চাঁদপুর

এবার চাঁদপুরের করোনার জিন রহস্য গবেষণায় ড. সমীর সাহা

চাঁদপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের কাছ থেকে নমুনা (স্যাম্পল) সংগ্রহ করে এর জিন রহস্য (জিনোম সিকোয়েন্স) আবিষ্কারের গবেষণা করছেন বাংলাদেশের প্রথম করোনার জিন রহস্যের আবিষ্কারক ড. সমীর কুমার সাহা। চাঁদপুরের এই কৃতি সন্তান ও তার মেয়ে ড. সেজুঁতি সাহা ভূবনখ্যাত অণুজীব বিজ্ঞানী।

চাঁদপুরের করোনাভাইরাসের জিন রহস্য উন্মোচন করা গেলে এর মাধ্যমে চাঁদপুর তথা বাংলাদেশে ভাইরাসটির গতিপ্রকিৃতি ও ক্ষমতা সম্পর্কে জানা যাবে। জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাসটির রূপান্তরও বোঝা যায়। যা করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। যা কাজে লাগতে পারে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারেও।

চাঁদপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের জিন রহস্য আবিষ্কারের পর মাঠ পর্যায়ে গবেষণার অংশ হিসেবে চাঁদপুরের করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ নেন ড. সমীর সাহা।

এ জন্য প্রায় এক মাস আগে গবেষণার উপাত্ত হিসেবে চাঁদপুরের করোনায় আক্রান্ত জটিল পর্যায়ের ১০জন ব্যক্তির নমুনা চান ড. সমীর সাহা। বেশ কয়েকদিনের প্রচেষ্টার পর গত এক সপ্তাহ আগে ১০জনের নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে তার কাছে।

এখন এসব নমুনা গবেষণা করে এর জিন রহস্য উন্মোচনে কাজ করছেন ড. সমীর কুমার সাহা ও তার নেতৃত্বাধীন গবেষক দলের সদস্যবৃন্দ। জিন রহস্য আবিষ্কার করা সম্ভব হলে এটি হবে চাঁদপুরের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রের এক ঐতিহাসিক ঘটনা। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুরে কোনো মহামারি নিয়ে এটি দ্বিতীয় গবেষণা।

এর আগে চাঁদপুরের মতলবে কলেরা মহামারী নিয়ে গবেষণা হয়েছিল। আইসিডিডিআরবি পরিচালিত সেই গবেষণার সফলতা হিসেবে সারা বিশ্বের মানুষ কলেরা ও ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতার সহজ সমাধান ‌‌’ খাওয়ার স্যালাইন (ওরস্যালাইন)’ পেয়েছে। সেই গবেষেণা কেন্দ্রে এখনো অনেক রোগ নিয়ে গবেষণা চলমান।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা গবেষণার জন্য চাঁদপুরের ১০জন করোনায় আক্রান্ত রোগীর নমুনা চেয়েছিলেন। আমরা ইতিমধ্যে তা তার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।

উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স (জিন রহস্য) আবিষ্কার করেছে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই জিন রহস্য আবিষ্কারের গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান প্রখ্যাত অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা ও তার মেয়ে ড. সেজুঁতি সাহা। যা দেশ-বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এরপরও তাদের গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।

গত ১২ মে চাইল্ড রিসার্চ হেলথ ফাউন্ডেশন জানায়, বাংলাদেশে তারাই সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করেছে। এ জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে ভাইরাসটির গতি প্রকৃতি নির্ণয় করতে পারবেন গবেষকরা।

তখন প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধতন কর্মকর্তা লন্ডনে কর্মরত ড. সেজুঁতি সাহা গণমাধ্যমকে জানান, আমরা শুধুমাত্র একটি জিনোম সিকোয়েন্স বের করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি জানান, প্রথমবারের মতো করা জিনোম সিকোয়েন্সে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ভাইরাসটির সঙ্গে তাইওয়ান, সুইডেন, শ্রীলঙ্কা ও রাশিয়ার করোনাভাইরাসের সাদৃশ্য রয়েছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির হয়ে বাংলাদেশে কাজ করেন ড. সমীর সাহা। ড. সমীর সাহা ও ড. সেজুঁতি সাহা বাবা-মেয়ে। তারা দু’জনই চাঁদপুরের কৃতি সন্তান। চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য আগে থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই দুই বিজ্ঞানীর বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। অর্জনের খাতায় আছে আন্তর্জাতিক অনেক স্বীকৃতি।

বাংলাদেশে করোনার জিন রহস্য আবিষ্কার বিষয়ে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, জিনোম সিকোয়েন্স ভাইরাসটির গতি, প্রকৃতি ও ধরণ সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা দেবে। এর ফলে আমরা জানতে পারবো আমাদের এখানে ভাইরাসটি মোকাবেলায় কোন ধরনের ভ্যাকসিন বা ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন এর আগে ডেঙ্গুসহ বাংলাদেশের অন্যান্য রোগেরও জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করেছে।

ড. সমীর সাহা বাংলাদেশে মেনিনজাইটিস এবং নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী দুটি ব্যাকটিরিয়ার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন প্রয়োগে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন। এটি দেশের শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর প্রত্যক্ষ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। শিশু বিশেষজ্ঞের শীর্ষস্থানীয় গবেষক হিসেবে তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে আক্রমণাত্মক শৈশব রোগের উপর নজরদারি করে চলেছেন।

ড. সাহা ২০১৭ সালে ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজির গবেষণার জন্য আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি (এএসএম) পুরস্কার লাভ করেন। এই বছর তিনি ইউনেস্কো কার্লোস জে মাইক্রোবায়োলজিতে ফিনলে পুরস্কার পেয়েছিলেন।

ড. সমীর সাহার জন্ম নোয়াখালীতে হলেও পরবর্তীতে তার পিতা স্বপরিবারে চাঁদপুর চলে আসেন। তিনি চাঁদপুর সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তার বোন তৃপ্তি সাহা চাঁদপুর সরকারি কলেজের লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কর্মরত।

বার্তা কক্ষ, ২০ জুন ২০২০

Share