ক্যারিয়ার শব্দটি শুনতেই ভালোলাগে। আর চোখ বন্ধ করে স্বপ্নের জগতে ভিবিন্ন ক্যারিয়ারের সিংহাসনে বসতে সে যে কি মজা! লিখে তা বুঝানো যাবে না। কিন্তু ক্যারিয়ার অর্জন বেশ কঠিন এবং অন্তহীন এক সাধনার ফল।
তার আগে জেনে নেয়া যাক ক্যরিয়ার অর্ধ কি? হাতের কাছেই Oxford Dictionary খুললেই আমরা পেয়ে যাবো ক্যারিয়ার অর্থ দ্রুতগতি, বেগ, জীবনের ধারা বা অগ্রগতি, জীবিকা অর্জনে উপায় উপায় বা বৃত্তিকেই বুঝি।
কিন্তু এখানে একটি কথা বলে নেয়া ভালো, জীবন বলতে যদি আমরা শুধু এই পার্থব জীবনকে বুঝি, তবে ছোট বেলার মতো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিষ্টার হওয়া বা অত্যাধিক সাহসীর মতো প্রেসিডেন্ট হওয়াকে জীবনের লক্ষ্য বানানো যায়।
কিন্তু জীবন যদি আখেরাতকে নিয়েই হয় চিরন্তর, তবে তো জীবনের লক্ষ হওয়া উচিত আখিরাত কেন্দ্রিক। তবে আখিরাত হবে দুনিয়ার কর্মের ভিত্তিতেই। সে হোক সফলতার জান্নাত অথবা ব্যর্থতার জাহান্নাম।
আমরা মহাগ্রন্হ আল কুরআনে পাই, আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন দুনিয়াতে খিলাফতের দায়িত্ব আর এ দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালনের উপর নির্ভর করেছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। সুতরাং আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য খিলাফতের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
আর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ব্যারিস্টার হওয়া হবে সে মূল লক্ষ্য অর্জনের উপলক্ষ। তবে আধুনিক জাহেলিয়াতের মোকাবেলার জন্য ক্যারিয়ারের বিকল্প নেই।
সুতরাং সঠিক নিয়মের মাধ্যমে বস্তুগত বা দুনিয়ার ক্যারিয়ার অর্জনেও হতে পারে দ্বীন প্রতিষ্ঠার অন্যতম ভিত্তি । অর্থাৎ আমাদের হতে হবে ইঞ্জিনিয়র খুররম মুরাদ ওগুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের মতো ইঞ্জিনিয়ার, মাহাতির মুহাম্মাদের মতো ডাক্তার, হাসান আল বান্না, সাইয়েদ কুতুব আর অধ্যাপক বুরহান উদ্দিন রাব্বানির মতো শিক্ষাবিদ। আব্দুল কাদের কুতুব, আব্দুল কাদের আওদা আর ড. হাসান তুবারির মতো আইনবিদ। মাওলানা মওদুদি, ইমাম খোমেনির মতো ধর্মতত্ত্ববিদ।
আর এ প্রস্তুতি শুরু হোক আজ থেকেই।
কারণ শেক্সপিয়ারের কথাটি অনেক মূল্যবান “i waste time and now time-wastes me” এমন কি ডিকেন্স বলেছিলেন, বড় হতে হলে সর্বপ্রথম সময়ের মূল্য দিতে হবে।
আর সেই ছোট বেলা থেকে আমাদের পড়া সেই সুন্দর কথাটি তো কখনও ভুলবো না তা হচ্ছে “time and tide wait for none” তবে ক্যারিয়ার অর্জনে একটি সুস্পষ্ট ও সুউচচ টার্গেট মানুষের সাধনা ও গতিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। মুলত এর অভাবেই আমরা নিজেকে একটি সুন্দর পর্যায়ে উন্নিত করতে পারি না। সে সময় পারস্য সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বব্যাপী এক অপরাজয় শক্তি আর মুসলমানরা ছিল হাতেগোনা সামান্য ক’জনার মিলিত ঈমানি শক্তি, ঠিক সেই সময়ই মুসলিম কর্তৃক পারস্যের পদানত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আল্লাহর রাসূল( স.)।
এটি এক দিকে যেমন কাফেরদের হাসাহাসির কারণ হয়েছিল, অপরদিকে মুসলমানদের দীপ্ত সাহসী ও পরিশ্রমী করেছিল।আর এভাবেই পরবর্তীতে পারস্য বিজয় সম্পন্ন হয়েছিল।
এক কাঠুরিয়ার ছেলে সুদৃঢ় সপ্ন দেখেছিল সে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবে। সাধনার বলে তিনিই হয়েছিলেন আব্রাহাম লিংকন। সুতরাং ক্যারিয়ার অর্জন বা মৌলিক সাফল্যের জন্য একটি সুস্পষ্ট ও সুউচচ টার্গেট নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্ববিজয়ী এক অনন্য বীর জুলিয়াস সিজার বলতেন, অধিকাংশ মানুষ বড় হতে পারে না। কারণ সে সাহস করে আকাশের মত সুউচ্চ টার্গেট ঠিক করে সে দিকে তাকাতে পারে না। আর একটি কথা না বললেই নয় সেটি হচ্ছে, অদম্য পরিশ্রম “industry is the mother of good luck.” ছোটবেলায় পড়া এ কথাটি কি আমরা নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে পারিনা? জাপান বিশ্বের এক নম্বর শিল্পোন্নত দেশ, কানণ জাতি হিসেবে তারা অত্যান্ত পরিশ্রমী, এমনকি প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার মানুষ অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে মারা যায়।
মৃত্যুর কথা শুনে চমকে উঠলে? অথচ বাংলাদেশে প্রতি বছর হয়তোবা অলসতার কারণে কয়েক লাখ লোক মারা যায়। সুতরাং পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।
আল্লাহ বলছেন, তিনি পরিশ্রমের ভেতর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।
রাসূল( স.)স্বয়ং পঞ্চান্ন বছর বয়সে রমজান মাসে সত্তর মাইল পাহাড়ি রাস্তা হেঁটে বদর যুদ্ধ পরিচালানা করেছিলেন।
বৈজ্ঞানিক টমস এডিসন বলেছেন, আমি সমস্ত জীবনে একদিনেও কাজ করিনি। অথচ প্রত্যহ ষোল থেকে আঠার ঘন্টা তিনি কাজ করেছেন কিন্তু যেহেতু গবেষণা ছিল তার কাছেখেল তামাশার মতো। সুতরাং তিনি পরিশ্রন্ত হননি।
নোবেল বিজয়ি বার্নার্ডশ বলেছেন ‘আমি কাজ করি বাবা যেমন মদ খেতেন ঠিক তেমনিভাবে, এই আমার স্নায়ু রোগ।’ আর তাই তিনি পরিশ্রান্ত হননি। সুতরাং কাজকে বানাতে হবে খেলার মতো মজাদার বিষয়। আর লেখা পড়ার ক্ষেত্রে একই কথা।
এ প্রসঙ্গে flooper-এর বক্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ, তিনি বলেছেন, i slept and dreamed that life was beauty i wake and found that life wad duty.
লেখক- মাও. শামছুদ্দিন মাহমুদ ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ০৮ : ০০ এএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ রোববার
এইউ