি টিএন্ডটি টু টিএন্ডটি প্রতি কল ১০ পয়সা ও পিক আওয়ারে ৩০ পয়সা এবং অন্যান্য অপারেটরে ৮০ পয়সা প্রতি মিনিটে চার্জ প্রযোজ্য বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
তবে টিএন্ডটির লাইনে ইন্টারনেট ও ল্যান্ডফোন ব্যবহারকারী গ্রাহকদের নেটওয়ার্ক নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। বেশিরভাগসময় লাইন থাকে না। এতে প্রয়োজন মুহূর্তে অনেক সময় কথা বলা কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলেও গ্রাহকদের অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদক- আবদুল গনি : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০:০০ পিএম, ৭ আগস্ট ২০১৬, রোববার
ডিএইচ