Home / জাতীয় / রাজনীতি / এবারো সরকারে থেকে সংসদে বিরোধী দল হতে চায় জাতীয় পার্টি
Japa

এবারো সরকারে থেকে সংসদে বিরোধী দল হতে চায় জাতীয় পার্টি

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদের মতো এবার একাদশ সংসদেও সরকারে থেকেই বিরোধী দল হতে চায় জাতীয় পার্টি। এ নিয়ে দলটিকে গৃহপালিত বিরোধীদল তকমা দিয়েছিলেন রাজনৈতিক সমালোচকরা।

এ ইস্যুতে নানাভাবে আলোচিত দলটির ২২ জন নির্বাচিত সদস্যের অনেকেই চাইছেন পুরোপুরি সরকারে থাকতে। আবার কেউ মত দিয়েছেন বিরোধী দল হিসেবেই ভূমিকা নিতে। না হলে একইসঙ্গে মন্ত্রিত্ব ও বিরোধী দলে থাকলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।

ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ীরা শপথ নেবে না, এমন খবরে গণমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। একাদশ সংসদে কারা হচ্ছেন বিরোধীদ।

জাপা’র নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সংসদে আওয়ামী লীগের পর একমাত্র জাপা-ই সবচেয়ে বেশি আসনে বিজয়ী হওয়ায় বিরোধী দল হিসেবেই তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। তবে সবার মতামত আমলে নিলে উভয় অংশেই শরিক হবে জাপা। এক্ষেত্রে আগামী দুয়েক দিনের মধ্যেই মহাজোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে জাপা। বুধবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের যৌথসভায় সিংহভাগ নেতাই সরকারে থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা গতবারের ফর্মুলা অনুযায়ী বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারের অংশীদারিত্বেও থাকতে চান।

জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি, প্রত্যেকেই মতামত দিয়েছেন। জাপা যেহেতু মহাজোটের শরিক হিসেবে নির্বাচনে গেছে এবং বিজয়ীদের মধ্যে একজন বাদে সবাই জোট থেকে নির্বাচিত, সে কারণে বিজয়ীদের প্রত্যেকেই চাইছেন সরকারে থাকতে।’

জাপা সূত্র জানায়, বুধবারের বৈঠকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সালমা ইসলাম সত্যিকারের বিরোধী দল হওয়ার আহ্বান জানান নেতাদের। তিনি বলেন, ‘আমি অন্য দলের প্রতীক থেকে যেন নির্বাচন করি সেই অফার ছিল, কিন্তু আমি যাইনি। আমি মনে করি আমাদের সত্যিকারের বিরোধী দল হওয়া উচিত।

নবনির্বাচিত এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘শেখ হাসিনা আর পল্লীবন্ধু এরশাদের নেতৃত্বে মহাজোট হয়েছে। মহাজোটের কারণেই আমরা এমপি। শেখ হাসিনা এখন রাজনীতি করেন ট্রাম্প ও মোদির সঙ্গে। ড. কামাল, ফখরুল, রব, মান্নাদের নিয়ে রাজনীতি করার সময় তার নেই। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না আমরা সরকারে না থাকলে এলাকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না।’

জাপার আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান বলেন, ‘মহাজোট যেহেতু সরকারই সৃষ্টি করেছে, তাই মহাজোটের মাধ্যমে সরকারে থাকাই বাঞ্ছনীয়।’

শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পার্টির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেছি, কিন্তু মহাজোটের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ পার্টি করবো কিনা এরশাদ সাহেবের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবো। তবে আমি মনে করি, আমাদের গতবারের মতো সরকারের সঙ্গে থাকা উচিত। তা না হলে আমরা টিকে থাকতে পারবো না।’

জাপা নেতা এটিইউ তাজ রহমান বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক হতে হবে। হয় সরাসরি সরকারে থাকবো, অথবা বিরোধী দলে থাকবো। বিরোধী দলে থেকে মন্ত্রিত্ব নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, বিরোধী দলে থেকে মন্ত্রিত্ব নিলে জনগণ আমাদের ভিন্নভাবে নেবে।’

তার এ বক্তব্য সমর্থন করেন অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, হাফিজউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। এছাড়া, মুজিবুল হক চুন্নু, আদেলুর রহমান, পনির উদ্দিন আহমেদসহ অধিকাংশ সংসদ সদস্য গতবারের মতো বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারে থাকার পক্ষে বক্তব্য দেন। গোলাম কিবরিয়া টিপু নির্বাচনের আগে মনোনয়ন বাণিজ্যের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করার দাবি জানান। সভায় কাজী ফিরোজ রশিদ উপস্থিত থাকলেও কোনও বক্তব্য দেননি।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমাদের দলের অনেকে চাইছেন সত্যিকার অর্থে বিরোধী দল হতে। তবে সম্ভবত ২০১৪ সালের দিকেই যাচ্ছে পার্টি।’

কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘শপথ নেওয়ার পর দুয়েক দিনের মধ্যেই আমরা আলোচনা শুরু করবো।’

আপনি নিজে বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে জি এম কাদের বলেন, ‘না, এখনও নিশ্চিত না। চেয়ারম্যান স্যার আছেন, তিনি যাকে মনোনীত করবেন, তিনিই হবেন বিরোধীদলীয় নেতা।’

এদিকে, বুধবার দুপুরে প্রেসিডিয়ামের সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা জানান, বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) এমপিদের শপথ গ্রহণের পর আমাদের পার্লামেন্টারি পার্টি সিদ্ধান্ত নেবে—আমরা সরকারে থাকবো, নাকি বিরোধী দলে থাকবো। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

বুধবার সকালে অনু্ষ্ঠিত এ বৈঠকে নবনির্বাচিত ১৪ জন এমপিসহ ৩৬ জন নেতা উপস্থিত থাকলেও বৈঠকে আসেননি পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, সাবেক দুই মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ অনেক প্রেসিডিয়াম সদস্য। (বাংলা ট্রিবিউন)

বার্তা কক্ষ
২ জানুয়ারি, ২০১৯