বহুবছর ধরে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় বর্ষা মৌসুমের পরে জমিতে কুমড়া আবাদ করে আসছেন কৃষকেরা। কুমড়া চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এই আবাদ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু চলতি বছর পোকার আক্রমণ হওয়ায় অনেক কুমড়া জমিতেই পচে যাচ্ছে। এতে ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকেরা।
সরেজমিনে জেলার হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বলাখাল দক্ষিণ গ্রামের মাঠগুলোতে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তাদের বার বার বলা সত্ত্বেও তাদের কোনো সহযোগিতা না পেয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার সদর ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় অধিকাংশ ইউনিয়নে কুমড়া আবাদ হয়। এ বছর এই দুই উপজেলাসহ জেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে কুমড়ার আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে উৎপাদন হয়েছে ২৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। আর হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন হয়েছে ২৫ মেট্রিক টন।
বলাখাল এলাকার কৃষক মানিক মিয়া বলেন, আবহাওয়া ভাল থাকায় এ বছর উৎপাদন আরো বৃদ্ধি হওয়ার কথা থাকলেও পোকার আক্রমণে জমিতেই অধিকাংশ কুমড়ার পচন ধরেছে। এর ফলে আমরা কুমড়াগুলো বিক্রি করতে পারেননি। অন্য বছর জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব কুমড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে রপ্তানি করা হয়েছে।কিন্তু এ বছর অন্য জেলায় রপ্তানি করতে না পেরে স্থানীয় বাজারগুলোতেই কুমড়া বিক্রি করতে হচ্ছে।ক্ষেতে পচে যাওয়া কুমড়া।
হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা এলাকার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের বার বার বলা সত্ত্বেও তারা আমাদের আবাদের এ অবস্থা দেখতে আসেননি। তারা যদি সময়মত আমাদের এসে পরামর্শ দিতেন তাহলে ক্ষতির সম্মুখীন হতাম না।
একই এলাকার আরেক কৃষক সোলাইমান মিজি জানান, তিনি এ বিষয়ে ইউনিয়ন কৃষি অফিসে গেলে তাকে বলে মাঠ থেকে পচা কুমড়া আর গাছ নিয়ে আসতে। এটা কিভাবে সম্ভব। সরেজমিন না গেলে আমাদের বাস্তব অবস্থা বোঝা সম্ভব নয়। সঠিক সময়ে কীটনাশক ব্যবহার ও পরামর্শ না পাওয়ায় আমাদের লোকসানে পড়তে হয়েছে। কারণ অনেকেই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে কৃষি আবাদ করেছেন।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার নোয়াখেরুল ইসলাম বলেন, কুমড়ায় পোকার আক্রমণ কিছু কিছু এলাকার কৃষকদের অভিযোগ পেয়েছি। কৃষি কর্মকর্তারা সব সময়ই কৃষকদের পরামর্শ দেন। যদি কোন কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব অবহেলা করে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তাৎক্ষণিক সহযোগিতা করে আসছি এবং তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
চাঁদপুরের জনপ্রিয় এ কুমড়া আবাদের ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধান বাড়ালে এবং সঠিক সময়ে কৃষকদের পরামর্শ দিলে লোকসানে পড়বে না কৃষক। স্থানীয় বাজারগুলোর চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করতে পারবে দেশের অন্যান্য জেলায় এমন অভিমত অধিকাংশ কৃষকের।
বার্তা কক্ষ
২৮ জানুয়ারি,২০১৯