Home / সারাদেশ / খাটিয়া জোটেনি : অ্যাম্বুলেন্সেই জানাজা
খাটিয়া জোটেনি, করোনাভাইরাসে , করোনাভাইরাসে

খাটিয়া জোটেনি : অ্যাম্বুলেন্সেই জানাজা

করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির মরদেহ খাটিয়ায় তুলতে দেয়া হয়নি; এমনকি বাঁশ-খুঁটিও কাটতে দেয়নি এলাকাবাসী। বলা হলো, এই মৃত্যু নাকি পাপের ফসল। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রামে এ অমানবিক ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রফি উদ্দিনের ছেলে গোলাম সরোয়ার মোর্শেদ (৫২) দুই সন্তানের জনক। বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তিনি। দুই বছর আগে প্যারালাইজড হন মোর্শেদ। কয়েক মাস আগে সুস্থ হন।

এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ২৯ জুন শৈলকুপায় আসেন তিনি। পরে পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। রিপোর্ট পজিটিভ আসায় ১ জুলাই ভর্তি হন কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালে। পরে অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ভর্তি হন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

শনিবার ৪ জুলাই দুপুরে ওই হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতে তার মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সযোগে শৈলকুপার বাড়িতে আনা হয়। মরদেহ বাড়িতে এনে দাফন কাফনে ভোগান্তিতে পড়েন স্বজনরা। গ্রামবাসীর বাধায় মেলেনি খাটিয়া। এমনকি দাফনের জন্য বাঁশ-খুঁটি কাটতেও বাধা দেয় স্থানীয়রা। গ্রামবাসীর ভাষ্য, এটি মৃতের পাপের ফল।

এ অবস্থায় গভীর রাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার আব্দুর রাজ্জাকের তত্ত্বাবধানে কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্সে মৃতের জানাজা পড়ানো হয়। পরে দাফন-কাফন সম্পন্ন করা হয়।

মৃতের মেয়ে সুমাইয়া বলেন, ‘গ্রামবাসী বলল- এটি আব্বুর পাপের ফসল। আব্বু নাকি কোনো একটা পাপ করেছেন। যার জন্য করোনায় মরে পাপের শাস্তি পেয়েছেন। এজন্য জানাজা আর দাফন-কাফনে অংশ নেয়নি গ্রামবাসী। এমনকি কবরের জন্য বাঁশ-খুঁটিও কাটতে দেয়নি তারা।’

সরোয়ার মোর্শেদের স্ত্রী ফারজানা খাতুন বলেন, করোনাভাইরাস তো বৈশ্বিক মহামারি। মৃতদের জানাজায় খাটিয়া দেবে না, কেউ আসবে না, কবর খুঁড়তে দেবে না, এ কোন কুসংস্কার আর ভীতিকর সমাজে বসবাস করছি আমরা। প্রতিবেশীর এমন ব্যবহারে মন ভেঙে গেছে আমাদের।

কেন খাটিয়া জোটেনি এ বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি সরকারিভাবে গঠিত করোনায় মরদেহ দাফন কমিটির শৈলকুপা শাখার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

শৈলকুপা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। গ্রামের মানুষের মাঝে এখনও ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। করোনায় মৃত্যুর তিন ঘণ্টা পর মরদেহে জীবাণু থাকে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জানাজা, দাফন-কাফন সবকিছুই করা যায়।

বার্তা কক্ষ,১০ জুলাই ২০২০