Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে চলতি বছর সয়াবিনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
Soyabin haimchor
সয়াবিনের পরিচর্যারত একজন কৃষক

চাঁদপুরে চলতি বছর সয়াবিনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

সয়াবিন বর্তমানে একটি অন্যতম ফসল হিসেবে খ্যাত। চলতি বছরও এ জেলার ৩ টি উপজেলায় এ সয়াবিনের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইমচরে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন চাষাবাদ হয়ে থাকে। চাঁদপুরে ধান, পাট, আলু, পেঁয়াজ, রসুন,সরিষা এর পরে সয়াবিনের স্থান হিসেবে বিবেচনায় আনা যায়।

চাঁদপুরের হাইমচরে পূর্ব থেকেই সয়াবিনের আবাদ হয়ে আসছে। চলতি মৌসুমে ২,১১৬ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে ৩,৭৬৬ মে.টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি চাঁদপুরের কৃষিবিদ আবদুল মান্নান বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) এ তথ্য জানান ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,হাইমচরের আলগী ইউনিয়নের গন্ডামারা,চরভৈরবীর বাবুরচর, হাইমচরের মাঝির বাজার এলাকা,নীলকমলের ঈশানবালায় সয়াবিনের আবাদ হয়ে থাকে। কৃষকরা সয়াবিন কাটার আগে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন। জানুয়ারি মাস থেকেই জমিতে বোনা হয় সয়াবিন। বর্তমানে গাছগুলো ফলন দেয়ার সময় হয়ে হয়েছে।

হাইমচরের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করত। পান ও সুপারির জন্য অতি পরিচিত এ উপজেলায় এখন সয়াবিন চাষ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এ বছর হাইমচরেই ১,৫৮০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২,৮১২ মে.টন । এছাড়াও ফরিদগঞ্জে ২৪০ হেক্টর জমি চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪২৮ মে.টন।

হাইমচরের মাটি ও আবহাওয়া সয়াবিন চাষের খুবই উপযোগী । এ সয়াবিন চাষের সাথে জড়িত ৮ হাজার কৃষক। সয়াবিন চাষে সার ও কীটনাশক কম ব্যবহার করতে হয় । ফলে খরচও কম হয়। তবে চাষের পরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে লোকসানে পড়তে হবে কৃষকদের।

এ মাসের শেষের দিকেই সয়াবিন গাছসহ তোলা হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হেক্টরে প্রতি কমহলেও ২ মেট্টিক টন করে সয়াবিন উৎপাদন হতে পারে । স্থানীয়ভাবে সয়াবিনের চাহিদা কম থাকলেও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে উৎপাদিত সয়াবিন ক্রয় করে নিয়ে যান।

ঈশানবালার কৃষকগণের মধ্যে একজন জানান ,এ বছর সয়াবিনের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তবে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ বা ঝড় বৃষ্টি না হলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা আশা করছি ।

হাইমচরের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানান, সয়াবিন অর্থকরি ফসল। খরচ কম হওয়ায় সয়াবিন চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ বছর ৫০ জনকে ১ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মানুষের দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সয়াবিন চাষাবাদ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি চাঁদপুর কৃষি বিভাগের কৃষিবিদ আবদুল মান্নান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘ চাঁদপুর জেলার মধ্যে হাইমচরেই সবচেয়ে বেশি সয়াবিন হয়ে থাকে। চরাঞ্চলের কারণে সেখানকার আবহাওয়া ও মাটি সয়াবিন চাষের উপযোগী। সয়াবিন বর্তমানে দেশের একটি অর্থকরি ফসল হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে।’

প্রসঙ্গগত , চাঁদপুর দেশের অন্যতম নদীবিধৌত কৃষি প্রধান অঞ্চল। মেঘনা, পদ্মা, মেঘনা ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া নদী এ জেলা ওপর দিয়ে বয়ে যাওযায় কৃষি উৎপাদনে নদী অববাহিকায় ব্যাপক ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। বিশেষ করে চাঁদপুরের চরাঞ্চলগুলিতে ব্যাপক হারে সয়াবিন উৎপাদন করে থাকে চাষীরা।

আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ, পরিবহনে সুবিধা, কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ, কৃষি বিভাগের উৎপাদনের প্রযুক্তি প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত, কৃষিউপকরণ পেতে সহজলভ্যতা, বীজ ,সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষিবিদদের পরামর্শ, ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ প্রদান ইত্যাদি কারণে চাঁদপুরের চাষিরা ব্যাপক হারে সরিষা চাষ করছে। মাছ ও পশু খাদ্য হিসেবে সয়াবিনের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

অতীব দু:খের বিষয়-নদী তীরবর্তী হওয়ায় চরাঞ্চলের চাষীদের কৃষিঋণ দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো।বাংলাদেশ ব্যাংক তৈল ও ডাল জাতীয় ফসর উৎপাদনের জন্যে ৪% সুদে চলতিবছর ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও মুলত : চরাঞ্চলের চাষীদের এ কৃষিঋণ দিচ্ছে না বরে জানা যায়। চরাঞ্চলগুলো হলো-চাঁদপুর সদরের রাজরাজেস্বর, জাহাজমারা, ফতেজংগপুর, হাইমচরের ঈশানবালা, চরগাজীপুর, মনিপুর, মধ্যচর, মাঝিরবাজার, সাহেববাজার ও বাবুরচর ইত্যাদি।

প্রতিবেদক- আবদুল গনি
এপ্রিল ২৫, ২০১৯