Home / সারাদেশ / কিট সংকটে কুমিল্লায় নমুনা পরীক্ষা বন্ধ : বিপাকে করোনা উপসর্গ রোগীরা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

কিট সংকটে কুমিল্লায় নমুনা পরীক্ষা বন্ধ : বিপাকে করোনা উপসর্গ রোগীরা

কিট সংকটে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের (কুমেক) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে ৭ জুন রোববার করোনাভাইরাস শনাক্তে কোনো নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি।

এর আগে শনিবার একবেলা সীমিত সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হলেও ল্যাব পরিষ্কারের কথা বলে তা বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে ঢাকা থেকে সরবরাহ করা কিট প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া ও আগে সংগ্রহ করা নমুনার জট লেগে যাওয়ায় পরীক্ষা বন্ধ ও সীমিতভাবে নমুনা সংগ্রহ করার তথ্য কুমেক থেকে জানানো হয় সিভিল সার্জন অফিসকে। পরে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এ খবর জানানো হয় সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। এতে যারা করোনার উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ রয়েছেন তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। করোনা পরীক্ষা করতে না পেরে অনেকেই উৎকণ্ঠা রয়েছেন।

রোববার বিকেল পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে জেলায় নতুন করে আরও ১৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৩০ জন।

কুমেক সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল থেকে কুমেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পিসিআর পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস শনাক্তের কার্যক্রম শুরু হয়। এতে প্রতিদিন একটি মেশিনে দুই শিফটে ১৮০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু একটি মেশিনে ৭০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত জেলায় স্বল্পসংখ্যক কিট দিয়ে চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। তাই কিট সংকট দেখা দিয়েছে।

কুমিল্লার বাইরে ঢাকা ও চট্টগ্রামেও নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষা করাতে বেগ পেতে হচ্ছে সিভিল সার্জন কার্যালয়কে। অনেক প্রতিষ্ঠান নমুনা নিতেও চাইছে না। সেখানেও নমুনার জট লেগে আছে। কুমিল্লা মেডিকেলে ল্যাব চালুর আগে ও পরে ঢাকা-কুমিল্লার ল্যাবে এ পর্যন্ত সর্বমোট ১১ হাজার ৯১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ফলাফল পাওয়া গেছে ১০ হাজার ৩২৮ জনের। ৭ জুন পর্যন্ত এ জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৪৩০ জন। মারা গেছেন ৪১ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ২১৭ জন।

এদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে দুই দিন ধরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করেছেন নগরীর কাটাবিল এলাকার বাসিন্দা জাহিদুর রহমান (২৮) নামে এক যুবক। কোথাও এ বিষয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে হতাশ তিনি।

রোববার দুপুরে ওই দুই হাসপাতাল ঘুরে সিভিল সার্জন অফিসে খোঁজ নিতে যান লালমাই উপজেলার তফাজ্জল হোসেন (৫০)। সেখানেও তিনি কোনো কর্মকর্তার দেখা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনার কারণে আপাতত করোনার নমুনা নেয়া সীমিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কুমেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান কান্তি প্রিয় দাশ বলেন, কুমেকের ল্যাব থেকে একদিনে সর্বোচ্চ ১৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। মেশিনের সামর্থ্যের ওপর পরীক্ষা করা হচ্ছে। আরও একটি মেশিনের কথা আমরা বলেছি। এই মাসেই এ মেশিন আসার কথা রয়েছে। আমাদের ল্যাবে অনেক নমুনা জমা আছে। এখন আরও অনেক কিট দরকার। কিট এলে নমুনা পরীক্ষা পুরোদমে শুরু হবে।

তিনি বলেন, ঢাকার ল্যাবগুলো এখন আর নমুনা নিতে চায় না। তাদেরও নমুনা পরীক্ষার জট রয়েছে। আগে আমরা সাত হাজার কিট পেয়েছিলাম। এগুলো পরীক্ষা করতে গেলে প্রায় ১০ শতাংশ নানা কারণে নষ্ট হয়ে যায়।

কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, কিট সংকটের কারণে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। জেলা ও উপজেলা সবখানে মানুষ নমুনা দেয়ার জন্য এসে ফিরে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কুমিল্লার ১৭ উপজেলা থেকে ২০টি করে নমুনা এলে মোট ৩৪০টি নমুনা হয়। সিটি কর্পোরেশন থেকে ৫০টি নমুনা আসে। সব মিলিয়ে কুমিল্লায় অন্তত ৩৯০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ল্যাবে মাত্র ১৮০টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে।

অবশিষ্টগুলো পরের দিনের পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করা হয়। পরের দিন আরও নমুনা আসে। এভাবে জট লেগে যাচ্ছে। আমরা ঢাকায় কিছু নমুনা পাঠাই। কিন্তু সেখানেও পুরো দেশের জট। তাই কুমিল্লার জন্য আরও কিট চাওয়া হয়েছে। কিট হাতে পেলেই নতুন করে নমুনা পরীক্ষা করা হবে।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল আজাদ বলেন, পিসিআর ল্যাব চালু করার পর এক মাসের বেশি সময় চলে গেছে। এই সময়ে ল্যাবটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়নি। তাই আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য ল্যাবে রোববার পুরোপুরি নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রেখেছি। আগের দিন শনিবার এক বেলা কাজ হয়েছে।

তিনি বলেন, কিটের সংকট সাময়িক। এ নিয়ে কারও উৎকণ্ঠার কারণ নেই। সহসাই কিট এসে যাবে।

করেসপন্ডেট,৮ জুন ২০২০