Thursday, July 30, 2015 01:40:46 AM
মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর:
চাঁদপুর: চাঁদপুর সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশে গত ২ বছর যাবৎ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফসলি জমিতে মৎস্য চাষ। পূর্বে এক ফসলি ধানের জমিগুলো পরিত্যাক্ত অবস্থায় বছরে প্রায় ৮ মাস পড়ে থাকলেও এখন কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে তেলাপিয়া (মনোসেক্স)সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছে। আবার অনেকে ধানচাষ করতে খরচ বেশী হওয়ার কারণে সেচের ব্যবস্থা করে বার মাসও মাছ চাষ করতে দেখাগেছে। সদর উপজেলার বাগাদি, বালিয়া, চান্দ্রা, লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের কৃষকদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানাগেছে।
সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের কৃষক দেলোয়ার হোসেন মাল চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘ধানক্ষেতে ২ মন ধান উৎপাদনে খরচ হয় ৭শ’ টাকা। বিক্রি করা যায় ৯শ’ টাকা। এতে করে এখন অনেক কৃষকই একবারের বেশী ধান চাষ করে না। বোরে চাষের পরে বাকী সময়টুকু মাছ চাষে এগিয়ে আসছে। প্রতি কেজি তেলাপিয়া চাষে ১শ’ টাকা খরচ হলেও বিক্রি করছে ১শ’ ৭০ থেকে ১শ’ ৮০টাকা। উপজেলার বিভিন্ন হেচাড়ী থেকে .৩০-.৩৫ পয়সা দরে মাছের পোনা ক্রয় করছে। আর প্রতি মাছে এ সময়ে খাদ্য লাগছে ১৫টাকা। স্থানীয় ভাবে মাছের খাদ্য সরবরাহও রয়েছে। তাই লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এই মাছ চাষে এগিয়ে আসছে।’
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কৃষক ইমন হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘তাদের ইউনিয়ন চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের আওতাধীন। বর্ষায় অতিরিক্ত পানির চাপ না থাকায়, জমির কোন পাশে মাটি দিয়ে এবং কয়েক পাশে জাল দিয়ে বাঁধ তৈরী করা হয়। ফসলি জমিতে অল্প খরচে মাছ চাষ লাভ জনক হওয়ায় অনেকেই এগিয়ে আসছে। মৎস্য অফিস থেকে এসব কৃষকদের নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মাছ ছাষ করলে বছরে ৭/৮ মাস পড়ে থাকা জমিগুলো মৎস্য উৎপাদনে বেশ সহায়ক হবে।’
বালিয়া গ্রামের কৃষক কালাম গাজী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে এ বছর তেলাপিয়া, রুই, কাতল ও মৃগ মাছের চাষ করেছেন। বর্ষার পানি কমে গেলে তেলাপিয়া গুলো বাজারে বিক্রি করার উপযোগী হবে। বাকী মাছগুলো পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ে সংরক্ষণ করবেন। ধান চাষের চাইতে কয়েকগুন বেশী লাভ হবে বলে তিনি আশাবাদী।’
ওই ইউনিয়নের দূর্গাদী গ্রামের কৃষক সূরজ ভুঁইয়া চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘গত ২ বছর যাবৎ তিনি ছোট একটি জমিতে শুধুমাত্র তেলাপিয়া চাষ করছেন। এবছর মাত্র একবার খাবার দিয়েছেন। অর্থ সংকটে খাবার দিতে পারছেন না। খাবার দিলে খুব দ্রুত মাছগুলো বড় হয়। এলাকার মানুষের দেখাদেখিতে তিনি এই মাছ চাষে আগ্রহী হয়েছেন।’
ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দুপুর উত্তর ইউনিয়নের পূর্ব ধানুয়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম মিজি ও ইমাম হোসেন নিশান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘গত ৭/৮ বছর ধরে তারা কয়েকজন মিলে প্রায় ২০ একর জমিতে তেলাপিয়া, রুই, কাতল, ¤্েিরগল ইত্যাদি মাছের চাষ করে আসছেন। প্রতি বছর প্রায় তাদের এই প্রজক্টে খরচ হয় এক কোটি টাকারও বেশী। লাভ হয় দ্বিগুন। তবে মাছে কোন ধরনের রোগ না দেখা দিলে প্রতি বছর তাদের মাছ বিক্রি হয় ২ কোটি টাকারও বেশী। তবে তাদেরকে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে কোন ধরনের পরামর্শ দেয়া হয় না। পরামর্শ পাওয়াগেলে মাছের রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।’
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম ফসলি জমিতে মৎস্য চাষ সম্পর্কে চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘গত ২ বছর যাবৎ ফরিদগঞ্জ ও সদর উপজেলার স্বল্প সংখ্যক কৃষক এই ধরনের মৎস্য চাষ শুরু করেছে। উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যে জানাগেছে, ২০১৪ সালে ফসলি জমিতে মাছ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২শ’ ৩৩ মেট্টিকটন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা নেয় হয়েছে ৩শ’ মেট্টিক টন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ধানে লাভ কম হয়। মাছ চাষে লাভ বেশী। অনেক জমি পড়ে থাকে। সেইজন্য কৃষকরা ফসলি জমিতে মাছ চাষে এগিয়ে আসছে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে আগামী বছর এসব কৃষকদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করবো। যাতে করে দেশীয় হারিয়ে যাওয়া মাছগুলো বাণিজ্যিক চাষের আওতায় আনা যায়।’
‘জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তাগণ এসব কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফসলি জমিতে মৎস্য চাষে সহায়তা করলে একদিকে যেমন মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অপরদিকে এটি সারাদেশের জন্য মডেলও হতে পারে।’
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ডিএইচ/২০১৫।
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।