Home / জাতীয় / করোনা টেস্টে ধীরগতি : উপসর্গ দেখেই চিকিৎসার পথে সরকার
করোনা টেস্টে ধীরগতি

করোনা টেস্টে ধীরগতি : উপসর্গ দেখেই চিকিৎসার পথে সরকার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করোনা পরীক্ষার জন্য অনলাইনে সিরিয়াল নিতে হয়। প্রতিদিনের পরীক্ষার জন্য যে কোটা বরাদ্দ থাকে, তা অনলাইনে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে পূরণ হয়ে যায়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চিকিৎসক বলছিলেন, করোনার উপসর্গ থাকা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এত মানুষকে পরীক্ষা করার মতো সামর্থ্য তাদের নেই।

একই অবস্থা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের। সেখানে প্রতিদিন লম্বা লাইন পড়ছে। কয়েক দিন ঘুরতেও হচ্ছে নমুনা দিতে। সিরিয়াল থেকে নমুনা দেওয়ার জন্য তিন দিন একই স্থানে অবস্থান করার চিত্র দেখা গেছে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, তাঁরা করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। কারণ যত বেশি শনাক্ত হবে, তত বেশি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তবে তিনি বলেন, এখন তাঁরা উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের বলেছেন। আর করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপাতাল বাড়ানোরও কাজ করছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব বলছিলেন, ‘এখন দিনে ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। এটা যথেষ্ট নয়, তা আমরা বুঝি। উপসর্গ নিয়ে নমুনা পরীক্ষা করার লাইন দিন দিন বড় হচ্ছে। এটা আরও বাড়তে থাকবে। কিন্তু এটা যতটা বাড়ানো দরকার, সেই পরিমাণ বা তার কাছাকাছি যাওয়ার মতো সামর্থ্য এই মুহূর্তে আমাদের নেই।’

প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন প্রতিদিন ৫০ হাজার বা তার বেশি নমুনা পরীক্ষা করা গেলে ভালো হতো। কিন্তু আমাদের যে সামর্থ্য, তাতে ২০ হাজার নেওয়াটাই তো কঠিন। তবে চেষ্টা চলছে নমুনা পরীক্ষার কেন্দ্র বাড়িয়ে, লোকবল যুক্ত করে শিগগিরই তা দিনে ২৫ হাজারে নিয়ে যাওয়া।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা নিজেই বললেন, করোনার উপসর্গ আছে, এমন ব্যক্তিরা পরীক্ষার জন্য যেভাবে তদবির করেন, দালাল ধরেন; তাতে স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, যাঁদের পরিচিত লোক নেই বা অর্থ খরচের উপায় নেই, তাঁদের কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

এই কর্মকর্তা জানালেন, এখন পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী শনাক্তের পাশাপাশি উপসর্গ দেখে ব্যক্তিকে শুরু থেকে করোনার চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকদের বলা হয়েছে। কেননা উপসর্গ থাকা ব্যক্তি চাইলেই পরীক্ষা করাতে পারছেন না, ফল পেতেও দেরি হচ্ছে। এতে কয়েক দিন সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এ কারণে তাঁরা মৌখিকভাবে চিকিৎসকদের এ নির্দেশনা দিয়েছেন।

বাংলাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু তাদের পরীক্ষা হচ্ছে না। সারা দেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু এক হাজার ছাড়িয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর পরীক্ষা করে ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসার পর যাঁরা সুস্থ হচ্ছেন, তাঁদের কিন্তু পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে রোগীর সংখ্যা যে শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি, এটা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

সম্প্রতি ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে আইসিডিডিআর,বির একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেছে, শুধু ঢাকাতেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ। তবে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, পরীক্ষা বাড়লে শনাক্ত বাড়বে, এটা তো ঠিক। তবে সেটা কত, তা বলা যাচ্ছে না। ওই কর্মকর্তারা বলছেন, পূর্ব রাজাবাজার লকডাউনের আগে সেখানে ৩৯ জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। লকডাউনের পর পরীক্ষার সুযোগ বাড়লে এই কয়েক দিনে আরও ২৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার মানে সেখানে আরও আক্রান্ত আছেন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরের তিনটি হটলাইন নম্বরে উপসর্গের কথা বলে, রোগটি সম্পর্কে জানতে, পরীক্ষা করাতে চেয়ে ১ কোটি ১২ লাখ কল এসেছে। তবে আলাদাভাবে উপসর্গ আছে বা পরীক্ষা করানোর জন্য কত ফোন এসেছে, তা তাঁদের জানা নেই। কিন্তু এতসংখ্যক ফোন কল আসায় এটা বোঝা যায়, পরীক্ষা এখন পর্যন্ত যা হয়েছে তার চেয়ে চারগুণ বেশি হলে আরও বেশি মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যেত।

ঢাকা ব্যুরো চীফ, ১৯ জুন ২০২০