Home / চাঁদপুর / ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে চাঁদপুরে বিধ্বস্ত ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি : দুর্গত ১২ সহস্রাধিক মানুষ
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে চাঁদপুরে বিধ্বস্ত ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি : দুর্গত ১২ সহস্রাধিক মানুষ, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে চাঁদপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ৪ শতাধিক বসতঘর
চাঁদপুর রাজরাজেশ্বরে বিধ্বস্ত একটি বসতঘর

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে চাঁদপুরে বিধ্বস্ত ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি : দুর্গত ১২ সহস্রাধিক মানুষ

ঘুর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাবে বাতাসের গতি বৃদ্ধি পেয়ে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, হাজীগঞ্জ ও মতলব উত্তর উপজেলার প্রায় দুই হাজার গাছ ভেঙে উপড়ে পড়েছে। গাছ পড়ে এবং ঝড়ো হাওয়ায় চাঁদপুরের ৮ উপজেলার মধ্যে ৪ উপজেলার প্রায় ৫ শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

চরাঞ্চলের ঘরগুলোর টিন ও বেড়া বাতাসে উড়ে নদীতে গিয়ে পড়ে। এই ৪ উপজেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার ৭শ’ ৩৫ জন।

রোববার বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এই তান্ডব চালায়। বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চাঁদপুর শহরসহ জেলার ৪ উপজেলা ক্ষতিগ্রস্থের তালিকাটি সোমবার সকালে নিশ্চিত করেন জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তা।

৪ উপজেলার দূযোর্গ কবলিত ইউনিয়ন সমূহের নামগুলো হলঃ চাঁদপুর সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলোর মধ্যে রাজরাজেশ্বর, হানারচর, ইব্রাহিমপুর, চান্দ্রা ইউনিয়ন। হাইমচর উপজেলার গাজীপুর, আলগী উত্তর ও দক্ষিণ, নীলকমল, হাইমচর, চরভৈরবী ইউনিয়ন।

মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর, ফরাজিকান্দি ও ফতেহপুর ইউনিয়ন। হাজীগঞ্জ উপজেলার হাজীগঞ্জ পৌরসভা ও দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়ন। এদের মধ্যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন গুলো হলো গাজীপুর, নিলকমল, হাইমচর, হাজীগঞ্জ পৌরসভা ও দ্বাদশ গ্রাম এবং রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন।

জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তা কে বি এম জাকির জানান, চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলার বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থের সংখ্যা পেয়েছি। জেলায় বিধস্ত মোট বাড়ির সংখ্যা প্রায় ৪ শ ৮৩ টি। এর মধ্যে আংশিক ৩শ ৮৮ টি ও সম্পূর্ণ ৯৫টি পেয়েছি। আর দুর্গত মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার ৭শ’ ৩৫ জন। মৃত ও নিখোজ নেই।

তিনি আরও জানান, সকলের সহযোগিতায় সুন্দরভাবে দুর্যোগ পরিস্থিতির মোকাবেলা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খানের তদারকি ছিল প্রশংসনীয়। ঐ দিন তিনি সকাল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত দূর্যোগ পরিস্থিতি মনিটরিং করেছেন। ক্ষতিগ্রস্থদের একটি তালিকা আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাচ্ছি। তাৎক্ষণিক কিছু ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরও সহায়তা করা হবে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতিমধ্যে খাদ্য সহায়তা হিসেবে জেলার ৪ উপজেলায় সর্বমোট ১০ হাজার মেট্রিক টন এবং নগদ অর্থ সহায়তা হিসাবে চার উপজেলায় ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা উপ বরাদ্দ করা হয়েছে।

সরেজমিনে সোমবার সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বলিয়ার চরে গেলে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে প্রায় ১ থেকে দেড় শ ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় নুরুল ইসলাম দেওয়ান, আমিনা বেগম, আইনল হক মোল্লা, আমিনুল ইসলাম, শহিনা বেগম জানায়, আমরা জাহাজমারা এলাকার দেওয়ান কান্দি এলাকা নদীতে ভেঙ্গে যাওয়ার পর এখানে এসে বড়ি করেছি। বুলবুলের তান্ডবে এই এলাকার প্রায় ১ থেকে দেড় শ বাড়িঘর তছতছ হয়ে গেছে। আমরা সরকারের নিকট সাহায্য কামনা করি।

সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর তান্ডবে মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে গোয়ালনগর ও বলিয়ার চরে প্রায় বহু কাঁচা ও অস্থায়ীভাবে উঠানে ঘর ভেঙে পড়েছে। এসব ঘরের টিনের চাল ও বেড়া বাতাসে উড়ে নদীতে গিয়ে পড়ে। এই ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, ‘রবিবার বিকেলে চাঁদপুরের ওপর বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। বাতাসের প্রচণ্ড গতিবেগে হাইমচর উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ে গাছপালা ভেঙে পড়ে অন্তত তিন শতাধিক বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ে অনেক বসতঘরের চালা ও বেড়া উড়ে যায়। ঝড়ে শনিবার ও রবিবার বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক লাইনের ওপর গাছ পড়েছে। এতে পুরো হাইমচর উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’

তিনি আরো বলেন,‘যেসব স্থানে বৈদ্যুতিক তারের উপর গাছ পড়েছে, সেসব জায়গায় রবিবার থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা গাছপালা সরানোর পর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ইতোমধ্যে শুকনো খাবার বিতরণসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া যাদের বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতা করা হবে।’

হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম বলেন,‘জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।’

এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এসএম জাকারিয়া বলেন,‘ ঝড়ে চাঁদপুর জেলায় ৪ শতাধিক মানুষের বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য নগদ টাকা ও ঢেউটিন দেওয়ার আবেদন জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হবে বলে জানান ।’

বার্তা কক্ষ , ১১ নভেম্বর ২০১৯