Home / ফিচার / চাঁদপুরে শিক্ষক আন্দোলনের পথিকৃত অধ্যক্ষ রুহুল আমিন
চাঁদপুরে শিক্ষক আন্দোলনের পথিকৃত অধ্যক্ষ রুহুল আমিন

চাঁদপুরে শিক্ষক আন্দোলনের পথিকৃত অধ্যক্ষ রুহুল আমিন

চাঁদপুরে বৃহত্তর মতলবের বেসরকারি স্কুল,কলেজ ও মাদ্রসার শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি আদায়ে যে ক’জন শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকনেতা রয়েছেন অধ্যক্ষ মো.রুহুল আমিন খান তাদেরই একজন। তিনি চাঁদপুরের বেসরকারি শিক্ষক আন্দোলনের একজন পথিকৃত।

১৯৭৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো চড়াই-উৎরাই শিক্ষক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে তিনি হন এসব আন্দোলনের একজন লড়াকু সৈনিক ও আপোষহীন শিক্ষক নেতা ।

অধ্যক্ষ মো.রুহুল আমিন খান ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদগঞ্জের ধানুয়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি একজন মেধাবী ও সৃজনশীল ছাত্র ছিলেন। তিনি ধানুয়া সরকারি প্রাথমিক স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ১৯৬৯ সালে চির্কাচাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস,এস,সি,১৯৭১ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।

১৯৭১ সালে তিনি চাঁদপুর কলেজে অধ্যয়ন করার সময় তার এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

১৯৭৪ সালে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞানে বি.কম অনার্স ও ১৯৭৫ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন । সে সুবাধে তিনি একটি হলের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।

তিনি চাঁদপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক মরহুম সামসুদ্দিন আহমেদের প্রিয়,œহভাজন ও অত্যন্ত কাছের একজন সতীর্থ ছিলেন। তাঁর অনুপ্রেরণায়ই সর্বপ্রথম ১৯৭৭ সালের ১৪ নভেম্বর মতলব ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক পদে শিক্ষকতার মত মহান পেশায় যোগদান করেন।

মো.রুহুল আমিন খান ১৯৮৬ সালে এ কলেজেই নিজ মেধা.দক্ষতা,সততা ও কর্তব্যপরায়ণে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক,২০০৪ সালে উপাধ্যক্ষ ও পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ফরিদগঞ্জের বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের পদে অধিষ্ঠিত হন। এ পদে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সহিত কর্মজীবনের শেষদিন পর্যন্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

মতলব ডিগ্রি কলেজে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বৃহত্তর মতলবের সকল বেসরকারি স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠিত করার সুযোগ পান এবং জেলা থেকে কেন্দ্রিয় পর্যায়ে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হন। তিনি এক নাগারে ১৫ বছর মতলব শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পদে নেতৃত্ব দেন।

যার ফলে আজও মতলবের শিক্ষক সংগঠনটি এক ও অভিন্ন ধারায় শিক্ষক সংগঠনের মধ্যে থেকেই সব আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততায় মতলব শিক্ষকদের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রয়েছে।

অধ্যক্ষ মো.রুহুল আমিন একজন চৌকস,মেধাবী ও সৃজনশীল প্রতিভাসম্পন্ন সাংগঠনিক ব্যক্তিতে¦র কারণে শিক্ষক নেতৃতের শীর্ষে,কলেজ পরিচালনায় দক্ষতা ও মতলবের সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে তিনি মতলববাসীর একজন শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক ব্যক্তি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।

শিক্ষকতা জীবনের পেশাগত কারণে ও প্রতিভা উৎকর্ষতায় ১৯৮৭ সালে ম্যানেজমেন্ট এডুকেশন এন্ড টেনিং কোর্স,১৯৯৬ সালে স্কাউট লিডার কোর্স, ১৯৯৮ সালে স্কাউট এ্যাডভার্ন্স কোর্স,১৯৯৫ সালে অফিসার্স রিসোর্স কোর্স ও ২০১০ সালে কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে কুমিল্লা এইচ টিটি আই কলেজে অধ্যক্ষদের প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি ৩ বছর বৃহত্তর মতলবের ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বে ছিলেন ।

এসব সাংগঠনিক অভিজ্ঞতায় ১৯৭৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি ও জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের সব আন্দোলনে বেসরকারি শিক্ষকদের দাবি আদায়ে অসামান্য অবদান রেখেছেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতিতে কেন্দ্রিয় শিক্ষক সংগঠনের নেতৃত্বে সম্পৃক্ত হন।

২০০৮ সালে ২১ ডিসেম্বর ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ্রে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দান করে কলেজটির সার্বিক উন্নয়ন,শিক্ষার মানোন্নয়ন ও এলাকার শিক্ষা বিস্তারে ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার বেসরকারি স্কুল,কলেজ ও মাদ্রসার শিক্ষক কর্মচারীদের দাবি আদায়ে নিজকে আরো সক্রিয় রাখেন।

১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি ও জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের ব্যানারে জেলা ও কেন্দ্রিয় পর্যায়ের আন্দোলনে বিভিন্ন কর্মসূচির রূপরেখা প্রনয়ণে কেন্দ্রিয় কমিটির ডাকে ঢাকায় প্রতিনিধিত্ব করেন বা সভায় যোগদান করে দাবি আদায়ের গতিকে তরান্বিত করতে জ¦লাময়ী বক্তৃতা প্রদান করেন।

বেসরকারি শিক্ষকদের ৫০ ভাগ থেকে শতভাগ, বেতন ভাতা, ১৯৮৭ সালে বিজয় সারণীতে ঘোষিত ১ শ’ টাকা বাড়ি ভাড়া থেকে ৫ শ’ টাকা, ১ শ’ টাকা মেডিকেল ভাতা থেকে ৪শ’ টাকা,উৎসব ভাতা,জাতীয় পে-স্কেলের অন্তর্ভূক্তকরণ ও সর্বপরি বর্তমান ১ দফা ‘শিক্ষা জাতীয়করণ’ দাবির আন্দোলনে শিক্ষকদের দাবি দাওয়ার প্রশ্নে অবদান রাখছেন।

অধ্যক্ষ রুহুল আমিন খান রাজপথের একজন আপোষহীন শিক্ষকনেতা ও সৈনিক । মিছিল ও বক্তৃতার মাঠকে সরগরম করে শিক্ষকদেরকে আন্দোলনমুখী করার জ¦ালাময়ী বক্তৃতা দিতে দক্ষ ছিলেন।

১৯৯৪ সালের সর্বকালে শ্রেষ্ঠ আন্দোলন এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাঁর সাথে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ ছিলেন অধ্যাপক মনিরুজ্জামান,মরহুম অধ্যক্ষ ছালামত উল্লাহ,অধ্যক্ষ তরিকউল্লা,অধ্যক্ষ সাফায়াৎ আহমেদ ভূঁইয়া,অধ্যক্ষ ড.আলমগীর কবির পাটওয়ারী,মাধ্যমিক পর্যায়ে ছিলেন প্রধানশিক্ষক সাফাওয়াত হোসেন,প্রধানশিক্ষক মরহুম আলী মোহাম্মদ,নুর হোসেন,শহিদুল্লাপ্রধান,মরহুম সিরাজুল ইসলাম,অধ্যাপক মোশারফ হোসেন,অধ্যাপক হাসান আলী,অধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদ,মো.বিলাল হোসেন ও কামরুজ্জামান হারুন প্রমুখ ।

মো.রুহুল আমিন খান ২০০৮ সালে ফরিদগঞ্জের বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজে দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সহিত পালনের পর ২০১৬ সালের ফ্রেবুয়ারি মাসে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি মতলবের কলাদিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তার সহধর্মিণী বিউটি বেগম মতলব বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষিকা। তিনি ২০১২ সাল থেকে মতলব উপজেলা স্কাউট সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দু’ছেলে ও এক কন্যার সৌভাগ্যশীল পিতা। কন্যা রুবিনা সারমিন লোপা চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্সে উত্তীর্ণ,বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করে একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে প্রশাসনিক কর্মকর্ত হিসেবে কর্মরত এবং ছোট ছেলে ঢাকাস্থ বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসিতে এ প্লাস পেয়েছে।

এক সাক্ষাৎকারে প্রবীণ এ শিক্ষকনেতা অধ্যক্ষ রুহুল আমিন বলেন,‘পেশাজীবি শিক্ষক সংগঠন বর্তমানে তরুণ ও প্রতিভাধর শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। চাঁদপুরের জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট নামক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষক সংগঠনটির হাল ধরতে বর্তমান শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। ’

শিক্ষক আন্দোলনে এ পর্যন্ত যা পেয়েছি তা’শিক্ষক আন্দোলনের মাধ্যমে হয়েছে। তবে অরাজনৈতিক শিক্ষক সংগঠন ব্যতীত বেসরকারি শিক্ষকদের দাবি আদায় সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আমরা এ দিনে বেসরকারি স্কুল,কলেজ ও মাদ্রসার শিক্ষক কর্মচারীদের দাবি আদায়ে তাঁর আন্দোলনে,বৃহত্তর মতলবের স্কাউটিং,ক্রীড়া,বি এন সি সি, শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়নে ও ফরিদগঞ্জের শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি ।

লেখক পরিচিতি:আবদুল গনি,প্রচার ও গণ সংযোগ সম্পাদক,জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট,চাঁদপুর। ২৪-৭-১৭,ফোন-০১৭১৮ ২১১০৪৪

:আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮:১৫ পিএম,২৪ জুলাই ২০১৭,সোমবার
ডিএইচ

Leave a Reply