আন্তর্জাতিক

কূটনীতি নয় কেবল : কেনিয়া তাড়িত করেছে ওবামার আবেগকেও

আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক :  আপডেট: ০১:৫১ অপরাহ্ণ, ২৯ জুলাই ২০১৫, শনিবার

শেকড় বিচ্ছিন্ন মাটির টান বুঝিবা টের পেতেই হয় মানুষকে। ব্যতিক্রম নন মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বয়ং। কূটনীতি নয় কেবল, কেনিয়া তাড়িত করেছে ওবামার আবেগকেও। এ যে বাবা আর পূর্বসূরীদের দেশ।

সেই দেশে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। স্বজনদের সঙ্গে দেখা হওয়ার আনন্দের পাশাপাশি চলছে কূটনৈতিক তৎপরতা। শুক্রবার কেনিয়ায় পৌঁছানোর পর থেকে চলছে তার ব্যস্ততা। শনিবার কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে শুরু হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সম্মেলন ‘গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ সামিট’-এ সভাপতিত্ব করবেন ওবামা।

প্রেসিডেন্ট কেনিয়াত্তার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে মার্কিন দূতাবাসে ১৯৯৮ সালে বোমা হামলার ঘটনায় স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শন করবেন ওবামা। ওই হামলায় ২শ’রও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। কেনিয়াত্তার সঙ্গে ওবামার বৈঠকে কেনিয়ার নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস দমনে দেশটির প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। গেল কয়েক বছর ধরে সোমালিয়ার সশস্ত্র সংগঠন আল শাবাবের অতর্কিত হামলার শিকার হয়ে আসছে দেশটি। আর আল শাবাবকে দমনে অন্যতম মিত্র হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র আর কেনিয়া। ওবামার এ সফর তিন বছর আগে কূটনৈতিকভাবে অসম্ভব ছিল্ কারণ সেসময় হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন কেনিয়াত্তা।

কেনিয়াবাসীর কাছে ওবামার সফর যেন ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’
বারাক ওবামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের রাজধানী হনলুলুতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা কেনিয়ার লুও জাতির বারাক হুসেইন ওবামা সিনিয়র ছিলেন একজন অর্থনীতিবিদ এবং তাঁর মা অ্যান ডানহ্যাম ছিলেন মার্কিন শ্বেতাঙ্গী। ওবামার বাবা হাওয়াই-মানোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে অ্যান ডানহ্যামের সাথে তাঁর পরিচয় ও বিয়ে হয়। ওবামার ২ বছর বয়সে তাঁর বাবা-মায়ের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ওবামার মা পরে ইন্দোনেশীয় লোলো সুতোরোকে বিয়ে করেন। ওবামার শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে ইন্দোনেশিয়াতে। ১০ বছর বয়সে তিনি হাওয়াইয়ে নানা-নানীর কাছে চলে আসেন। ১০ বছর বয়সেই একবার বাবার সঙ্গে দেখা করতে কেনিয়া গিয়েছিলেন তিনি। এর পরেরবার ওবামা যখন কেনিয়া সফরে যান তখন তিনি একজন মার্কিন সিনেটর। লোকজন তাকে সিনেটর হিসেবে সম্বোধন করলেও আপ্যায়ন করেছিল রাজার হালে। আর এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামা যখন কেনিয়া গেলেন, তখন তার চারপাশজুড়ে নিরাপত্তা। তারমধ্যেই তাকে অভ্যর্থনা জানান কেনিয়াবাসী। তাঁর এ সফরকে ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ হিসেবে উল্লেখ করছে কেনিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো। বিমানবন্দর থেকে তার গন্তব্যস্থল পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে ওবামাকে স্বাগত জানায় কেনিয়ার জনগণ।

স্বজনদের সঙ্গে নৈশ ভোজ
শুক্রবার নাইরোবির কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ওবামাকে জড়িয়ে ধরেন তাঁর সৎ বোন অমা। কেবল তাই নয়, রাতের খাবারের সময় আরও অনেক স্বজনদের সঙ্গে দেখা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্টের। ওবামার বাবাকে লালন-পালনকারী আত্মীয় মম সারাহও যোগ দেন সে ভোজনে। তাকে গ্র্যানি বলে ডাকেন ওবামা। স্বজনদের সঙ্গে ওবামার আলাপনের পুরো সময়জুড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা হোটেল চত্ত্বর।

কেনিয়ায় নিরাপত্তা জোরদার
ওবামার সফরকে কেন্দ্র করে নাইরোবিতে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শহরটিতে ১০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া আকাশে টহল দিচ্ছে মার্কিন সামরিক বিমান।

কেনিয়া সফর শেষে ইথিওপিয়ায় যাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে গিয়ে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আফ্রিকান ইউনিয়নে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে তার।এর আগে প্রথম দফায় নির্বাচনের সাফল্যের পর একবার আফ্রিকা সফর করেছিলেন ওবামা।

সেসময় তিনি একটি সংক্ষিপ্ত সফরে ঘানায় যান।

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কমপ্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি

Share