Home / চাঁদপুর / এইচএসসির আগেই বিশ্বসেরা এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পেলেন চাঁদপুরের নাফিস
চাঁদপুরের নাফিস

এইচএসসির আগেই বিশ্বসেরা এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পেলেন চাঁদপুরের নাফিস

এইচএসসি পাস করার আগেই বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজিতে (এমআইটি) স্নাতক (সম্মান) কোর্সে পড়ার জন্য চূড়ান্তভাবে ডাক পেয়েছেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মো. নাফিস উল হক সিফাত। তিনি এ কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।

১৭ মার্চ শুক্রবার সকালে কলেজে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী নাফিসের প্রশংসা করে বলেন, নাফিস আমাদের গর্ব। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে সে আরও এগিয়ে যাবে। তার সাফল্য কামনা করি।
 
চাঁদপুরের নাফিস

চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় মা–বাবার সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকেন নাফিস। মা–বাবা দুজনেই শিক্ষকতা করেন। নাফিসের বাবা মো. নাসির উদ্দিন মতলব রয়মনেনসা মহিলা কলেজের শিক্ষক। আর মা কামরুন নাহার হাজীগঞ্জ মডেল কলেজে শিক্ষকতা করেন। নাফিসের গ্রামের বাড়ি মতলব দক্ষিণের নওগাঁ গ্রামে।

ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখেন নাফিস। তাই খুব ছোট বয়স থেকেই গণিত অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নাফিস ছিলেন নিয়মিত মুখ। আছে আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। এর আগে চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসিতে পাস করেন তিনি। তবে এমআইটির মতো কোনো প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন, নাফিস সেটা কখনো ভাবেননি।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাস বলেন, নাফিস খুবই মেধাবী ছাত্র। সে আমাদের কলেজের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। এ বছর সে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। নাফিস এমআইটিতে চান্স পেয়েছে। খুব কোয়ালিফাইড হলে ওই ছাত্র এইচএসসি পাস করলো কি করলো না- বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে অনেক ক্ষেত্রে সেটি মুখ্য বিষয় নয়। তাদের কাছে মেধাই গুরুত্ব পায়। অতি মেধাবীদের তারা এভাবেই বেছে নেয়।

তিনি বলেন, নাফিসের এ অর্জন দেশের জন্য গর্বের বিষয়। কারণ, কতটা মেধাবী হলে এখনও একটি ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেনি অথচ তাকে এমআইটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ইনভাইট করা হয়েছে।

নাফিস এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্সে (আইওআই) বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন।

এমআইটির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ কীভাবে অর্জন হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে নাফিস বলেন, ‘কোনো কিছুই আসলে অসম্ভব নয়। চেষ্টা থাকতে হবে, আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। ওরা আসলে দেখতে চায় পড়ালেখায় কতটা ভালো, মানুষ হিসেবে কেমন, কোনো বিষয়ে আগ্রহ আছে কিনা শিক্ষার্থীর, কীভাবে সমস্যার সমাধান করছে ইত্যাদি। 

নাফিস বলেন, আমি অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্সে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করায় তারা আমাকে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করেছে। এমআইটিতে কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছে আছে। আমি সবার দোয়া চাই। বাংলাদেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। 

নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নাসিফ বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আহ্বান হলো- ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে। পাশাপাশি এক্সটা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসগুলোতে নিজেদের যুক্ত রাখতে হবে।’

নাফিস বলেন, এমআইটিতে যারা আবেদন করেন তাদের সবাইকে একটা নিজস্ব পোর্টাল দেওয়া হয়। এই পোর্টালের মধ্যে রেজাল্টসহ অন্যান্য সব আপডেট দেওয়া হয়। আমি চিঠিটি পেয়েছি ১৫ মার্চ সাড়ে ৪টার দিকে। তিনি বলেন, এমআইটিতে প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে দুই-একজন করে চান্স পায়।

জানা গেছে, এমআইটি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম। এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রকৌশল ও মৌলিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলো সব সময়ই আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম হয়। এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন বিশ্বের নামকরা সব পণ্ডিত ও গবেষক। ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণায় বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

স্টাফ করেসপন্ডেট, ১৭ মার্চ ২০২৩