জাতীয়

কে এই প্রিয়া সাহা? তার নালিশকে সমর্থন করে যা বললো হিন্দু খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ

বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানরা নিরাপদ নয়। নিজ দেশে তাদের নিরাপদে বসবাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সহায়তা চেয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা ওরফে প্রিয়া বালা।

সামাজিক মাধ্যমে এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর দেশব্যাপী যখন সমালোচনার ঝড়, তখন এই ব্যাপারে কথা বলেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

তিনি বলেন, ‘প্রিয়া সাহার বক্তব্য তো প্রিয়া সাহারই। আমাদের সংগঠন এরকম কোনো বক্তব্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কাউকে তো বলে নাই যে, তুমি এভাবে বলবা। অতএব প্রিয়া সাহার মত প্রিয়া সাহারই।’ তবে তিনি বলেন, ‘প্রিয়া সাহার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, এ অভিযোগ সত্য। তার ঘরবাড়ি পুড়ানোর ঘটনা দুই-এক মাস আগের।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রিডম অব রিলিজিয়ান নামে একটি সম্মেলন হয়। এতে আমাদের ঐক্য পরিষদের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। সেই প্রতিনিধি দলে প্রিয়া সাহা ছিলেন না।’

তাহলে প্রিয়া সাহা কীভাবে সেখানে গেলেন? প্রশ্নের উত্তরে রানা দাশগুপ্ত বলেন ‘প্রথম কথা হচ্ছে, ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে উনাকে পাঠানো হয়নি। তিনি কীভাবে গেলেন, এটা মার্কিন দূতাবাস বলতে পারবে।’

গত ১৬ জুলাই ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ১৬টি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।’

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের তিন সদস্যের কেউ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেননি দাবি করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘তারা যদি ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতেন, তাহলে তো প্রিয়া সাহার মতো আসত, ভাইরাল হতো। ভাইরাল যখন হয় নাই, তখন তারা দেখা করেন নাই।’

ট্রাম্পের কাছে এমন অভিযোগ করায় প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, তা পরিষ্কার করেননি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।

সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না- জানতে চাইলে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাদের তো কিছু নিয়ম আছে। প্রিয়া সাহাকে তো প্রথমে দেশে আসতে হবে। তারপরে না সাংগঠনিক ব্যবস্থা। সাংগঠনিক ব্যবস্থার আগে যে কথা আসে, তা হলো প্রথমে শোকজ করতে হয়। আমাদের নিয়ম হচ্ছে, কারও বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় না, যতক্ষণ তাকে শোকজ করা না হবে।’

তাহলে প্রিয়া সাহা দেশে আসলে শোকজ করবেন? এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমি আপনাকে বলিনি। এটা তো আমাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের অংশ। শোকজের সিদ্ধান্ত নিতে হলে সভা করতে হবে না? সভা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর এখন তো বাজে সকাল ৯টা। তাছাড়া আমি নিজেই অসুস্থ, ঘর থেকে বের হতে পারছি না। আমার একটা অপারেশন হবে কালকে (রোববার)।’

এদিকে প্রিয়ার আরেকটি পরিচয় মিলেছে, তিনি একটি মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্বও পালন করছেন। ‌‌মাসিক ‘দলিত কণ্ঠ’ নামের ওই পত্রিকায় প্রিয়া সাহার নাম ‘প্রিয়া বালা’ বিশ্বাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রিয়া সাহা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক।

গেল জুন মাসের ১২ তারিখে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাহিদ রসুল পত্রিকাটি প্রকাশের ঘোষণাপত্র প্রদান করেন। মাসিক পত্রিকা হলেও এর অনলাইন ভার্সন রয়েছে। এতে সংখ্যালঘু এবং দলিত সম্প্রদায়ের খবর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।

পত্রিকার ঠিকানা দেয়া হয়েছে বাড়ি-১১, সড়ক ৪, ধানমন্ডি। উষা আর্ট প্রেস থেকে এটি প্রকাশিত হচ্ছে। ঘোষণাপত্রে শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন অ্যাডভোকেট আল আমিন রিজভী।

পত্রিকার ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রবিরোধী সংবাদ না ছাপানোর অঙ্গীকার করলেও সম্পাদক প্রিয়া সাহা নিজেই রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বক্তব্য রেখেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।

গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ১৬টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কথা বলার সুযোগ পান।

তিনি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ‘শারি’-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্বরত । তার গ্রামের বাড়ী পিরোজপুর জেলার চরবানিরীর মাটিভাঙ্গা নাজিরপুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন প্রিয়া। রোকেয়া হলে থাকতেন তিনি।

সে সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ‘মহিলা ঐক্য পরিষদ’এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে ‘শারি’ এনিজিও সংস্থার মাধ্যমে প্রিয়া নিজ এলাকার দলিত সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করেন।

তার স্বামী মলয় সাহা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক। কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রিয়া সাহার দুই মেয়ে বসবাস করছেন। কিছুদিন পূর্বে সেখানে যান প্রিয়া সাহা।

প্রসঙ্গত, পিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ড্রোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেছেন, বাংলাদেশে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।’ ভিডিওতে দেখা গেছে, এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতির সাথে এই নারীর সঙ্গে হাত মেলান।

প্রিয়া সাহা আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার কথোপকথন প্রকাশ পেলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। নিন্দার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

বার্তা কক্ষ
২০ জুলাই ২০১৯

Share