রাজধানীর সদরঘাটের ঢাকা নদী বন্দরে রোববার লঞ্চগামী যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার ৩৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করলেও লঞ্চ মালিকরা ডেক যাত্রী প্রতি ১শ টাকা ও কেবিন প্রতি ৪শ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি চরম নৈরাজ্য্ বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
লঞ্চ মালিকরা বলছেন, তারা আগে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নিতেন। এখন সরকার ভাড়া বাড়ানোয় আগের ভাড়াসহ সরকার নির্ধারিত ভাড়া বাস্তবায়ন করছেন।
আগে বরিশাল ডেক যাত্রীদের জন্য সরকার নির্ধারিত ২শ ৫৬ টাকা ছিল। সেসময় তারা ১৫০ টাকা আদায় করতেন। তবে গতকাল থেকে সেই ভাড়া এক লাফে ৩৫০ টাকা করায় আগের হিসাবে ১৫০ শতাংশ ভাড়া বেড়েছে। তবে এতে সরকারি সিদ্ধান্তের কোনো ব্যাত্তয় হয়নি বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌ পরিবহণ (যাপ) সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনো লঞ্চে সরকারি নিয়মের বাইরে ভাড়া আদায় করতে পারবে না। আজকে প্রতিটি লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এতদিন আমরা যাত্রীদের ছাড় দিয়েছি। এখন আমাদের অবস্থাও খারাপ। তবে ৩৫ শতাংশের ওপরে কেউ ভাড়া আদায় করার কথা নয়।
সূত্র বলছে, গত শুক্রবার মধ্য রাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিন তেলের লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির পর থেকে সারা দেশে সড়ক পরিবহণ বন্ধ থাকায় লঞ্চ যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাক। ওই দিন থেকেই প্রতিটি রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছিল লঞ্চ মালিকরা। এরপর শনিবার বিকাল ৩টার দিকে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই লঞ্চ ধর্মঘট ডাকা হয়। এরপর রোববার বাংলাদেশ অভ্যশন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটি) সঙ্গে বৈঠকের পর সন্ধ্যাা থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু করলেও সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়াব আদায় করার অভিযোগ উঠেছে লঞ্চ মালিকদের বিরুদ্ধে।
৮ নভেম্বর সোমবার বরিশালগামী সুন্দরবন-১২, পারাবত -১০ লঞ্চে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৪শ টাকা ও ডাবল কেবিন ২ হাজার ৮শ টাকায় বুকিং নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ডেক যাত্রীদের কাছে ৩৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। হুলারহাট রুটের ফারহান-৯ লঞ্চে ভিআইপি কেবিন ৬ হাজার টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৩শ টাকা, ডাবল কেবিন ২ হাজার ৫শ টাকা ও ডেকে ৪শ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
ওই লঞ্চের করণিক অপু বলেন, আগে সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ও ডাবল কেবিন ২ হাজার এবং ভিআইপি কেবিন ৪ হাজার টাকা নেওয়া হতে। তাছাড়া ডেকে ২৫০টাকা নেওয়া হতে। আমরা শুধু মালিকের হুকুম পালন করছি।
চাঁদপুর থেকে ঢাকায় আসা যাত্রী নূরজাহান বেগম, ইউনুস ও ফয়সাল জানান, একে তো ঠাসাঠাসি করে যাত্রী উঠিয়েছে তার ওপর দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। তারা বলেন, আগে চাঁদপুরে ডেকে যাত্রী প্রতি ১শ টাকা নেওয়া হলেও এখন ২শ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অথচ সরকার ২৭শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
আমির হোসেন নামে একজন যাত্রী বলেন, রফরফ লঞ্চে পরিবার নিয়ে বাড়ি রওনা হয়েছেন। সবসময় তিনি ১ম শ্রেণিতে ভ্রমণ করে থাকেন। নিয়মিত তিনি সিঙ্গেল কেবিন ৫শ টাকা ডাবল কেবিন ৭শ থেকে ৯শ টাকায় ভ্রমণ করতেন। কিন্তু আজকে প্রতিটি সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ও ডাবল কেবিন ২ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যাত্রীরা বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
ঝালকাঠি সুন্দরবন -১২ লঞ্চের কেবিন যাত্রী রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা লঞ্চ মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। আমি অসুস্থতা নিয়ে ৫ দিন আগে ঢাকা আসার সময় ২২০০ টাকা দিয়ে ডাবল কেবিনে এসেছি। আজ ওই ভাড়া ২৮০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। বাড়তি এই ৬শ টাকা দিয়ে আমার দুই ব্যা গ রক্ত কিনতে পারতাম।
শুধু বরিশালই নয়, দেশের ৪১টি নৌ রুটের প্রতিটি রুটে যাত্রী ভাড়া বেড়েছে। প্রতিটি রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে লঞ্চ কর্মচারীদের সঙ্গে যাত্রীদের বাদানুবাদ হচ্ছে। অনেক লঞ্চে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। ইচ্ছেমতো ভাড়াল আদায়ের ফলে ভাড়া নৈরাজ্যে চলছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ সব রুটেই এভাবে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক) জয়নাল আবেদীন বলেন,নতুন ভাড়া কার্যকর করায় আগের তুলনায় বেশি ডিফারেন্ট হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারণের বাইরে আদায় করা হচ্ছে না। এছাড়া কোনো লঞ্চে যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই লঞ্চের যাত্রা বাতিলসহ আইনানুগ ব্যা বস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী,লঞ্চ ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ৬০ পয়সা করে বেড়েছে। ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার ৩৫ শতাংশ এবং ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার ৪৩ শতাংশ।
১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে লঞ্চ ভাড়া ছিল ১ টাকা ৭০ পয়সা। এই ভাড়া বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ টাকা ৩০ পয়সা। ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে ভাড়া ছিল ১ টাকা ৪০ পয়সা। যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ টাকা। এ ছাড়াও সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৫ টাকা।