Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৬৬১ মে.টন : চাল ৭ হাজার ৮২৫ মে.টন
ধান
হাজীগঞ্জে ধান কাটার পর খেতের পাশে ধান প্রক্রিয়ার কাজ করছেন কৃষকরা

চাঁদপুরে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৬৬১ মে.টন : চাল ৭ হাজার ৮২৫ মে.টন

চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২০২২-’২৩ চলতি মৌসুমে বোরে মৌসুমে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬৬১ মে.টন এবং চাল ৭ ,৮২৫ মে.টন টন। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সরকারের নির্দেশিত মূল্যে উপজেলা কমিটি চলতি মৌসুমে এ ধান ক্রয় করবে। ৭ মে থেকে সারাদেশের মতই হাজীগঞ্জেও ধান কেনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে । যা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। জেলার অন্যান্য উপজেলাও ধান ক্রয়ের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। তালিকাভূক্ত কৃষকদের কাছ থেকেই ক্রয় করার নির্দেশ রয়েছে ।
জেলা খাদ্য নিয়ণন্ত্রকের অফিস সূত্রে- ২৮ মে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে জেলা খাদ্য নিয়ণন্ত্রকের অফিস সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে– চাঁদপুর জেলায় এবার ৩ হাজার ৬ শ ৬১ মে.টন ধান এবং ৭ হাজার ৮শ ২৫ মে.টন সিদ্ধচাল ক্রয় করবে। এ সব ধান-চাল ক্রয়ে সরকারিভাবে ১৫ টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা দিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্রও জারি করা হয়েছে ।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, চলতি বোরো মৌসুমে সরকার জেলার ১৭ জন মিলারদের কাছ থেকে থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে চাল এবং এপ্যসসের মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে ধান ক্রয় করবে। যা ৩১ আগস্ট ২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্রয় করার সর্বশেষ তারিখ। সরকারি নির্দেশিত নিয়মে জেলা-উপজেলা কমিটি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান এবং নিবন্ধিত মিলারের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকে। তবে চাঁদপুর সদর ,ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ,শাহরাস্তি ও কচুয়া এ ৫ উপজেলায় ্এ্যাপসের মাধ্যমে এবং হাজীগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ ও হাইমচর এ ৩ উপজেলায় সরাসারি উপজেলা কমিটির মাধ্যমে এ ধান ক্রয় করা হবে। ৮ উপজেলায় আটটি উপজেলা কমিটি এবং চাঁদপুর জেলায় একটি জেলা কমিটি রয়েছে। উপজেলা কমিটি সরকারি নির্দেশনা মতে প্রতি বছরই আমন ধান ও চাল সংগ্রহ করে থাকে । সারাদেশে খাদ্য মন্ত্রণালয় ১ লাখ ৫ হাজার মে.টন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতি উপজেলায় একটি করে খাদ্য গুদাম নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এদিকে হাজীগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি বোরো মৌসুমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে ।
এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা বলেন , “ মূলত: হাজীগঞ্জ কৃষিবিভাগ কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলায় প্রদান করে ্। কাজটি করেন হাজীগঞ্জ খাদ্য বিভাগ।”

প্রসঙ্গত, চাঁদপুর দেশের অন্যত্তম কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। চাঁদপুরের জরবায়ু কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। ফলে ব্যাপক বোরোর আবাদ লক্ষ্য করা গেছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় সবুজ মাঠে নয়নাভিরাম দৃশ্যকৃষকদের মনক উদ্দেলিত করছে। চাঁদপুরে উপজেলাভিত্তিক বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে । চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা নামে দু’টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। চাঁদপুর জেলার চারটি উপজেলা যথা-চাঁদপুর সদর, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও দক্ষিণে ২৩ হাজার ৩শ’ ৯০ হেক্টর জমি রয়েছে এ দু’টোতে। জেলার খাদ্যের প্রয়োজন ৪ লাখ ২২ হাজার ৯শ ৫৫ মে.টন। চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। এবার ইরি-বোরো চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৯০ হাজার ৩শ ৬৭ মে.টন চাল নির্ধারণ করা হয়েছে ।

চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ তথ্য মতে, হাইব্রিড, স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়ে থাকে। চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প,মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়। চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬২ হাজার ৮ শ ৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার ৩ শ৬৭ মে.টন চাল। এবার এককভাবে উন্নত ফলনশীল ৫১ হাজার ৭ শ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪১০ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮ শ ৯৯ মে.টন চাল । হাইব্রিড ১১ হাজার ১৫০ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪৯৫ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৪শ’৬৮ মে.টন। এদিকে চাঁদপুর সদর ও শাহরাস্তির দুটো উপজেলার দু ইউনিয়েন সরকারি প্রণোদনায় সমলয়ে উন্নত ফলনশীল জাতের ধানের চাষাবাদ করে। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান এ ধান কাটার উদ্বোধন করেন।

জেলার সব উপজেলার বোরো এখনো ঘরে উঠেনি। তাই চূড়ান্ত উৎপাদন জানানো সম্ভব হয নি বলে কৃষিবিভাগ জানান। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মতে, উপজেলা ভিত্তিতে চাঁদপুর সদরে আবাদ ৫ হাজার ৫শ ২৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৫শ ২৫ মে.টন্। মতলব উত্তরে আবাদ ৯ হাজার ৯ শ ৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার ২৬ মে.টন্। মতলব দক্ষিণে আবাদ ৪ হাজার ৭শ ১৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২১ হাজার ৭শ ৮৪ মে.টন। হাজীগঞ্জে আবাদ ৯ হাজার ৫শ ১০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ হাজার ৯ শ ৫৪ মে.টন্। শাহারাস্তিতে আবাদ ৯ হাজার ৭ শ ৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৯০ মে.টন ।

কচুয়ায় আবাদ ১২ হাজার ৬শ ৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৮ হাজার ৫শ ৪৪ মে.টন্। ফরিদগঞ্জে আবাদ ১০ হাজার ৩০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার ৩শ ৪৮ মে.টন্ । হাইমচরে আবাদ ৬ শ ৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯৬ মে.টন্। চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় চলতি ২০২২-২৩ বছরের রবি মৌসুমে ৬শ’ মে.টন বোরো ও ৬শ ৩৩ কেজি নানা জাতের শাক-সবজির বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা সংখ্যায় ১০ কেজি পরিমাপের বস্তায় ৫ হাজার ৭শ ৮৫ টি। এর মধ্যে সাড়ে ২০ মে.টন রয়েছে ২ কেজি পরিমাপের ঘানিতে। বীজগুলো সরকারি নির্দেশিত মোড়কে পাওয়া যাবে। জেলার সব উপজেলার ১৩৬ জন ডিলারের মাধ্যমে এসব বীজ স্ব স্ব হাট-বাজারে ইতোমধ্যেই পৌঁছানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড.মো.আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন,‘এ বছর বোরোতে রেকর্ড পরিমাণ ২ কোটি ২০ লাখ টনের মতো চাল উৎপাদন হতে পারে। আর ইতোমধ্যে হাওরে এখন পর্যন্ত ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে।’ সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বোরো ধান উৎপাদন বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এসব তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন,‘ চলমান ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯ লাখ ৭৬ হেক্টর জমি। আর আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ১৫ লাখ মে. টন চাল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১০ লাখ টন বেশি চাল উৎপাদন হতে পারে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। বিগত ১৪ বছরে কৃষিতে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে।

আবদুল গনি
৩০ মে ২০২৩