চরমোনাই মাহফিলের নমুনায় চাঁদপুরে তিন দিন ব্যাপি মাহফিলের আখেরী মোনাজাত সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার(১২ ডিসেম্বর) সকালে স্টার আলকায়েদ জুটমিল মাঠে ৩ দিন ব্যাপি মাহফিলের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
আখেরি মোনাজাতে দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা হয়। মোনাজাত পূর্ব সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চরমোনাই পীর বলেন, ইবাদত ও খেলাফতের মধ্যেই মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব নিহিত রয়েছে।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ আজ নানা সংকটে নিপতিত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানদের উপর নির্যাতন নিপীড়নের সংবাদ আসছে প্রতিনিয়ত। মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য চলছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। এই পরিস্থিতিতে মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্ব রক্ষা ও ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হলে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই।
বিশেষ করে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে সকল দুর্নীতি, দুঃশাসন ও কায়েমী স্বার্থবাদের মূলোৎপাটন করে ইসলামকে বিজয়ী করতে হলে মুসলিম নেতৃবৃন্দকে আন্তরিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রনে সরকারের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। দ্রব্যমূল্য গন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকতে হবে।
দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সমাজের গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি শিক্ষা মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,পাঠ্যপুস্তকে বিবর্তন বাদের পরিবর্তন আনতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে বিবর্তনবাদ রেখে আগামী প্রজন্মকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না। নবী রাসুল গণ এসেছেন মানুষকে ঈমানদার, খোদার হুকুম পালনকারী ইবাদাতগুজার বান্দা বানানোর জন্য। তারা মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন।
তিনি আরো বলেন- ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার নাম। Islam is the complete code of life. তিনি রাসূল (সা.)-এর বিধায় হজের ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন। “আজকের দিনে আমি দীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং আমার নেয়ামতকে তোমাদের জন্য সম্পূর্ণ করে দিলাম। আর ইসলামকে একমাত্র দীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি চাঁদপুর জেলার ব্যবস্থাপনায় গত সোমবার দুপুরে চরমোনাই মাহফিলের নমুনায় চাঁদপুরে তিন দিন ব্যাপি মাহফিলের উদ্বোধন করেন চরমোনাইয়ের মরহুম পীর সাহেব রহমাতুল্লাহ আলাইহির সাহেবজাদা মুফতি সৈয়দ ইসহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের। এছাড়াও তিনদিনের মাহফিলে দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরামের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, উজানীর পীর সাহেব মাওলানা ফজলে এলাহী, মাওলানা মাহবুবে এলাহী, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব সাইখুল হাদিস মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, খুলনার পীর সাহেব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ড.আ ফ ম খালিদ হোসাইন, মুফতি ওমর ফারুক সন্দিপী, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা আনোয়ার শাহ, মুফতি আবু ইউসুফ আল মাদানী, ডক্টর মাওলানা মোশারফ আহমদ, বাহাদুরপুরের পীরজাদা মাওলানা হানজালা, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ শায়খুল হাদিস আল্লামা মকবুল হোসাইন সহ দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরামগণ।
চাঁদপুরে বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী মাহফিলে প্রথমদিন থেকে সেষ দিন পর্যন্ত মানুষের উপস্থিতি ছিল অবাক করার মতো। সুবিশাল পেন্ডেল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে তিল ধারণের ঠাই ছিলো না। চাঁদপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ দূর-দুরান্ত থেকে ৯ ডিসেম্বর বাদ জোহর উদ্বোধনের আগ থেকেই মাহফিল মাঠে সমবেত হন। অনেকে আসেন কাফেলা সহকারে। সন্ধার পর থেকে আস্তে আস্তে মাঠ পরিপূর্ণ হতে থাকে বয়ান শোনার জন্য। প্রায় দীর্ঘ তিন মাস আগ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া এই মাহফিল। মাহফিলে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে গ্রহণ করা হয়েছে ব্যাপক উদ্যোগ। তৈরি করা হয়েছে বেশ কিছু টয়লেট ও অজুখানা। এছাড়াও রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক ক্যাম্প, নিরাপত্তা সেল ও মেডিকেল টিম।
সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে তিন দিনব্যাপী মাহফিল সম্পন্ন হওয়ায় শুকরিয়া জ্ঞাপন করে মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব জানান, স্থানীয় লোকজন, পুলিশ প্রশাসন, পৌর মেয়র ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা পেয়েছি। আমরা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই পৌর মেয়র ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কে যাদের সার্বিক সহযোগিতায় মাহফিলের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
স্টাফ করেসপন্ডেট