Home / জাতীয় / কোন্দল মিটিয়ে নৌকায় ভোট চাইতে হবে
Comdeka-hasina
ফাইল ছবি

কোন্দল মিটিয়ে নৌকায় ভোট চাইতে হবে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা প্রচার করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ঐক্য বজায় রাখতে হবে, যেন নৌকার বিজয় হয়। ওই রাজাকার-খুনি, এতিমের টাকা যারা আত্মসাৎ করে, যারা মানি লন্ডারিং করে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে, এদের বিরুদ্ধে প্রচার করবেন। আমরা যে উন্নয়নগুলো করেছি, সেটা গ্রামে-গঞ্জে মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে। আপনাদের প্রত্যেককে এখন থেকে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে হবে।’

দলীয় কোন্দল মেটানোর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে কোনো রকম দলীয় কোন্দল যেন না হয়। যেসব জায়গায় ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে, খুব দ্রুত সেগুলো মিটিয়ে ফেলতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নিজেদের গ্রুপ করতে গিয়ে যারা মানুষ হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে তাদের টানাটানি না করে নতুন নতুন কর্মী সৃষ্টি করতে হবে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগকে আরো সংগঠিত করতে হবে। সংগঠনের জনসমর্থন বাড়াতে হবে।’

জেলা ও থানার দলীয় নেতাদের পর দ্বিতীয় পর্যায়ের এ বিশেষ বর্ধিত সভায় ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সভায় সভাপতি শেখ হাসিনার সূচনা বক্তৃতার পর ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা মাঠের চিত্র তুলে ধরেন।

চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার প্রতিনিধি নিয়ে ওই সভার অয়োজন করা হয়। এতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, উল্লিখিত চার বিভাগের অন্তর্গত সব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৃণমূলের নেতাদের দিকনির্দেশনা দিতেই এই সভার আয়োজন করা হয়। আগামী ৭ জুলাই ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বসবেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

বর্ধিত সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদ দমন করতে সক্ষম হয়েছি। তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। তৃণমূলের মানুষ অভিভাবক, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, প্রশাসন, পুলিশ, আইন-শৃঙ্খলা সংস্থা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে বলেই জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এখন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, মাদকের বিরুদ্ধে এ অভিযানে আপনাদের সহযোগিতা চাই। ঠিক যেমন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, সেভাবে মাদকের বিরুদ্ধেও সবাই মিলে অভিযান চালাবেন এবং সকলকে বোঝাবেন।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন নৌকা মার্কায় হয়। খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার বিজয় হয়েছে। নৌকা ভাষার অধিকার দিয়েছে, স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, দারিদ্র্যমুক্ত করে যাচ্ছে, মানুষের উন্নয়ন করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে। আমাদের উন্নয়নের কথাগুলো আপনারা প্রতি গ্রামে প্রতি ঘরে ঘরে প্রতি পরিবারের কাছে পৌঁছে দেবেন, সেটাই আমি চাই।’ নির্বাচনী প্রচারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মানুষকে বলতে হবে। কারণ মানুষ সুখ পেলে দুঃখের দিনের কথা ভুলে যায়। এই সুখটা পেল কিভাবে সেটা তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে। তাদের বারবার বলতে হবে, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় এবং পরিবর্তন হবে। নৌকা মার্কায় মানুষ যেন ভোট দেয় তার জন্য আপনাদের কাজ করতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা সব সময় তৃণমূলের মতামত নিয়ে মনোনয়ন দিয়ে থাকি। সকলের মতামত নিয়েই আগামী দিনে মনোনয়ন দেব। আমরা জরিপ করে যাচ্ছি। আপনাদের ঐক্য বজায় রাখতে হবে। কাকে নমিনেশন দেব সেটা বড় কথা নয়, নৌকা মার্কায় আপনারা ভোট চাইবেন। সেভাবেই আপনারা প্রত্যেকের ঘরে ঘরে যাবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি ইউনিয়ন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিটি গ্রামকে আমরা শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এবারও আমরা ইউনিয়ন এবং কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে সব থেকে বেশি বাজেট দিয়েছি। এগুলো যেন সুষ্ঠুভাবে ব্যবহৃত হয় সেটা আপনারা দেখবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নে এবার বাজেটে ব্যাপক টাকা বরাদ্দ রেখেছি। আমরা চাই প্রতিটি টাকা যথাযথভাবে কার্যকর করে, আপনাদের যার যার এলাকার উন্নয়নটা আপনারা নিশ্চিত করবেন। বাংলাদেশটা যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, এর গতিটা যেন ঠিক থাকে, সেটাই আপনারা দেখবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের উচ্চপর্যায়ের নেতারা অনেকে মাঝেমধ্যে ভুল করে, এটা নতুন কিছু না। ৬ দফা দেওয়ার পরে অনেকে ৮ দফায় গিয়েছিল। আমার অভিজ্ঞতা আছে বলেই আমি বলি। আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাধ্য হলো নির্বাচন দিতে।’

গাজীপুরের মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাক্ষাৎ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন গাজীপুরের নবনির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও কাউন্সিলররা। দলের বিশেষ বর্ধিত সভার আগে গাজীপুরের নেতাদের সঙ্গে বসেন শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলেই যে বিজয় অর্জিত হয় তা আবার প্রমাণিত হয়েছে। খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিজয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলে এবার কোনো বিভেদ ছিল নেই। এই বিজয়ই ভবিষ্যতে বিজয়ী হওয়ার পথ দেখাবে। এই ধারা বজায় রাখতে পারলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে পারবে।

Leave a Reply