কুমিল্লা নগরীতে কিশোর গ্যাং রতন গ্রুপ এবং ঈগল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শুক্রবার থেকে শনিবার ভোর পযন্ত অভিযান পরিচালনা করে ১৬ জন কিশোর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসহ ৯ টি ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক দল রাতভর কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে দুই গ্রুপের ১৬ জন কিশোর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে।
শনিবার বেলা ১২ টায় কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল মান্নান।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশফাকুজ্জামান, নাজমুল হাসান রাফি, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ফিরোজ হোসেনসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল মান্নান জানান, শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর সার্কিট হাউজ মোড় এলাকায় কিশোর গ্যাং রতন গ্রুপ এবং ঈগল গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়, এতে দুইজন আহত হয়। এই সময় উভয় গ্রুপের ককটেল বিস্ফোরণে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, মূলতঃ ক্রিকেট খেলা নিয়ে দ্বন্দের জেরে দুটি কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার বিকেলে কিশোর গ্যাং এর ঈগল গ্রুপ ও রতন গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এবং ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে নগরীর ছোটরাস্থ সেন্ট মাইকেল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের দক্ষিণ পাশে রাস্তার উপর সমবেত হয়। এসময় তারা মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এ সময় দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন সদস্য গুরুতর আহত হয়। উভয় গ্রুপের সদস্যরা ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ০৯ জন কিশোর গ্যাং এর সদস্যকে ১০টি দেশীয় অস্ত্র ও ৯টি ককটেল সহ আটক করে। অজ্ঞাতনামা আরো ৭০-৮০ জন কিশোর গ্যাং এর সদস্য পালিয়ে যায়।
পুলিশ সুপার জানান, কোতয়ালী মডেল থানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখার একাধিক টিম শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাং এর আরো ৭ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে।
রতন গ্রুপ এবং ঈগল গ্রুপ আধিপত্য বিস্তার করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়ায়। উভয় গ্রুপ ক্রিকেট খেলা ও আধিপত্য বিস্তার করে দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে পরস্পরকে আহত করে এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করায় তাদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় পৃথক পৃথক আইনে মোট ৪টি মামলা দায়ের করা হয়।
গ্রেফতারকৃত কিশোর গ্যাং সদস্য (রতন গ্রুপ): ১। মো: শাওন হোসেন (২০), পিতা-মোঃ ফজর আলী, মাতা: শিরিন বেগম, সাং-সংরাইশ (গজু পোদ্দার বাড়ী, ১৬নং ওয়ার্ড), ২। সাইমন আহমেদ(১৮), পিতা- মমিন হায়দার, মাতা-সাহিদা আক্তার, সাং-ডুমুরিয়া চাঁনপুর(রাজ্জাক ভিলা, বন্দি শাহি মসজিদের সামনে), ৩। মো: শাওন হোসেন (২২), পিতা-আব্দুল মোতালেব, সাং- কাটাবিল, বাদশা বাড়ী, এ/পি সাং- জগন্নাথপুর, ৪। মোঃ বাদল হোসেন (২১), পিতা- মোঃ লিটন হোসেন, সাং- জগন্নাথপুর, ৫। প্রমিজ সরকার শান্ত (১৮), পিতা-জীবন সরকার, সাং-কাশিমপুর, থানা-চান্দিনা, এপি সাং-চানপুর (হালিমা টেলিকম সংলগ্ন)। এরা সবাই কোতয়ালী মডেল থানা এলাকার বাসিন্দা।
অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত কিশোর গ্যাং সদস্য (ঈগল গ্রুপ): ১। মো: মেহেদী হাসান সিয়াম(১৮), পিতা-আব্দুল্লাহ, মাতা-শাহিনা আক্তার, সাং-ধর্মপুর(পশ্চিম চৌমুহনী গাজী বাড়ী), ২। মো: সাকিব(১৮), পিতা-আবুল হোসেন, মাতা-নুরজাহান বেগম, সাং-দৌলতপুর(মধ্যমপাড়া সিরাজ ড্রাইভারের বাড়ী), ৩। মো: ফাহিম হোসেন(১৯), পিতা-আ: মতিন, মাতা-বিলকিস বেগম, সাং-সংরাইশ(মোক্তার বাড়ী), ৪। মো: আরিফ হোসেন(১৯), পিতা-দুলাল মিয়া প্র: চরু মিয়া, মাতা-দুলালী, সাং-তেলিকোনা(মা-মনি হাসপাতালের সামনে), ৫। সামবীর (১৯), পিতা-মাসুদুর রহমান বাবুল, মাতা-মুক্তা বেগম সাং-মোগলটুলি ফেমাস ট্রেইলারের পিছনে, ৬। আকিব হোসেন (১৯), পিতা-সেলিম, সাং-বারপাড়া, ময়নামতি হাসপাতালের পাশে মজুমদার বাড়ী, ৭। মোঃ ফরহাদুজ্জামান পিয়াস (২০), পিতা-মৃত আবুল কাশেম, সাং-সংরাইশ, কলের পুকুরপাড়, সর্দার বাড়ী, ৮। আশরাফুল ইসলাম নিলয় (২০), পিতা-জামাল মিয়া, সাং-২য় মুরাদপুর ডলহাউজ রোড, ৯। মোঃ কাইয়ুম হোসেন @ শাফি (১৮), পিতা- মৃত মোহাম্মদ আলী, সাং-সুজানগর বৌবাজার পুলের সাথে, ১০। আতিকুর রহমান (১৯), পিতা- আরজু মিয়া, সাং- ২য় মুরাদপুর, পাথুরিয়াপাড়া, ১১। বর্ষণ রায় জয় (১৮), পিতা- বিমল রায়, সাং-স্বপাড়া, গৌরিপুর, থানা-দাউদকান্দি, এপি সাং-মোগলটুলী(হাইস্কুলের পিছনে)। এরাও সবাই কোতয়ালী মডেল থানা এলাকার বাসিন্দা।
প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur