Home / কৃষি ও গবাদি / কৃষির আধুনিকায়নে আসছে মেগা প্রকল্প
Agri-tools-...
প্রতীকী ছবি

কৃষির আধুনিকায়নে আসছে মেগা প্রকল্প

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারীতে দেশের স্বাস্থ্য খাতের নাজেহাল অবস্থা ফুটে ওঠার পাশাপাশি কৃষি খাতের শক্তিশালী অবস্থানও দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে সরকার কৃষি উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে কৃষির আধুনিকায়নে মেগা প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ শীর্ষক নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দেশের সব উপজেলায় এটি বাস্তবায়ন করবে। এটি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে এবং ব্যবসায়িকভাবে অধিকতর লাভজনক ও বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকে টেকসই করে তোলা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার ১৪ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি উঠছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড.মো.আবদুর রাজ্জাক রোববার যুগান্তরকে বলেন,‘ সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করছি কৃষিতে শ্রমিক পাওয়া যায় না। মৌসুমে ব্যাপক শ্রমিক সংকটে উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। এসব দিক বিবেচনা করে আমরা কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের দিকে নিয়ে যেতে চাইছি। এছাড়া এটি যুগের চাহিদা। এতে উৎপাদন খরচ যেমন কমবে, তেমনি সংগ্রহ পর্যায়ে শস্যের অপচয়ও কমে আসবে।’

সূত্র জানায়, একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চলতি জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহার বৃদ্ধি করে ফসলের ১০-১৫ শতাংশ অপচয় রোধ করা যাবে।

এছাড়া চাষাবাদে ৫০ শতাংশ সময় এবং ২০ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় করা যাবে। পাশাপাশি সমন্বি^ত সব জাতীয় ফসল আবাদ করে কৃষি যন্ত্রপাতির ৫০ শতাংশ, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা যাবে। এছাড়া যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে পোস্ট হারভেস্ট ব্যবস্থাপনায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য কমানো সম্ভব হবে। এসব দিক বিবেচনা করে কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণের জন্য সরকারি অর্থায়নে ‘খামার যান্ত্রিকীকরণ-প্রথম পর্যায়’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।

২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুনের মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি বাস্তবায়িত হয়। এরপর ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়ন করা হয়। সে সময় ব্যয় করা হয়েছিল ৩৩৯ কোটি টাকা।

প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের সফলতা, ধারাবাহিকতা এবং করোনার পরিস্থিতিতে আরও বড় পরিসরে এখন তৃতীয় পর্যায় গ্রহণ করা হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ও বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ড.শামসুল আলম বলেন, ‘করোনার মতো ভয়ংকর মহামারীতে শিল্প ও সেবা খাত যখন প্রায় বন্ধ ছিল তখন উৎপাদনশীল খাত হিসেবে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যদিয়ে কৃষির সক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। তাই কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করতে হলে যান্ত্রিকীকরণ অপরিহার্য। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ লাগবেই। সে হিসেবে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ব্যাপক উদ্যোগ খুবই ভালো। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এ উদ্যোগকে টেকসই করতে হলে বেসরকারি উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যন্ত্রপরিচালনার কাজে লাগাতে হবে। এতে উত্তম সেবা পাবেন কৃষকরা।’

একনেকের জন্য তৈরি সার সংক্ষেপে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেছেন,‘ কৃষিতে ব্যয় কমিয়ে উৎপাদন বাড়াতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অপরিহার্য। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির সরবরাহ ও ব্যবহার বৃদ্ধি করে ফসলের অপচয় রোধ, চাষাবাদে সময় এবং অর্থ সাশ্রয় সম্ভব হবে। ’

এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, উচ্চ মূল্য ফসল উৎপাদন, কৃষি ক্ষেত্রে কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং কৃষি পরিবারের প্রকৃত আয় বৃদ্ধিকরণ সংক্রান্ত কার্যক্রমগুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হল-উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় ৫১ হাজার ৩০০টি বিভিন্ন প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি যেমন কম্বাইন্ড, হারভেস্টার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, পাওয়ার থ্রেসার, ড্রায়ার, পাওয়ার উইডার, পাওয়ার স্পেয়ার, পটেটো ডিগার, মেইজ শেলার ইত্যাদি সংগ্রহ ও বিতরণ করা হবে।

এছাড়া ৩০০টি ব্যাচে ৯ হাজার গ্রামীণ মেকানিককে ২৮টি ব্যাচে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এক হাজার ২০০ জন কর্মকর্তাকে ৪০ ব্যাচে প্রশিক্ষণ, এক হাজার ব্যাচে এক লাখ যৌথ জমি ব্যবহারকারী কৃষক বা উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ এবং এক হাজার ২৫০ জনকে ৫০ ব্যাচে যন্ত্র উপযোগী ধানের চারা উৎপাদন কৌশল সংক্রান্ত ৫ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

একই সঙ্গে সমন্বিত খামারে এক হাজার ২৪০ টন বীজ সহায়তা দেয়া হবে। ১৮টি এটিআই প্রশিক্ষণ ভবন ও ডরমেটরি নির্মাণ, একটি কৃষি যন্ত্রপাতি টেস্টিং ও প্রশিক্ষণ সেন্টারের সুবিধা সৃষ্টি, একটি টেস্টিং শেড নির্মাণ এবং ৩০০টি কৃষি যন্ত্রপাতি উপকরণ সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হবে।

বার্তা কক্ষ , ১৫ জুলাই ২-০২০