আন্তর্জাতিক

ভারতে ভোট শুরু

ভারতের সপ্তদশ লোকসভার ভোটের প্রধান আকর্ষণ আরও পাঁচ বছরের জন্য নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কি না।

লোকসভার এই ভোট শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। ৪০ দিন ধরে মোট সাত পর্বে এই ভোটে নির্বাচিত হবেন লোকসভার ৫৪৩ জন সদস্য। প্রথম পর্বে ভোট হচ্ছে দেশের ২০ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯১টি আসনে। শেষ পর্বের ভোট ১৯ মে। গণনা ২৩ মে।

আজ ভোট হচ্ছে অরুণাচল প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, জম্মু-কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ওডিশা, সিকিম, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরা, উত্তরাখন্ড, পশ্চিমবঙ্গ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ ও উত্তর প্রদেশে।

নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন একেক রাজ্যে একাধিক দিন ভোটের ব্যবস্থা করেছে। যেমন, উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রগুলোতে ভোট হচ্ছে সাত দফায়।

প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম), যা নিয়ে তীব্র আপত্তি ও সংশয় রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে একাধিক রাজনৈতিক দল।

ইভিএমে যে কারচুপি করা যায় না, তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন ‘ভিভিপ্যাট’ মেশিন চালু করেছে। এই মেশিন নিশ্চিত করে ভোটারের ভোট ঠিক জায়গায় পড়েছে কি না। কিন্তু তাতেও সংশয়ী ও সন্দিহান রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মুখে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তত পাঁচটি করে ভিভিপ্যাট মেশিন পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

গতবারের ভোটে প্রবল মোদি হাওয়ায় ভর করে বিজেপি একাই ২৮২ আসন পেয়েছিল। কিন্তু এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও বিজেপি পেয়েছিল মোট ভোটের মাত্র ৩১ শতাংশ। সেবার বিজেপিবিরোধী কোনো জোট সেই অর্থে হয়নি। লড়াই হয়েছিল প্রধানত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ ও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর মধ্যে। উত্তর প্রদেশের লড়াই ছিল চতুর্মুখী। মোদি হাওয়া এতই তীব্র ছিল যে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, দিল্লি, রাজস্থান ও গুজরাটে একটি আসনও বিরোধীরা জিততে পারেনি। এমনকি উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ও তার শরিক আপনা দল ৭৩টি জিতে যায়। পাঁচ বছরের নিরবচ্ছিন্ন শাসনের পর এবার বিজেপিকে রুখতে উত্তর প্রদেশে জোট বেঁধেছে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি ও রাষ্ট্রীয় লোকদল। আজ উত্তর প্রদেশের পশ্চিম প্রান্তে যে আটটি আসনে ভোট, গত ভোটে সেগুলোর প্রতিটিই বিজেপির জেতা। জোটবদ্ধ বিরোধীরা এই রাজ্যে এবার বিজেপির বড় প্রতিপক্ষ।

উন্নয়ন ও বিকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদি ক্ষমতা নিয়েছিলেন পাঁচ বছর আগে। মাস কয়েক আগ পর্যন্তও সেই উন্নয়ন ও বিকাশ ছিল বিজেপির সেরা হাতিয়ার। কিন্তু রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনাবেচা নিয়ে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের আগ্রাসী ভূমিকা, কৃষক অসন্তোষ, নোট বাতিল, কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিরোধী আক্রমণে জেরবার শাসক দল কাশ্মীরের পুলওয়ামা হত্যাকাণ্ডের পর বালাকোট অভিযানকে হাতিয়ার করে। বড় করে তুলে ধরে দেশের নিরাপত্তাকে। প্রচারের এই অভিমুখ বদল মোদি সরকারকে তরাতে পারবে কি না, সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল আকর্ষণ।

এবারের ভোটের অন্য আকর্ষণ বিজেপির ‘একমুখী’ প্রচার। এই প্রথম ‘ওয়েস্টমিনস্টার’ কাঠামোর লোকসভা নির্বাচনী প্রচার হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘প্রেসিডেনশিয়াল’ ধাঁচে। বিজেপির প্রচারেও মুখ একজনেরই। নরেন্দ্র মোদি। পোস্টার, ব্যানার কোথাও মোদি ছাড়া আর কারও ছবি নেই। বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ি, লালকৃষ্ণ আদভানি, দীনদয়াল উপাধ্যায় কারও ছবি নেই। শুধু মোদিকে তুলে ধরে খুবই সচেতনভাবে বিজেপি এই ভোটকে মোদির পক্ষে গণভোটের রূপ দিয়েছে। এটা করতে তাঁদের সুবিধা হয়েছে বিরোধী শিবিরে কোনো প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী না থাকা। রাজ্যে রাজ্যে ইস্যুর বিভিন্নতা এই ভোটে প্রাধান্য পাবে, নাকি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদিকেই পছন্দ করবে, সেটাও অন্যতম প্রধান দ্রষ্টব্য।

সার্বিক জোট না হলেও প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই দুই সর্বভারতীয় দল বিজেপি ও কংগ্রেস স্থানীয় দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ। গো–বলয়ের রাজ্যগুলোয় প্রধান দুই প্রতিপক্ষ কংগ্রেস ও বিজেপি হলেও উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিজেপি প্রায় প্রতি রাজ্যেই স্থানীয় দলের সঙ্গে জোট বেঁধেছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, কেরালা ও তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস ও বিজেপি কারও সঙ্গে জোট বাঁধেনি। জোটবদ্ধ না হওয়া এই দলগুলোর মধ্যে যাদের নিয়ে আগ্রহ তারা হলো অন্ধ্র প্রদেশের ওয়াইএসআর কংগ্রেস, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি ও বিজু জনতা দল। ত্রিশঙ্কু সংসদ হলে এই তিন দল যে দিকে ঝুঁকবে, সরকার গড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে তাদেরই।

গতবার একার শক্তিতে সরকার গড়লেও এবারের নির্বাচন যত এগোচ্ছে ততই সম্ভাবনা বাড়ছে ত্রিশঙ্কু সংসদের। যতগুলো প্রাক্-নির্বাচনী সমীক্ষা হয়েছে, কোনোটিতেই বিজেপির একক শক্তিতে ক্ষমতা লাভ দেখায়নি। ম্যাজিক ফিগার ২৭২-এর কাছাকাছি পৌঁছেছে শুধু। যদিও বিজেপি মনে করছে, বালাকোট অভিযানের পর নিরাপত্তার প্রশ্ন শুধু বড় হয়েই ওঠেনি, নেতা হিসেবে মোদির ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে। অন্যদিকে রাহুলের নেতৃত্বে পুনরুজ্জীবিত কংগ্রেস মনে করছে, সরকার তার সার্বিক ব্যর্থতা ঢাকতে ব্যর্থ। সেই ব্যর্থতার প্রতিফলন ভোটের ফলে দেখা যাবে।(প্রথম আলো)

বার্তা কক্ষ
১১ এপ্রিল,২০১৯

Share