গণস্বাস্থ্যের কিট
কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আপনি কী করেন? আমার সরল উত্তর ম্যাঙ্গো পাবলিক। মানে আমজনতা। ক্ষুদ্র একজন সংবাদকর্মী আমি। হেড লাইনটা কী করলে আরও ভালো হবে, ইন্ট্রো কতটা ভালো হতে পারে কিংবা তথ্যগুলো আরও কতটা নির্ভরযোগ্য ও প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপন করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করাই আমার কাজ। বিজ্ঞানের জটিল বিষয় মাথায় ঢুকিয়ে মাথাটাকে হ্যাং করতে চাই না।
গণস্বাস্থ্যের কিট নিয়ে যা আলোচনা তা শুনলে মাথায় মনে হয় কীট থাকলেই ভালো হত। যদিও গুগল আমাদের অনেককিছুই সহজ করে দিয়েছে। কিট নিয়ে নানান আলোচনায় গুগল সার্চ করে ভালোকিছু তথ্য পেলাম। কিন্তু আমার মত আমজনতার সেদিকে না যাওয়াই ভালো।
“রাত ১২ টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন ধরেছেন। তাঁর নির্দেশে দূতাবাসের একজন লোক মন্ত্রীর ফোন পেয়ে নিজের গাড়িতে করে রি-এজেন্ট বাংলাদেশগামী বিমানে তুলে দিয়েছেন। এনবিআর শুল্ক ছাড় দিয়ে বা বাকী রেখে মালামাল ছাড় করে দিয়েছেন। তাও রাতের বেলায়। এনবিআরের চেয়ারম্যান নিজেই তাঁর দপ্তরের লোক ডেকে এনে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে কিটের একটা ব্যাচ নষ্ট হয়ে যায়। তা জানতে পারেন পল্লী বিদ্যুৎ এর চেয়ারম্যান। তিনি আশ্বাস দেন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের। করোনা রোগীর স্যাম্পল দরকার। আইইডিসিআরে আবেদন করেন। কিন্তু স্যাম্পল মিলছিল না। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হস্তক্ষেপে তারও অবসান হয়।” গণস্বাস্থ্যের কিট নিয়ে এসবই জানান ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিজে।
সরকারের এতগুলো বিভাগ এবং একজন মন্ত্রী এত আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা করেছেন নিশ্চয়ই তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সায় ছিল।
আমরা জানি জাফরুল্লাহ চৌধুরী সরকার বিরোধী লোক। সরকারের বিরুদ্ধে নানা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। তারপরও সরকারের তরফ থেকে এত আন্তরিক সহায়তা শুধুমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই করা সম্ভব। তিনি এর আগেও এরূপ উদাহরণ রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজনীতি, দল, আন্দোলন তুচ্ছ হয়ে গেছে সাধারণ মানুষকে রক্ষার কৌশলের কাছে।
এমনকী একজন মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত শুনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে খবর নিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। যদিও তিনি যাননি, এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই বলে।
কিন্তু সমস্যা বাঁধল করোনা পরীক্ষার কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা নিয়ে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ক্লার্কের কথা আমরা জানি। যিনি সামান্য বেতনে চাকুরী করেও দেশে-বিদেশে বাড়ি করেছেন। জানি না তার প্রেতাত্মারা এখনো রয়ে গেছে কিনা।
আগেই বলেছি আমি আমজনতার অংশ। বিজ্ঞানের মারপ্যাঁচে যেতে চাই না। সরকার যেসব রোগীর পরীক্ষা করবে পিসিআর পদ্ধতিতে সেই সব রোগীদের পরীক্ষা হবে ডট ব্লট পদ্ধতিতে। এরকম ১০০ বা ৫০০ ফলাফল যদি একই হয় তাহলে তাদের সাধুবাদ দিয়ে কিট নেয়া শুরু করুন। না হলে বলুন তোমাদের কিট কার্যকর নয়। এগুলোর মান উন্নয়ন কর। জানি না বিএসএমএমইউ কতদিন লাগাবে তাদের এই পরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে। কতদিনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনুমতি দিবে অথবা বাতিল করবে গণস্থাস্থ্যের কিট এর কার্যক্রম!
সামনেই সব খুলে দেয়া হচ্ছে। আজকেও সনাক্তের হার ২ হাজার ছাড়িয়েছে। ১০ হাজারেরও কম নমুনা পরীক্ষায় যদি ২ হাজার সনাক্ত ধরা পড়ে তাহলে বুঝতে হবে কী ভয়ানক অবস্থা আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে। এখন দরকার প্রচুর টেস্ট। আমাদের দেশের বাস্তবতায় যেটা এখনও সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাই গণস্বাস্থ্যের কিট নিয়ে পজিটিভ চিন্তা করার সময় এসেছে।
দ্রুত, এবং সব প্যাথলজীতে করা সম্ভব হবে ডট ব্লট পদ্ধতিতে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সব প্যাথলজীতে টেস্ট করা গেলে সহজেই সাসপেক্টকে সনাক্ত করে আক্রান্ত হলে নিরাপদে আইসোলেশনে পাঠানো যাবে।
ফলস পজেটিভ এবং ফলস নেগেটিভের যে ধারণা আমরা পেয়েছি তারও একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান করা সম্ভব বলেই মনে করি।
কিট আবিস্কার করেছেন ড. বিজন শীল। এছাড়া এই টিমের একজন বিজ্ঞানী যিনি নোবিপ্রবির তিনি আওয়ামী ঘরানার লোক বলেই জেনেছি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন (ছাত্র) ছোট ভাইয়ের কাছে।
বিজ্ঞান বিজ্ঞান-ই। আবিস্কার সেটা অনন্য বিষয়। যা অনেক মানুষকে বাঁচিয়ে দিবে। সেটা নিয়ে রাজনৈতিক পরিচয় টানাও বোকামি। বাঁচিয়ে দিবে এই অর্থে যে অনেক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আগেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেটেড করে ফেলা যাবে।
এখানে কেউ সফল বা ব্যর্থ নয়। সফল হলে বাংলাদেশ সফল হবে। সারাবিশ্বে দেশের নাম ছড়িয়ে পড়বে। আতঙ্ক থেকে রক্ষা পাবে এদেশের মানুষ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ইতোমধ্যেই প্রমান করেছেন এদেশের মানুষের চেয়ে বড় আপনার কাছে আর কিছু নেই। তাই আপনিই আশা করি গণস্বাস্থ্যের কিট এর ব্যাপারে একটা দ্রুত সিদ্ধান্ত দিবেন।
লিখেছেন : রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ,
মফস্বল সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের প্রধান
বার্তা সংস্থা, ইউএনবি