Home / সারাদেশ / কুমিল্লায় ২২শ’ ফুট অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন
কুমিল্লায় ২২শ’ ফুট অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন

কুমিল্লায় ২২শ’ ফুট অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন

কুমিল্লার মুরাদনগরে দ্বিতীয় বারের মতো ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময় ১১০টি দুই ইঞ্চি পাইপ জব্দ করা হয়। তবে রহস্যজনক কারণে রাত সাড়ে ৯টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই অবৈধ গ্যাস লাইন নির্মাণে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বৃহম্পতিবার দুপুর থেকে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিনের নেতৃত্বে উপজেলার করিমপুর থেকে কামাল্লা বাজার পর্যন্ত দুই হাজার দুই শত ফুট লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়।

এর আগে চাঁদপুর টাইমসে গত ২২ সেপ্টেম্বর ‘বাখরাবাদ নির্বিকার : এবার অবৈধ গ্যাস যাচ্ছে কামালায়’ শিরোনামে দুটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অবৈধ ওইসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেয়।

এরই প্রেক্ষিতে গত ১৯ অক্টোবর মুরাদনগরের কামাল্লায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ওইদিন উপজেলা সদর থেকে কামালা গ্রাম পর্যন্ত ১২ হাজার ফুট অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফা অভিযানে দুই হাজার দুই শত ফুট লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। অভিযান চলাকালে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী আজগর, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপক বাপ্পী শাহরিয়ার, ব্যবস্থাপক (বিক্রয়-উপজেলা) জিয়াউল হক চৌধুরী, সহকারী প্রকৌশলী অতুল কুমার নাগ, জসিম উদ্দিন আহাম্মদ, মনতুজ মধু, পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন, এএসআই মাহফুজ প্রমুখ।

এ সময় স্থানীয় জনগণ কাঙ্ক্ষিত এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে মুরাদনগর উপজেলার সকল স্থানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে দাবি করেন।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন জানান, এক ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ থেকে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে দুই ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করায় গ্যাসের প্রেসার কমে যাবে। এর ফলে বৈধ-অবৈধ গ্রাহক সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়াও মাটি থেকে সাড়ে ৩ফুট গভীরে গ্যাস লাইন স্থাপনের নিয়ম থাকলেও অনেক স্থানে সরাসরি রাস্তার উপর এবং রাস্তার সর্বোচ্চ ৬ ইঞ্চির ভেতরে গ্যাস লাইনের পাইপ স্থাপন করায় যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ইউএনও মনসুর উদ্দিন আরো জানান, বিচ্ছিন্ন করা গ্যাস লাইনের অবশিষ্ট পাইপগুলো অপসারণ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ডিজিএমকে পত্র দেয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও দালাল চক্র বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন দেবিদ্বার জোনাল অফিস, কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, কতিপয় নামধারী সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজসে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গ্যাসের আবাসিক সংযোগ দেয়ার কাজে লিপ্ত রয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ ও নিরীহ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

বাখরাবাদ গ্যাসের কুমিল্লা অফিস ও দেবিদ্বার জোনাল অফিসের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাছে এসব লাইনকে মুখে মুখে অবৈধ বললেও বিপুল অর্থের বিনিময়ে তারাই এ সংযোগের সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পাকা সড়ক কেটে সম্পূর্ণ অবৈধ গ্যাস লাইন নির্মাণ হলেও কর্মকর্তারা কোনো প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের মুরাদনগর-রামচন্দ্রপুর সড়কের প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সামনে থেকে সড়ক কেটে এক ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ থেকে দুই ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে কামাল্লা গ্রাম পর্যন্ত সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে টানা হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার ফুট লম্বা পাইপ লাইন। যেখানে দুই ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগের কোনো প্রকার বৈধতা না থাকলেও বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের কুমিল্লা অফিস ও দেবিদ্বার জোনাল অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এসব লাইন নির্মাণে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক কেটে অবৈধ ভাবে পাইপ লাইন নেয়া হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে এ বিষয়ে চুপ থাকায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ আছে, একে তো ভাঙা সড়ক, তার ওপর আবার সড়ক কেটে পাইপ লাইন নেয়ায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। উপজেলার আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স মালিক মজিবুর রহমান খোকন এর আগে রাতের অন্ধকারে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেও কোনো অলৌকিক ক্ষমতাবলে এখন দিনের বেলাতে চালাচ্ছেন অবৈধ এ লাইন নির্মাণ ও সংযোগ কাজ। এ অবৈধ গ্যাস সংযোগের মহোৎসবের বিষয়ে আগেও বেশ কিছু পত্রিকায় ফলাও করে সংবাদ প্রচার হলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।

এ নিয়ে স্থানীয় সংবাদিকরা সোচ্চার হলে গত ১৫ আগস্ট অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানকারী সিন্ডিকেটের সদস্য মজিবুর রহমান খোকন বাদী হয়ে বাংলাভিশন টিভির সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন মনিরের বিরুদ্ধে মুরাদনগর থানায় একটি ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা চাদাঁবাজির মামলা দায়ের করেন। এতে করে গ্যাস চোরাই সিন্ডিকেট গুলো আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

এ গ্যাস চোরাই সিন্ডিকেটগুলোর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করাতো দূরের কথা ভয়েও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনহীন পাইপলাইন স্থাপন করে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে ঠিকাদার ও দালাল চক্র।

এ বিষয়টি এলাকায় অনেকটা ওপেন সিক্রেট হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে দৃশ্যমানতো নয়ই, বরং কোনো ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

সূত্রমতে, গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা গ্রামে প্রায় ৩ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সিন্ডিকেটটি দিনের বেলায় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিডিসিএল) নিজস্ব পাইপলাইন থেকে অবৈধ প্রায় ২০ হাজার ফুট গ্যাস লাইন সংযোগের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জানা থাকলে ও অদৃশ্য কারণে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

নির্মাণাধীন এ লাইন থেকে প্রায় ৩ হাজার গ্রাহককে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে ওই চক্রটি। এজন্য প্রতি গ্রাহক থেকে নেয়া হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। যা থেকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। আর মাঝ থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে সিন্ডিকেট ও দালাল চক্র গুলো।

উল্লেখ্য, গত ১৯ অক্টোবর মুরাদনগরের কামাল্লায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অভিযান চালায় মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া ৩ নভেম্বরও চার হাজার ফুট অবৈধ পাইপ লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে চান্দিনা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

চাঁদপুর টাইমস, কুমিল্লা করেসপন্ডেন্ট ।।  আপডেট ০৫:২০ পিএম ০৬ নভেম্বব, ২০১৫ শুক্রবার

ডিএইচ