চাঁদপুর শহরের বিভিন্নস্থানে দিনের পর দিন গড়ে উঠছে প্রাইভেট হাসপাতাল ও বিভিন্ন ডায়াগণস্টিক সেন্টার। সেসব হাসপাতাল ও ডায়াগণস্টিক গুলোর মধ্যে বেশির ভাগ হাসপাতাল এবং ডায়াগণস্টিক সেন্টারের নিয়মিত নির্দিষ্ট কোনো ডাক্তার নেই। নেই কোনো স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। তাই রোগী মৃত্যু সহ ঘটছে বহু অনাকাঙ্খিত ঘটনা।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে -চাঁদপুর শহরে নামকরা,নতুন এবং পুরনো যেসব হাসপাতালগুলো গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে হাতেহগানা কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া অধিকাংশ হাসপাতালেই নিয়মিত কোনো চিকিৎসককে ডিউটি করতে দেখা যায়নি। যখন জেলা শহরের বিভিন্নস্থান থেকে রোগে আক্রান্ত হয়ে কোনো রোগীকে হাসপাতাল নিয়ে আসা হয়। তখন যেসব প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর প্রতিনিধিরা রোগ অনুযায়ী সে সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মুঠোফোনে কল দিয়ে হাসপাতালে ডেকে আনেন। আর ওইসকল হাসপাতালে ডাক্তার আসতে আসতে ততক্ষণে রোগীর বারোটা বেজে যায়।
চাঁদপুর শহরের আব্দুল কাদের খান,নাজমুল হাসান,শরীফ উল্ল্যাহসহ একাধিক ভুক্তভোগীরা জানায়, পূর্বে তাদের পরিচিত অনেক রোগী যখন হৃদরোগে কিংবা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তখন শহরের মুন হাসপাতাল,সিটি হাসপাতাল,পদ্মা হাসপাতাল,কর্ণফুলী হাসপাতাল, সেন্টাল হাসপাতালসহ শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে উপস্থিত কোনো চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। আর সময় মতো কোনো চিকিৎসক এবং চিকিৎসাসেবা হাসপাতালে পাওয়া না যাওয়ায় তাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন।
এছাড়াও অনেক হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসক না থাকায় এবং কিছু কিছু হাসপাতালে চুক্তিমতো কোনো চিকিৎসক ব্যবস্থা করতে না পেরে অনেক সময় অনাবিজ্ঞ চিকিৎসক দিয়েই প্রসূতি মায়ের সিজার,অপারেশন করার অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে প্রায় সময়ই প্রাইভেট অনেক হাসপাতালে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বা ঘটে আসছে। আর এসব ঘটনায় হাসপাতাল ভাংচুর কিংবা চিকিৎসক ও হাসপাতালের স্টাফ,নার্সদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে থাকে।
এরমধ্যে ৬ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যায় চাঁদপুর মা ও শিশু হাসপাতালে অনাবিজ্ঞ চিকিৎসক ডাক্তার নাজমুন্নাহার মুন্নি সিজার করতে গিয়ে অস্ত্র পাচারের সময় ভুল চিকিৎসায় হালিমা আক্তার (২৩) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশ কয়েক মাস পূর্বে একই ভাবে শহরের কর্ণফুলী হাসপাতাল,মুন হাসপাতাল,পদ্মা হাসপাতাল,রয়েল হাসপাতাল যমুনা হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে সিজার করাতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শুধু প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোই নয়,এর বাইরে শহরের বিভিন্নস্থানে যেসব ডায়াগণস্টিক সেন্টার রয়েছে। খবর নিয়ে জানা গেছে সেগুলোতেও নিয়মিত কোনো ডাক্তার বসে নি। যখন কোনো রোগী চিকিৎসা সেবার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে যান, তখন তারা কল দিয়ে ডাক্তারকে আসার কথা বললে, দীর্ঘসময় অপেক্ষা করার পর ডাক্তার গিয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেন।
এমন এক প্রতিষ্ঠানের ডাক্তার দিয়ে চলে একাধিক ডায়াগনস্টিক ও প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। এ ভাবেই নির্দিষ্ট কিংবা কোন নিয়মিত চিকিৎসক ছাড়াই যবোথবো ভাবে কোনো রকম চলছে চাঁদপুরের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগণস্টিক সেন্টারগুলো।
তাই যা হবার তাই হচ্ছে। একদিকে যেমন ঘটছে অনাকাঙ্খিত রোগী মৃত্যুের ঘটনা,অন্যদিকে কর্তব্য অবহেলা আর অযত্নে চলছে রোগীদের চিকিৎসা সেবা। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটছে হামলা,ভাংচুর,অভিযোগ এবং মামলা। সবশেষে প্রিয় স্বজনকে চিরতরে হারিয়ে সাধারণ মানুষ পাচ্ছে হয়তো নগদ কয়েক হাজার টাকা।
চাঁদপুরের এসব প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগণস্টিক গুলোতে যদি প্রশাসনের কড়া নজর দারি ও তদারকি থাকে তাহলে হয়তো এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এ বিষয়ে চাঁদপুর প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.সফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,চাঁদপুরে কোনো প্রাইভেট হাসপাতালে এবং ডায়াগণস্টিকে নিয়োগ প্রাপ্ত নিয়মিত বসার মতো কোনো বিশেষজ্ঞ গাইনি ডাক্তার নেই। আর মেডিসিন ও সার্জারি সহ অন্যান্য বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সেক্ষেত্রেও নিয়োগ প্রাপ্ত নিয়মিত বসার কোনো ডাক্তার নেই।
দেখা গেছে-যারা চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন তাদেরকে দিয়েই প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগণষ্টিকগুলো তাদেরকে ডেকে এনে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। আর এ সমস্যাটি থাকবেনা যদি চাঁদপুরের মেডিকেল কলেজটি যখন পরিপূর্ণভাবে চালু হয়ে যাবে। তখন হয়তো চাঁদপুরে অনেক চিকিৎসক থাকবেন তাদেরকে নিয়োগ প্রাপ্ত করে নিয়মিত রোগী দেখালে রোগীদের অনেকটা দুর্ভোগ কমবে। তখন হয়তো আর কোনো রোগীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা বা কুমিল্লা যেতে হবেনা।
কবির হোসেন মিজি,৮ অক্টোবর, ২০১৯