আদর সোহাগে যার থাকার কথা ছিল মায়ের কোলে, সেখানে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে রয়েছে হাসপাতালের বিছানায়। মাত্র তিন মাস বয়সী ছোঁয়া নামের শিশুটিকে এই পৃথিবীর মানুষ সম্পর্কে এক নিষ্ঠুর ধারণা দিয়েছে তারই আপন দাদী মুরফিয়া বেগম। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ শিশুর ডান পায়ের ঊরুতে তার আপন দাদি গরম খন্তির ছেঁকা দেন।
আর এ নিষ্ঠুর কাজে সহায়তা করেন শিশুটির চাচি সোনিয়া বেগম। বর্তমানে শিশুটি তার ঊরুতে দগদগে ঘা নিয়ে অসহনীয় যন্ত্রাণায় ছটফট করছে হাসপাতালের বিছানায়। রোববার সকালে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি শিশু ছোয়ার মা হাসি বেগম এ প্রতিনিধিকে নির্যাতনের বিষয়টি জানান।
তিনি বলেন, পিরোজপুর সদর উপজেলার ভৈরমপুর গ্রামে বুধবার দুপুরে এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় দাদি ও চাচিকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামি সোনিয়াকে গ্রেফতার করেছে। শিশু ছোঁয়া সদর উপজেলার উত্তর ভৈরমপুর গ্রামের সফিক খানের মেয়ে। শিশুটির মা হাসি বেগম জাগো নিউজকে বলেন, কী কারণে আমার সন্তানকে গরম খন্তির ছ্যাঁকা দেয়া হলো? রাগ আমার ওপর, এ নিষ্পাপ শিশুটি কী করেছে? আমি আইনের মাধ্যমে এর বিচার চাই।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৮ আগস্ট সদর উপজেলার ভৈরমপুর গ্রামের শাহ আলম খানের ছেলে বাহরাইন প্রবাসী শফিক খানের সঙ্গে একই উপজেলার পান্তাডুবি গ্রামের ফয়জুল হকের মেয়ে হাসি আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পরে শফিক বাহরাইনে চলে যান। এই বিয়ে দাদী মুরফিয়া বেগম মেনে নিতে পারেননি। তাই বিয়ের পর শাশুড়ি হাসিকে সন্তান নিতে নিষেধ করেন। কিন্তু বিয়ের পরপরই হাসি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে শাশুড়ি মুরফিয়া বেগম হাসিকে গর্ভপাত করাতে বলেন। এতেও হাসি রাজি না হওয়ায় গত জুনে শিশু কন্যা ছোঁয়ার জন্ম হয়।
এরপর থেকে মুরফিয়া বেগম নাতির জন্ম-পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। হাসির সঙ্গে শাশুড়ির মনোমালিন্য শুরু হয়। গত বুধবার সকালে হাসিকে তার স্বামীর বড় বোন সোনিয়া আক্তার মুঠোফোনে কল করে বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে ডেকে নেন। দুপুর ১২টার দিকে মুরফিয়া বেগম ছোয়াকে কোলে নিয়ে রান্নাঘরে যান। এরপর গরম খন্তি দিয়ে ছোঁয়ার ডান পায়ের ঊরুতে ছ্যাঁকা দেন। এ ঘটনায় হাসি শাশুড়িকে গালমন্দ করেন। এতে মুরফিয়া বেগম ক্ষুব্ধ হয়ে দা দিয়ে হাসির মাথার কিছু চুল কেটে ফেলেন।
একপর্যায়ে হাসি শিশুকে নিয়ে পালিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। বুধ ও বৃহস্পতিবার হাসি আক্তার ছোঁয়াকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাবার বাড়ি নিয়ে যান। ছোঁয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় শুক্রবার বিকেলে তাকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পিরোজপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক অনিক দেউড়ি বলেন, ‘শিশুটির ঊরুতে ক্ষত দেখে মনে হয়েছে, লোহাজাতীয় গরম কিছু দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়া হয়েছে।
পিরোজপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেন বলেন, এ ঘটনায় শনিবার হাসির বাবা ফয়জুল হক বাদী হয়ে মুরফিয়া বেগম ও তার বড় ছেলে রফিক খানের স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। সোনিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মুরফিয়াকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৮:০২ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০১৫, রোববার
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur