২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান সীমিত করে সংশোধিত জাতীয় কর্মসূচির অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনগণকে সচেতন এবং ব্যাপক জনসমাগম নিরুৎসাহিত করার অংশ হিসাবে এবছর গণহত্যা দিবস এবং স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান সীমিত করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ কর্মসূচি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর পর বৃহস্পতিবার ১২ মার্চ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অনুমোদিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ২৫ ও ২৬ মার্চ তারিখে জাতির উদ্দেশে্্য রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর বাণী সংবলিত ক্রোড়পত্র পত্রিকায় প্রকাশ। সারাদেশে ২৫ মার্চের রাতে নিহতদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা। সারাদেশে প্রতীকী ব্ল্যাক-আউট, ১ মিনিটের জন্য কেপিআই বা জরুরি স্থাপনা বা চলমান যানবাহন ব্যতীত ।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সীমিত সংখ্যক আমন্ত্রিত ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ; সব রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সীমিত আকারে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে।
সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন (ওইদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে)। এমনকি ২৬ মার্চ সারাদেশে জেলা ও উপজেলায় সীমিত উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে। কুচকাওয়াজ ও সমাবেশ স্থগিত থাকবে বলে জানানো হয়।
২৬ মার্চ রাতে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি,আধা-সরকারি,স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি ভবন বা স্থাপনাগুলোতে আলোকসজ্জা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলায় ৩১ বার তোপধ্বনির আয়োজন থাকবে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আলোচনা, সাংস্কৃতিক ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং বিদেশি পত্র-পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র ইংরেজিসহ প্রকাশও কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি বেতার বা টিভি চ্যানেলে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসভিত্তিক অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ, সাহিত্য সাময়িকী ও ক্রোড়পত্র বা পোস্টার প্রকাশ করা হবে। জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত বা প্রার্থনা করা হবে।
জাতীয় পর্যায়ে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকার পাশাপাশি দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
চট্টগ্রাম, খুলনা ও মোংলা বন্দর ও পায়রাবন্দর, ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, চাঁদপুর ও বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলোতে জাতীয় পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হবে।
জেলা ও উপজেলা সদরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার বিষয়ে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ স্থগিত করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ফুল ও উপহার পাঠানো যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করা হবে।
দেশের সব সরকারি শিশুপার্ক শিশুদের জন্য সকাল-সন্ধ্যা উন্মুক্ত রাখা এবং বিনা টিকিটে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা; ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে বিনা টিকিটে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
উন্নত খাদ্য ও মিষ্টি বিতরণ করার ব্যবস্থা নেয়া যায়। কোথায় করবেন,তা সংশ্লিষ্টরাই ঠিক করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনে অনুশাসন দিয়েছেন।
সংশোধিত কর্মসূচির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়,সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনগণকে সচেতন এবং ব্যাপক জনসমাগম নিরুৎসাহিত করার অংশ হিসেবে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন সীমিত করে সংশোধিত কর্মসূচি অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়,সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসের বিস্তার এবং সম্প্রতি বাংলাদেশেও ৩ জন রোগী শনাক্ত হওয়ায় সরকার জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি গণপরিবহনে চলাচলে সতর্কতা ও ব্যাপক জনসমাগম নিরুৎসাহিত করছে। এর অংশ হিসেবে ইতোপূর্বে গৃহীত কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন।
সংশোধিত কর্মসূচি যথাযথ মর্যাদায় পালন ও উদযাপনে নির্দেশ দিয়ে ইতোপূর্বে ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় গৃহীত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,১৩ মার্চ ২০২০