জাতীয়

করোনা প্রতিরোধে ডাক্তার-নার্সদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে

যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা যেভাবে দ্রুত গতিতে বাড়ছে তাতে আমাদের এটা অনুভব করাচ্ছে যে, অতীতের কোনো কৌশল আমাদের কাজে আসছে না। এখনই আমাদের আগামী ধাপ অথবা পরবর্তী কোনো মহামারীর জন্য প্রস্তুত হতে হবে। নষ্ট করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই। এটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লড়াই চলাকালীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে প্রতিহতের পদক্ষেপকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই প্রস্তুতি নিয়ে কারোরই সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

প্রতিদিনের গণমাধ্যমের খবর আমাদের পদক্ষেপ গ্রহণের কৌশল শেখাচ্ছে : অধিক হারে মাস্ক ও ভেন্টিলেটর নিশ্চিত করা, অধিক পরিমাণে কার্যকর রোগনির্ণয়ক পরীক্ষার বিকাশ ঘটানো, দ্রুত ও পরিপূর্ণ সামাজিক দূরত্ব কার্যকর করা এবং বৈশ্বিক মহামারী করোনা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের হুশিয়ারিকে মারাত্মকভাবে নেয়া।

বিভিন্ন দেশের প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে জনরোষ ও হতাশা অনুধাবনযোগ্য। দুঃখজনক যে, আমরা পেছনের সময়ে ফিরে যেতে পারব না। ভাইরাস চলে যাক- এই সময়ের জন্যও অপেক্ষা করতে পারি না। বস্তুত প্রচেষ্টা না চালিয়ে আমরা অপেক্ষায় থাকতে পারি না। এক্ষেত্রে ডাক্তার-নার্সদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ইতোমধ্যে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় হাসপাতালগুলো প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। এক্ষেত্রে শুধু কোনো নির্দিষ্ট দেশের রোগীকে নিয়ে চিন্তা করলে চলবে না, পুরো বিশ্বের অগ্রগতির জন্যও পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশকে পাঁচটি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

প্রথমত, ওষুধ, মেডিকেল পণ্য যেমন ভেন্টিলেটর ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) মতো সামগ্রী সর্বোচ্চ মাত্রায় সরবরাহ করতে হবে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফায় সুনামির জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্যসেবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘাটতি মোকাবেলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। সরল অর্থে- আমাদের বহু ডাক্তার প্রয়োজন। শুধু শিক্ষানবিস পর্যায়ের চিকিৎসক নয়, আশঙ্কাজনক রোগীর জন্য বিশেষজ্ঞেরও প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, পুরো স্বাস্থ্যসেবা টিমকে বেপরোয়া ও কার্যকরভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। শিক্ষানবিস নার্স থেকে শুরু করে চিকিৎসকের সহকারী- সবাইকে তাদের সেরাটা দিতে হবে। এমনকি বিশেষজ্ঞ কোনো ডাক্তারের পর্যবেক্ষণ ছাড়াই পুঁথিগত বিদ্যার মাধ্যমে হলেও নার্সদেরই রোগীর প্রেসক্রিপশন করতে হবে।

গত কয়েকদিনে মিশিগান ও আরিজোনাসহ কয়েকটি রাজ্যের গভর্নররা নার্সদের এবং চিকিৎসকের সহকারীকে স্বাধীনভাবে কাজ করার অনুমোদন সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন।

চতুর্থ, দেশের ব্যক্তিমালিকানাধীন ও অলাভজনক খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। দেশপ্রেমের নজির দেখিয়ে কোম্পানিগুলোকে ভেন্টিলেটর উৎপাদন, মেডিকেল কর্মীদের জন্য হোটেল কক্ষ বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে।

সর্বশেষ, মেডিকেল গবেষণার জন্য দীর্ঘমেয়াদি সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। প্রস্তুতি কখনই নির্ধারিত নয়, এটি চলমান। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শেষে আরও বহু কিছু করার রয়েছে। তবে এখনই পরবর্তী সংকট মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন নেই। এখন দরকার করোনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা। কোভিড-১৯ আমাদের একটি বিষয় স্পষ্টভাবে শিক্ষা দিচ্ছে যে, আমাদের আরাম-আয়েশ করার সময় নেই।

লেখক: ডা. ডেভিড জে. স্কোরটর, মার্কিন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং আমেরিকান মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী প্রধান
কনটেন্ট ক্রেডিট: ইউএসএ টুডে পত্রিকা

Share