Home / সারাদেশ / কড়া নিরাপত্তায় কুমিল্লার ঈদ বাজার
Nil-Palish

কড়া নিরাপত্তায় কুমিল্লার ঈদ বাজার

ঈদের বাজারে কেনাকাটা বেশ জমে উঠেছে। কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি কুমিল­ার বিভিন্ন এলাকা পানিতে সয়লাব। ঘরথেকে বের হওয়াই দুষ্কর। এতোসব ঝক্কি-ঝামেলার পরও ঈদের দিনটি রাঙিয়ে তুলতে এক শপিংমল থেকে আরেক শপিংমলে পছন্দের পোশাকটি খুঁজে বেড়াচ্ছেন ক্রেতারা।
বিক্রেতারা জানান, রোজার মাঝামাঝি থেকে বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। প্রতিদিনই চলছে ক্রেতাদের উৎসবমুখর কেনাকাটা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে কুমিল­ার অভিজাত বিপণী বিতান গুলোকে সাজানো হয়েছে বাহারি রঙে। অনেক মাকের্ট আর দোকানে ঘোষনা করেছে র‌্যাফেল ড্র।
নগরীর অভিজাত শপিংমল সাত্তার খান কমপ্লেক্স, খন্দকার হক টাওয়ার, ময়নামতি গোল্ডেন টাওয়ার, আনন্দ সিটি সেন্টার, কুমিল­া টাওয়ার, গণি ভূঁইয়া ম্যানশন, ইস্টার্ন এয়াকুব প্লাজা, সাইবার ট্রেড, হোসনেআরা ম্যানসন, নূর মার্কেট, হিলটন টাওয়ার ও নগরীর নজরুল এভিনিউতে আড়ং, রঙ, বিশ্বরঙ, ইনফিনিটি, ম্যানস্ ওয়ার্ল্ডের সাদাকালো, অঞ্জনস, লাকসাম রোডের ইজি, ক্যাটসআই শো-রুমেও হরদম চলছে কেনাকাটা।

এবছর নগরীর শপিংমল ও বিভিন্ন মার্কেট, নামি-দামি ব্র্যান্ডের বেশকিছু শো রুম চালু হওয়ায় এবার কেনাকাটা অনেকটাই ব্র্যান্ড নির্ভর হয়ে উঠেছে। এদিকে বরাবরের মতো এবারও ভারত সীমান্তবর্তী এ জেলার ফ্যাশন সচেতন তরুণীদের পোশাকের জায়গাটি অনেকাংশে দখলে রেখেছে ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক।
অভিজাত বিপণি বিতানগুলোতে শোভা পাচ্ছে; মেয়েদের লেহেঙ্গা, লং ফ্রগ, স্কাট টপস, থ্রি পিস, জিন্টস প্যান্ট, জামদানি শাড়ি, বেনারশি, কাতান, সিল্ক, জর্জেট জয়পুরি, ছেলেদের নবাবী পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, ফতুয়া, টি-শার্ট, প্যান্ট এবং ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য রয়েছে বাহারি ডিজাইনের তৈরি পোশাক।
এ ছাড়া তৈরি পোশাকের সঙ্গে জুতা, চুড়ি, কসমেটিক্স ও বিভিন্ন গহণার দোকান গুলোতেও ভিড় চোখে পড়েছে। সেই সঙ্গে টেইলার দোকান গুলোতেও অনেক ভিড় বাড়ছে। রয়েছে ছেলেদের বাহারি ডিজাইনের শার্ট, অরন্য পাঞ্জাবি, নবাবী পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, ফতুয়াসহ বেশ কিছু বৈচিত্র এসেছে।

দোকানিরা জানান, কসমেটিক্স সামগ্রীও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা জানান, বিগত বছর গুলোর তুলনায় এ বছর কাপড়ের দাম হাতের নাগালেই রয়েছে।
দেশিয় ফ্যাশনের প্রতি তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করতে নগরীর নজরুল এভিনিউতে আড়ং, ফড়িং, রঙ, কান্দিরপাড়ের ম্যানস্ ওয়ার্ল্ড, বিশ্বরঙ, অঞ্জনস, সাদাকালো, বাদুরতলায় সেইলর, ইনফিনিটি, ইজি শো-রুমে নানা ডিজাইনের পোশাক প্রদর্শন করা হয়েছে। অন্যান্য মার্কেটের মতো এসব শো-রুমেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
সাত্তারখান মার্কেটের ব্যবসায়ী ফ্যাশন ডট কমের আহসান হাবিব জানান, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি পোশাক বিক্রি হচ্ছে। দাম হাতের নাগালে থাকায় ক্রেতারা কেনাকাটা করছেন। এবছর গ্রীষ্মের খড়তাপের কথা মাথায় রেখে মানুষ বেশির ভাগ সুতী কাপড়ের দিকে ঝুক। তিনি বলেন, মধ্যরাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে হচ্ছে, ক্রেতাদেও চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে। ভিড় চাঁদরাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন তারা।

এদিকে প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখে পোষাক নির্বাচন করছেন অনেকে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে রয়েছে এমন প্রবণতা। কিরণমালা, পাখি, বাজিরাও মাস্তানির এবারের ঈদে তরুণীদের পোশাকের বাজার মাতাচ্ছে হুররাম সুলতান ও বাহুবলী-২।

বিক্রেতারা বলছেন, সিনেমা, সিরিয়াল দেখে ক্রেতাদের মধ্যে এধরনের পোশাক পরার প্রবণতা থেকেই নামকরণের বিষয়টি মাথায় রাখা হয় পোশাক তৈরি ও বিক্রির ক্ষেত্রে। বাচ্চাদের পোশাকের ক্ষেত্রেও এই নামগুলো বেশি ব্যবহার হচ্ছে। তারা বলেন, নাম যাই হোক এবার ঈদে লেহেঙ্গা, গাউন আর ফোর টাচের চাহিদা বেশি। ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে এসব গাউনের দাম উঠেছে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

ঈদে পোশাকের পাশপাশি কসমেটিকস, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দোকানেও ভিড় জমাচ্ছে ক্রেতারা। এছাড়া ছেলেদের পোষাকের দোকানগুলোতে ভিড় জমছে বেশ। বিশেষ করে পাঞ্জাবীর দোকানগুলোতে ভিড় করছে তরুণরা। নগরীর শপিংমল গুলো ঘুরে দেখা যায়, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রসাধনী সমাহার দোকান গুলোতে। অলংকার দোকানগুলোতে ভীড় পরিলক্ষিত হয়েছে। সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত বিরতিহীন চলে কেনাকাটা।

ভারতীয় পোশাকের দাপটের মাঝেও প্রতিযোগিতায় টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী কুমিল­ার খাদি পোশাক সামগ্রী। খাদি বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য প্রদীপ কুমার রাহা কান্তি বলেন, কুমিল­ার ঐতিহ্যবাহী খাদিও দোকানগুলোতেও এ বছর ঈদ উপলক্ষে নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবী, ফতুয়া এবং মেয়ে ও শিশুদের জন্য আনা পোশাক বিক্রি ক্রমেই বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া পাকিস্তানি ও কাশ্মিরী কিছু নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।

এদিকে নিউমার্কেটের আন্ডার গ্রাউন্ডে হকার্স মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলোও সমানতালে ব্যস্ত। স্বল্প আয়ের লোকজন কেনাকাটা করছেন সেখানে।
এবছর ব্যপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে মার্কেটগুলোতে।

কুমিল­ার পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ঈদ উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মার্কেটগুলো সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও সাদা পোষাকে পুলিশের নজরদারি রয়েছে।

প্রতিবেদক- জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, কুমিল্লা

Leave a Reply