শেরপুরের ঝিনাইগাতীর রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের মোক্তারা পারভীন ও কামরুন্নাহার পরস্পর খালা-ভাগ্নি। অভাব-অনটনের সংসারে লড়াই করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে আঁধার ঘরে মুক্তার আলো ছড়িয়েছে তারা।
ঢাকা বোর্ডের অধীন ঝিনাইগাতীর মালিঝিকান্দা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ ফল অর্জন করেছে । মোক্তারা রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের মকবুল হোসেনের মেয়ে। আর কামরুন্নাহার একই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছের মেয়ে। মোক্তারা খালা আর কামরুন্নাহার ভাগ্নি। সমবয়সী এ খালা-ভাগ্নি ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্রতা।
মোক্তারার বাবা মকবুল পেশায় দিনমজুর। মা মমেলা বেগম গ্রামে নকশীকাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেন। অপরদিকে কামরুন্নাহারের বাবা আব্দুল কুদ্দুছ রিকশাচালক। মা মনিকা বেগম দর্জির কাজ করেন। গরীব ঘরে জন্ম নেয়া এ দু’মেধাবী শিক্ষার্থীর চোখে-মুখে এখন নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠছে। মাধ্যমিকে ভালো ফল করায় আত্মীয়-স্বজন সবাই খুশি হয়েছেন।
কিন্তু দুঃশ্চিন্তা তাদের পিছু ছাড়ছে না। উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো কলেজে ভর্তি,পড়াশোনার খরচ জোগানো ইত্যাদি নিয়ে চিন্তিত এ দ’মেধাবী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা।
মোক্তারার মা মমেলা বেগম বলেন, মোক্তারার বাবা দিনমজুরের কাজ করে অনেক কষ্টে সংসার চালান। অনেকটা দিন এনে দিন খাওয়ার অবস্থা। অভাব-অনটনের সংসার তাঁদের। মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান। তবে তাঁদের তেমন সামর্থ নেই। একই অবস্থা তাঁর মেয়ের জামাই আব্দুল কুদ্দুছেরও। তাঁদের কারোরই বসতভিটা ছাড়া কোন ধানী জমি নেই। কায়িক পরিশ্রমের ওপরই সংসার চলে। দু’টি পরিবারই চরম আর্থিক কষ্টের মধ্য দিয়ে চলছে। তাই সমাজের সহৃদয়বান ব্যক্তিরা তাঁর মেয়ে মোক্তারা ও নাতনি কামরুন্নাহারের পড়াশোনার জন্য এগিয়ে আসলে উপকৃত হবে তাঁরা।
মোক্তারা পারভীন ও কামরুন্নাহার জানায়, তাদের দু’জনের বাবাই গরীব। তাঁদের আয় দিয়ে সংসারই চলে না। তাই খালা আর ভাগ্নি মিলে গ্রামের নারীদের দেয়া নকশীকাঁথা সেলাইয়ের কাজ করে কিছু বাড়তি উপার্জন করেছে। সে টাকা দিয়েই তারা দশের সহযোগিতায় এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। দু’জনেরই আশা ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে দেশের গরীব মানুষের সেবা করার। কিন্তু তাদের স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্রতা। তাই তাদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখার জন্য সকলের সহযোগিতা চায় তারা ।
প্রধানশিক্ষক মো.রবিউল ইসলাম বলেন, গরীব অথচ মেধাবী মোক্তারা ও কামরুন্নাহারকে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয়েছে। তারা প্রত্যাশিত ফল অর্জন করে আমাদের গর্বিত করেছে। খালা-ভাগ্নি দু’জনেই খুব মেধাবী। সমাজের সহৃদয়বান ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে তাদেরকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হলে তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হবে।
নিউজ ডেস্ক
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯: ০০ পিএম, ১৫ মে ২০১৭, সোমবার
এজি