রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ ও আইসিইউ- এই দুই ধরনের মিলিয়ে মোট ১৫ হাজারেরও বেশি শয্যা থাকলেও অধিকাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি হচ্ছে না। বর্তমানে হাসপাতালগুলোর সাধারণ শয্যায় ৪ হাজার ৬২৮ জন এবং আইসিইউতে ২১০ জনসহ মোট ৪ হাজার ৮৩৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। ফলে ফাঁকা রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি শয্যা।
কাগজে-কলমে হাসপাতালে হাজারে হাজারে শয্যা খালি থাকলেও বাস্তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহভাজন ও নিশ্চিত করোনা আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। নানা অজুহাতে তাদের হাসপাতালে ভর্তি না করে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। বিশেষ করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা না পেয়ে সুচিকিৎসার অভাবে অনেক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, শয্যা না পেয়ে সুচিকিৎসার অভাবে অনেক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ তাদের কানেও এসেছে। এ কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে প্রতিদিন সারাদেশের কোন হাসপাতালে কত সংখ্যক সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা রয়েছে, সেখানে কত রোগী ভর্তি আছে, কত রোগী ছাড় পেয়েছে ইত্যাদি সম্পর্কিত বিভিন্ন পরিসংখ্যান গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য প্রদান করা হচ্ছে। হাসপাতাল ওয়ারী পরিসংখ্যান দেয়ার ব্যাপারটিও তারা চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যার চেয়ে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা বেশি। গত একদিনে ৫১৮ জন আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন। একই সময়ে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭৩৬ জন।
করোনা হাসপাতালের শয্যাসহ কী কী সুবিধা রয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, রাজধানীসহ সারাদেশে মোট ১৪ হাজার ৭৭৫টি সাধারণ শয্যা, ৩৯২টি আইসিইউ শয্যা, ৩৩৩টি ভেন্টিলেটর, ১১ হাজার ১৪১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ২০৭টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও ৯৮টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে।
তিনি আরও জানান, সারাদেশের ১৪ হাজার ৭৭৫টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৬ হাজার ৭৫টি, ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৮৩০টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৮০টি, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৭১৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ৭০৩টি, রাজশাহী বিভাগে ১ হাজার ৬২০টি, রংপুর বিভাগে ৭৫টি, খুলনা বিভাগে ৭৫৫টি, বরিশাল বিভাগে ৪৪৩টি ও সিলেট বিভাগে ৩৯৫টি রয়েছে।
এসব হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে যথাক্রমে ১৪৫, ৮২, ১৭, ৩৯, ২২, ২৩, ২০, ১৮, ১০ ও ১৬টি। সাধারণ শয্যার মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৪ হাজার ৬২৮টি শয্যায় রোগী রয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ২ হাজার ৩৬১টি, ঢাকা বিভাগে ৪৪৪টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮২টি, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৪১৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৯৯টি, রাজশাহী বিভাগে ১৮৩টি, রংপুর বিভাগে ৭৭টি, খুলনা বিভাগে ২২৯টি, বরিশাল বিভাগে ২৮৪টি ও সিলেট বিভাগে ১৫২টি শয্যায় বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছে। এসব হাসপাতালে বর্তমানে আইসিইউতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ১০৭, ২৬, ২, ২২, ১১, ১০, ৪, ৭, ১০ ও ১১ জন।
এদিকে দেশে করোনার সংক্রমণ ও এতে মৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২ জুলাই বৃহস্পতিবার একদিনে আরও চার হাজার ১৯ জনের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। ফলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ২৭৭ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৩৮ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৯২৬ জনের।
বার্তা কক্ষ,৩ জুলাই ২০২০