চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের যোগসাজশে উপজেলা শিক্ষা অফিসগুলো প্রজ্ঞাপনের বাইরে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নের নামে নিরব চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে শিক্ষকবৃন্দ। এ নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি কোনো ছুটি ছাড়া সপ্তাহে ৬ দিন কোমলমতি শিশুদের পাঠদানে ব্যস্ত থাকার কথা। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও রয়েছে যে, কোনো শিক্ষা অফিসার স্কুল চলাকালিন সময়ে কোনো প্রধান শিক্ষককে উপজেলা কার্যালয়ে ডেকে আনতে পারবেন না।
কিন্তু চাঁদপুরে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ নিজেদের খামখেয়ালিপনায় অর্থ আত্মসাতের চিন্তায় মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন ছাড়া প্রতি মতবিনিময় সভার নামে শিক্ষকদেরকে কাছ থেকে চাঁদা গ্রহণ করার অভিযোগ উঠেছে। এসব চাঁদা উত্তোলনে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্লাস্টার প্রধান এটিওদেরকে।
মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সারাদেশে জিওবি খাত থেকে অগ্রিম ১১ কোটি ৯১ লাখ ১৪ হাজার চারশত আশি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
একই প্রজ্ঞাপনে এ অর্থ থেকে প্রতিটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে জনপ্রতি শিক্ষকের নাস্তা বাবদ ২৪০, সম্মানি ৪০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া আছে।
কিন্তু এসব বরাদ্দ থেকে ব্যয় না করে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করায় তাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাঁদপুর সদরের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, ‘কথিত মতবিনিময় সভায় প্রথম ফরিদগঞ্জে কয়েকজন ক্লাস্টার প্রধান কর্মকর্তাদের খুশি করার অজুহাতে এ রীতি চালু করেন। পর্যায়ক্রমে এ রীতি জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ছে।
এ ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৫ মে) চাঁদপুর সদরের বাগাদী ও বালিয়া ইউনিয়নের ২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নিয়ে গঠিত ফরকাবাদ ক্লাস্টারের আয়োজনে এলিট চাইনিজে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
ক্লাস্টার প্রধান রাবেয়া বেগমের নেতৃত্বে এ সভায় ১৫৩ জন শিক্ষক অংশ নেন। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩শ’ টাকা করে মোট ৪৫ হাজার ৯শ’ টাকা গ্রহণ করা হয়।
এ বিষয়ে রাবেয়া বেগম মুঠোফোনে জানান, ‘মতবিনিময় সভা আমরা শিক্ষা অফিসের উদ্যোগেই করছি, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রজ্ঞাপন নেই।
এছাড়া সোমবার (১৪ মে) আক্কাছ আলী ক্লাস্টারের অধিনে চাঁদপুর পৌর এলাকার ৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’শতাধিক শিক্ষক এতে অনিচ্ছা সত্তে¡ও অংশ নেয়। অনেকটা ক্ষমতার অপব্যাবহার করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বরাতে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (এটিও) মানসুর আহমেদ সকাল ৭ টা থেকে সাড়ে ১১ টার মধ্যে ক্লাস নেয়ার নির্দেশ দেন।
জনপ্রতি শিক্ষক থেকে ২৫০ টাকা করে ২১৪ জন শিক্ষকের কাছ মোট ৫৩ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন এ ক্লাস্টারের প্রধান উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. মানসুর আহমেদ। এরমধ্যে দু’জন শিক্ষক চাঁদা দেননি, তবে তাদেরকেও পরে দিতে হবে বলে তথ্যসূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রজ্ঞাপন আছে কিনা জানতে চাইলে এটিও মানসুর আহমেদ জানান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে একদিনের জন্যে স্কুলের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে।
অর্থ উত্তোলনের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এর আগে গত ১০ মে চাঁদপুর সদরের শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন ও রামপুর ইউনিয়নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নিয়ে গঠিত ক্লাস্টার প্রধান দেলোয়ার হোসেন একটি কথিত মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। সেখানে একইভাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা দিয়ে এ সভা বাস্তবায়ন করা হয়।
এই ক্লাস্টার প্রধানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
প্রতিটি ক্লাস্টারের একটি করে মতবিনিময় সভা। উত্তোলনকৃত চাঁদার টাকায় প্রতিটি প্রোগ্রামে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারদেরকে (এটিও) উপহার প্রদান করা হচ্ছে।
এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের অভিযোগ, কতো উপঠৌকন পেলে শান্ত হবেন চাঁদপুর প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. খোরশেদ আলম টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করে জানান, ‘এ কর্মসূচিতে সরকারি কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই, তাই শিক্ষকদের কাছ থেকে খাবারের খরচ হিসেবে টাকা নেয়া হয়েছে।’
এ ধরনের মতবিনিময় সভা আয়োজনে ও সকাল ৭ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত স্কুল কার্যক্রম চালু রাখাতে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন কিংবা নির্দেশনা ছিলো কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করণে যা যা করণিয় তাই করা হচ্ছে। মতবিনিময় সভায় শিক্ষকদের আসার সুবিধার্থে ওইদিন সকাল ৭টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত স্কুল খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছি।’
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur