চক্রের নেপথ্য হোতা ধরাছোঁয়ার বাইরে
বুধবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চাঁদপুর সদর উপজেলা কমান্ড কার্যালয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য যাচাই বাছাইকালে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালকারী মোঃ আব্দুল কাদের বেপারী নামে এক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে শনাক্ত করে চাঁদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কালাম মোঃ শামছুল আলম চিশতী চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
চাঁদপুর মডেল থানায় আটক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের বেপারী ২০০১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষর কম্পিউটারের স্ক্যানিংয়ের সাহায্যে বিশেষ কৌশলে জাল করে মুক্তিযোদ্ধার সনদ তৈরি করে।
ওই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদের ক্রমিক নম্বর হচ্ছে ঃ ৫৩২০৭। বস্তুতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক সর্বশেষ সনদের ক্রমিক নম্বর হচ্ছে ৪৮ হাজারের সামান্য কিছু ওপরে।
জাল সনদে আরও প্রতীয়মান হয় যে, প্রধানমন্ত্রীর প্রকৃত স্বাক্ষরের চেয়ে ওই স্বাক্ষর একটু মোটা প্রকৃতির এবং একই অবস্থা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত স্বাক্ষরটির ক্ষেত্রেও।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষরিত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সনদে স্পষ্ট ও উজ্জ্বলভাবে নাম-ঠিকানা লেখা রয়েছে। কিন্তু ওই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদে নাম ঠিকানা সেভাবে লেখা নেই। ওই সনদে ব্যবহৃত কাগজের গুণগত মানের ক্ষেত্রেও আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।
এদিকে অভিজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, এরূপ অভিনব পদ্ধতির জাল জালিয়াতির সাথে একটি শক্তিশালী চক্র দীর্ঘদিন যাবত সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকে তথা সম্পূর্ণ ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে সারাদেশে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ সরবরাহ করেছে। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাও কিন্তু আজ কম নয়। ওই জাল-জালিয়াত চক্রকে অবিলম্বে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি দেয়া একান্তু প্রয়োজন। না হলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়ে অমুক্তিযোদ্ধারাই সেই স্থানের সুফল ভোগ করার ক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ নেবে বলে অভিজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালকারী ওই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল কাদের বেপারীর পিতা মৃত জালাল উদ্দিন বেপারী, গ্রামঃ টাহরখিল, পোঃ মহামায়া বাজার, উপজেলাঃ চাঁদপুর সদর, জেলাঃ চাঁদপুর।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কালাম চিশতী চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগটির যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মামুনুর রশিদ বিষয়টি আইনি আমলে নিয়ে অভিযোগের তদন্তভার দেন এসআই মোঃ আবদুস সালামকে। তিনি বুধবার এ ব্যাপারে অভিযোগকারী চাঁদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কালাম মোঃ শামছুল আলম চিশতীর সাথে কথাবার্তা বলেন।
পরে তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চাঁদপুর জেলা কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদের সাথেও কথা বলেন।
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর মডেল থানার এসআই মোঃ আবদুস সালাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, এ স্পর্শকাতর অভিযোগের বিষয়ে ব্যাপক তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেলেই নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের বিষয়টি রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে এবং বিষয়টির ব্যাপারে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ইতোপূর্বেও চাঁদপুরে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালকারী ৫জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রায় ১৫ মাস করে জেলহাজত খাটার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এ ব্যাপারে অর্থাৎ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে আমি ব্যক্তিগতভাবে জিরো টলারেন্সের মনোভাব পোষণ করি। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালকারী আটক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুল কাদের বেপারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অভিযোগকারী আবুল কালাম মোঃ শামছুল আলম চিশতী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে উপজেলায় ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার স্বপক্ষে প্রমাণসমূহ যাচাই বাছাই কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে উপজেলার সকল ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার স্বপক্ষে সকল মূল সনদপত্র ও তথ্যাদি সংগ্রহ করি। ওই সনদপত্র বুধবার (০৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে দশটার দিকে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চাঁদপুর সদর উপজেলা কমান্ড কার্যালয়ে তথ্যাদি যাচাই বাছাইকালে মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুল কাদের বেপারীর সনদখানা (ক্রমিক নং ৫৩২০৭) জাল ও নকল বলে আমার সন্দেহ হয়। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদে যোগাযোগ করলে জানা যায়, ওই নামের কোনো মুক্তিযোদ্ধা অত্র সংসদে নিবন্ধিত নেই বলে জানা যায়। তাই আমি উক্ত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করি।
চাঁদপুর মডেল থানায় আটক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের বেপারী এ প্রতিবেদককে জানান, আমি ২০০১ সালে তৎকালীন চাঁদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুনুর রশিদ চৌধুরীর (বর্তমানে মৃত) কাছ থেকে এ সনদপত্র সংগ্রহ করি। বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত চাঁদপুর মডেল থানায় আটক ওই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আঃ কাদের বেপারীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।
আনোয়ারুল হক
|| আপডেট: ১০:১৩ পিএম, ০৪ নভেম্বর ২০১৫, বুধবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur