Home / উপজেলা সংবাদ / চাঁদপুরের মতলবে অর্থের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ল্যাংটার মাজার কমিটির বিরোধ
চাঁদপুরের মতলবে অর্থের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ল্যাংটার মাজার কমিটির বিরোধ

চাঁদপুরের মতলবে অর্থের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ল্যাংটার মাজার কমিটির বিরোধ

চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে মতলব উত্তরের ল্যাংটার মাজার শরিফের কমিটির নেতাদের বিরোধ এখন চরমে গিয়ে পৌঁছেছে। সভাপতি ও সম্পাদক দু’গ্রুপে নেতৃত্ব দিয়ে এলাকায় এ নিয়ে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এ বিরোধের ফলে ৯৭তম বার্ষিক ওরশ অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কিত সবাই। বার্ষিক ওরশ আয়োজনে মাজার কমিটির সভাপতি এসএম রশিদ সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম সৈয়দ আহমেদ মোল্লা পৃথকভাবে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন।

সপ্তাহখানেক পর (১৬ চৈত্র) শুরু হতে যাওয়া ৯৭তম বার্ষিক ওরশ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন ভক্ত ও এলাকাবাসী। কারণ, বুধবার (১৬ মার্চ) হযরত সোলেমান শাহ্ ওরফে লেংটা বাবার ওরশ উদযাপন কমিটির প্রস্তুতি সভা দু’গ্রুপের বিরোধে পণ্ড হয়ে যায়। সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর আহমদ, ইউএনও মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন মজুমদারসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মাজারের ভক্তরা।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এখানে ওরশ চলাকালে কোটি-কোটি টাকার চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি হয়। কমিটিতে যারা থাকেন তারাই বিশেষ করে এ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ক্ষমতা না থাকলে চাঁদাবাজি ও মাজারের টাকা লুটপাট করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই কমিটি নিয়ে তিন বছর ধরে কয়েকটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।

সূত্র জানায়, ওই বিরোধের জেরে প্রস্তুতি সভা পণ্ড হয়ে যায়। সভায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এ সময় সভায় উপস্থিত শীর্ষস্থানীয় নেতারা সভা স্থগিত ঘোষণা করেন। আরো জানা যায়, বিগত বছর ভক্তদের দেয়া কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন কমিটির লোকরা। এ নিয়ে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

১৯১৯ সালে উপজেলার বেলতলীর বদরপুর গ্রামে হযরত শাহ সোলায়মান (লেংটা) চিরশায়িত হন। ১৯১৯ সাল থেকে মাজারের ওয়ারিশরা (বোনের দিক থেকে) ভোগ দখল, আর্থিক সুযোগ-সুবিধা এবং রক্ষাণাবেক্ষণ করে আসছেন। যদিও মাজারটি ১৯৭৩ হতে ১৯৭৫ পর্যন্ত সরকারের ব্যবস্থাপনায় ছিল। তারপর আদালতে মামলা হয় এবং এক পর্যায়ে এরশাদ সরকারের আমলে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মদের রায়ের মাধ্যমে মাজারের সব রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তার ওয়ারিশদের উপর অর্পিত হয়।

বহু বছর পর মাজার কমিটি পরিচালনায় সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত হন ওই গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এসএম আবদুর রশিদ সরকার। মোল্লাবাড়ির খাদেমদের নিয়ে সভাপতি কয়েক বছর ধরে তা সুন্দরভাবে পরিচালনা করে আসছিলেন। হঠাৎ করে ৩ বছর ধরে মাজার কমিটির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর মধ্যে এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন সভাপতি এসএম আবদুর রশিদ এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন সেক্রেটারি এসএম সৈয়দ আহমেদ মোল্লা, মতিউর রহমান লাল মিয়া ও হারুন গং।

এখানে প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১৬ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত ল্যাংটার ভক্তদের মিলন মেলা ঘটে। এ সময়ে লাখ-লাখ লোকের সমাগমে হাজার হাজার দোকানপাট পসরা সাজায় এবং কোটি কোটি টাকার বিকিকিনি হয়।

গত বছর মাজারের আয়-ব্যয় হিসাব অনুযায়ী জানা যায়, ৭ দিনে মাজারে আসা ভক্তদের কাছ থেকে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা জমা পড়ে। এ টাকা কোথায় যায়, কি কাজে ব্যয় হয়, এর কোনো সঠিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি। এমনকি সরকারকেও কোনো কর দেয়া হয় না।

এলাকাবাসী বলেন, ১৯১৯ সালের পর মাজারটি দু’বার সংস্কার করা হয়। প্রথমবার সংস্কার করেন দাউদকান্দি উপজেলার মোল্লাকান্দির লাল মিয়া এবং পরবর্তীতে সংস্কার করেন কলাকান্দা গ্রামের শাহজাহান শিকদার। দানকৃত টাকা দিয়ে মাজারের কোন উন্নয়ন হয়নি বলে এলাকাবাসীর দাবি।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কিংবা মেলা কীভাবে পরিচালনা হবে এ নিয়ে এসএম রশিদ সরকারের আহ্বানে উপজেলার সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় খাদেম মতিউর রহমান লাল মিয়া এবং এস এম রশিদ সরকারের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।

লাল মিয়া বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে সব কোন্দলের জন্য রশিদ দায়ী। রশিদ ক্ষুব্ধ হয়ে ‘আমি তোকে (লালমিয়া) দেখে নিব’ বলে হুমকি দেন।’ এ সময় থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন মজুমদার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পরে উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এমপির সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। ডিসি এবং এসপির কাছ থেকে অনুমতি না আসা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হবে না।’

বার্ষিক ওরশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাজার কমিটির সভাপতি এসএম রশিদ সরকার ও সাধারণ সম্পাদক এসএম সৈয়দ আহমেদ মোল্লা পৃথক-পৃথকভাবে প্রশাসনের কাছে আবেদন করায় এলাকাবাসী শঙ্কিত। দু’গ্রুপের সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এলাকাবাসী।

এলাকাবাসীর দাবি, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা জোরদার না করা হলে ভক্ত এবং এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তাই, কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি হলে মেলা বা ওরশ আয়োজনের অনুমতি না দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

অন্যদিকে, এখানে মেলা বা ওরশ শুরুর আগে থেকেই চলে মাদক বিক্রি, সেবন ও অশ্লীলতা। মেলা শুরুর আগেই নেশাখোররা মাজারের চারপাশে ৫ শতাধিক আস্তানা গেরে বসে। সব ধরনের মাদকদ্রব্যই পাওয়া যায় এখানে। নেশাখোরদের দেখলেই মনে হয় মেলা প্রাঙ্গণ যেন নেশার স্বর্গরাজ্য ও নিরাপদ স্থান। দলে দলে আস্তানা বেঁধে সেবন করছে মাদকদ্রব্য। মেলা প্রাঙ্গণের বাতাসে বয় গাঁজার গন্ধ। ল্যাংটার মেলাকে গঞ্জিকাসেবীদের মেলা হিসেবে অনেকেই মন্তব্য করেন।

সূত্র : বাংলামেইল

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৫:৫০ অপরাহ্ন, ১৯ মার্চ ২০১৬, শনিবার

এমআরআর