Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে ত্রিশ লাখ শহিদ স্মরণে এবারের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি
forest
প্রতীকী ছবি

চাঁদপুরে ত্রিশ লাখ শহিদ স্মরণে এবারের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি

জাতীয়ভাবে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও ত্রিশ লাখ শহিদ স্মরণে এবারের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত হবে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদের আত্মত্যাগে ও দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমশীলতাহানীর বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এসে এবারই শহিদ স্মরণে সারাদেশে বৃক্ষরোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

সোমবার ৩০ এপ্রিল চাঁদপুর মতলব উত্তরের বন বিভাগীয় সহকারী মো.কামরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

চাঁদপুরে বন সংরক্ষকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরের উপজেলায় প্রায় ৪০ প্রজাতির বৃক্ষ বিতরণে ৬৩ হাজার চারা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে চাঁদপুর বন বিভাগ।

প্রত্যেক উপজেলায় ৩ হাজার বৃক্ষের চারা এ লক্ষ্যে বিতরণ করা হবে। তবে কিভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় ঔসব চারা বিতরণ হবে এর কোনো নির্দেশনা এখনো আসে নি বলে চাঁদপুর বন বিভাগ জানিয়েছে।

মতলব উত্তরের বন বিভাগীয় সহকারী মো.কামরুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তেতুল,নিম,
বকুল ফুল,পলাশ ফুল,বয়রা,বিলেতি গাব,আমলকি ইত্যাদি যে সব বৃক্ষ বিলুপ্তি প্রায় ঔসব বৃক্ষের চারা রোপণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সে লক্ষ্যে চারা প্রস্তÍতও করা হচ্ছে। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর মাত্রারিক্ত বজ্রপাতের কারণে তাল গাছ রোপণের নির্দেশ দেন।

পরিবেশবিদদের মতে,তেতুল,নিম,বকুল ফুল,পলাশ ফুল,বয়রা,বিলেতি গাব,আমলকি, তাল ,খেজুর, নারকেল ইত্যাদি বৃক্ষগুলো তুলনামূলকভাবে অক্সিজেন নির্গত ও কার্বন-ডাই-অকসাইড গ্রহণ করে বেশি।

ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যার ফলেই প্রধানমন্ত্রী ঔসব বৃক্ষের চারা শহিদদের স্মরণে রোপণ করা পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলায় পূর্ব ও পশ্চিমে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়কের উন্নয়নে যে সব গাছ কর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেব স্থানে সংশ্লিষ্ঠ পূর্বের সুবিধাভোগিদের মাধ্যমেই ১৮ কি.মি.সড়কের দু’পাশে বৃক্ষরোপনে বাগান সৃজন করা হবে। এ ক্ষেত্রে বনবিভাগ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন বলে ওই বন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এক প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, ‘ চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলায় প্রায় ৩ শতাধিক স’মিল রয়েছে। এ গুলোর মধ্যে প্রায় দেড়শ’র মত অবৈধ বা লাইসেন্সরিহীন কিংবা নিয়মিত নবায়ন ফি পরিশোধ করছে না ওইসব স’মিল মালিকদের বিরুদ্ধে পরিবেশ,বন ও শ্রমবিভাগ প্রশাসনের সার্বিক নির্দেশনায় ব্যবস্থাগ্রহণ করবে। কেননা স’মিল গুলো একদিকে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে অপর দিকে শব্দ ও পরিবেশ দূষণ করে চলছে।’

তিনি আরো বলেন,‘রেইনট্রি ,মেহগনি,আকাশমনি প্রভৃতি গাছগুলো মেচ্যুরিটি বা পরিপক্ক হতে কমহলেও ২০ বছরের প্রয়োজন। তাই বন বিভাগের বিধি মতে রোপণের ২০ বছরে আগে এসব গাছ কাটা যাবে না। অথচ স’মিল গুলো এ সব তোয়াক্কাই করছে না।’

প্রসঙ্গত, কৃষি ও পরিবেশবিদদের মতে,‘একটি দেশের পরিবেশেস ভারসাম্য রক্ষায় ও সঠিক উন্নয়নে সে দেশের ২৫% বন ভূমি থাকা আবশ্যক। আমাদের দেশে বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাÑকর্মচারী, সকল প্রকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা,প্রাথমিক স্কুলের মাঠ বা আঙিনা এবং প্রবাসীদের নতুন নতুন বাড়িগুলোতে বিভিন্ন প্রকার ফল বৃক্ষের সমারোহ দেখা যায়। অথচ আশি’র দশক থেকেই আমাদের দেশে ব্যাপক গণসচেতনা বৃদ্ধি পাওয়া সত্বেও ১৭% এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বনজ সম্পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

জাতীয় আয়ের ৫% আসে বনজ সম্পদ থেকে। মানুষের দৈনন্দিন জিনিস গুলোর মধ্যে ফলমূল,খাদ্য,জ্বালানি বাঁশ,বেত,হোগলা,মুরতা,ঘাস,মধু, মোম,পশুপাখি,চামড়া,ভেজষ ইত্যাদি।

এ ছাড়াও ঘরবাড়ি,আসবাবপত্র তৈরির প্রধান উৎসই বনজ সম্পদ। ফলে বনজ সম্পদের ব্যাপক অর্থনৈতিক অবদান রয়েছে। বেঁচে থাকার জন্যে যে মূল্যবান অক্সিজেন প্রয়োজন তা বৃক্ষ থেকেই আসে।

ইন্ডিয়ান ফরেস্ট রিচার্স ইন্সিটিটিউটের গবেষণার এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ৫০ বছর টিকে থাকা একটি গাছ মানব সমাজকে বিশাল আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে। বায়ূদূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে ১০ লাখ টাকার, জীবনরক্ষাকারী মানুষকে অক্সিজেন দেয় ৫ লাখ টাকার, বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে ক্রষি কাজে ৫ লাখ টাকার উপকার করে।

এ ছাড়াও মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বরাশক্তি বাড়ায় ৫ লাখ টাকার, গাছে বসবাসকারী পশু-পাখিকে খাদ্য দান করে বাঁচিয়ে রাখে ৫ লাখ টাকার, আসবাবপত্র,জ্বালানিসহ ফল দেয় ৫ লাখ টাকার এবং বিভিন্ন জীব-জন্তুর খাদ্য যোগান দেয় ৪০ হাজার টাকার। বাঁচার জন্যে যে অক্সিজেন প্রয়োজন তা গাছই আমাদের দিয়ে থাকে। তাই অক্সিজেন উৎপাদনে বৃক্ষরোপণে প্রয়োজন বর্ণানাতীত।

প্রতিবেদক : আবদুল গনি
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩: ৪৫ পিএম, ২ মে ২০১৮, বুধবার
এজি

Leave a Reply