বিদেশের পাশিপাশি সারদেশের ন্যায় ‘করোনা ভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়া ও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আতংকে রয়েছে চাঁদপুরবাসী। যতই দিন গড়াচ্ছে, করোনা ভাইরাসের হানায় সন্ত্রস্থ হচ্ছে গোটা দুনিয়া। এরই মধ্যে চীন থেকে ‘করোনা ভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উচ্চ ঝুঁকি ঘোষন করেছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাটি।
আর এমন ঘোষনার ক’দিন পরই গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে তিন জন নারী-পুরুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পওয়া যায়, একই সাথে চাঁদপুর মতলব উপজেলায় ইতালি ফেরত এক ব্যাক্তিকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে মতলব উপজেলা স্বাস্ব্য কমপ্লেক্সের আলাদা ভবনে রেখে চিকিৎসসেবা প্রদান করার খবর পাওয়া যায়। এরপরই চাঁদপুরে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস আতংক।
এদিকে মতলব উত্তরে ইতালি ফেরত হাসপাতালে ভর্তি দুদু মিয়া (৬৫) রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি বলে জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। পরীক্ষার মাধ্যমে নেগেটিভ এসেছে। তার অবস্থা খুবই ভালো বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.নুসরাত জাহান মিথেন।
চাঁদপুরের মতলবে ইতালি ফেরত প্রবাসীর করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি
গত দু’তিন ধরে দেখা গেছে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আউটঢোরে প্রচন্ড রোগীদের ভিড়। যদিও স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিদিন হাসপাতলে রোগীদের এমন প্রচন্ড ভিড় হয়ে থাকে। কিন্তু এক দিনের ভিড়ে রোগীদের কাছে খবর নিয়ে জন গেছে। আউটঢোরের বেশির ভাগ রোগীই সামন্য জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথা ব্যথা জনিত কাারনে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের ভয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছেন।
তবে এ বিষয়ে হাসপতালের বেশ ক’জন দায়িত্বরত চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে অধিকাংশ রোগীরই ভয়ে একটু জ্বর সর্দি কাশি,র সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন।
এছাড়া ১০ মার্চ মঙ্গলবার সকালে মতলব দক্ষিন উপজেলার ধনপর্দি গ্রামের সেলিনা বেগম (৬০) নামের সৌদি ফেরত এক নারীকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ নুরে আলম মজুমদার তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তাৎক্ষনিক ওই নারীকে তার গ্রমের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
সেলিনা বেগমের এক আত্মীয় মোঃ কবির হেসেন জানান, অসুস্থ সেলিনা বেগম গত ৮ দিন পূর্বে সৌদি থেকে হজ্ব করে দেশে ফিরেছেন। তিনি দেশে ফেরার আগে থেকেই সৌদিতে তিন দিন ধরে জ্বরে ভোগছিলেন। দেশে ফেরার ৮ দিন পরেও তিনি সুস্থ না হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপতালে আনা হয়।
এবিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ নুরে আলম মজুমদার জানান, তিনি আসলে কোন প্রকার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী নন। আমরা জেনেছি তিনি সৌদি থেকে হ্জ্ব করে দেশে এসেছেন। যেহেতু তিনি বিদেশ থেকে ফিরেছেন সেক্ষেত্রে হয়তোবা করোনা ভাইরাসের লক্ষ্যনীয় কিছু থাকতে পারে সেজন্য আমরা তাকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছি। কারন বর্তমানে বিদেশ থেকে কেউ আসলে অন্তত ১৪ দিন ঘর থেকে বের ন হওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেজন্য ওই রোগীকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছি। যাতে এমন কিছু হলে সেটা অন্যদের মাঝে ছড়াতে না পারে। তবে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নন।
ওপর দিকে এমন মরণঘাতী এমন ভয়ংকর করোনা ভাইরাস আতংকে অধিকাংশ লোকই নিজেদরে নিরাপত্তার জন্যে নিয়মিত মুখে মাস্ক ব্যবহার করছেন, প্রতিদিন নিয়মতি সাবান, স্যাভলন, হ্যান্ডওয়াশ এবং হেক্সিসল দিয়ে হাত ধুচ্ছেন। এছাড়া একটু, জ্বর , সর্দি, কশি হলেই ডাক্তার দেখাতে হাসপাতলের ছুটছেন সাধারণ মানুষ। এভাবেই দিনের পর দিন সারাদেশের সাথে চাঁদপুর বাসির মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে মরনঘাতী করোনা ভাইরাসের আতংক।
এদিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য সারা বাংলাদেশের সাথে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন চাঁদপুর স্বাস্থ্য বিভাগ।চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্ল্যাহ জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রত্যেকটা উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ৩ টি করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইসোলেশন ওয়ার্ড রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সাথে সেপ্টি মার্স্ক ও হ্যান্ড ক্লাপস রাখা হবে।
একই সাথে চাঁদপুরের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতেও ১টি থেকে ২টি করে বেড রাখার নির্দেশনা দিয়েছে চাঁদপুর সিভিল সার্জন। প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোর মধ্যে বলা হয়েছে যেসব হাসপাতাল গুলো ১০টি বেডের তারা ১টি করে বেড রাখার এবং যেসব হসপাতাল ২০টি বেডের তারা ২টি করে আইসোলেশন বেড রাখার জন্য।
এছাড়া জেলা এবং প্রত্যেকটি উপজেলায় ১টি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কিমিটি গুলোর উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন নিজ নিজ এলাকার এমপিগন। শুধু চাঁদপুর সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষই নয়, এই ভয়ানক ভাইরাস প্রতিরোধে প্রস্তুতি নিয়েছেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
করোনা ভাইরাসে আতংকিত না হয়ে নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন সহ সরকারি হাসপতালের একধিক চিকিৎসক বলেন, যাদের শরীরের পেশার, ডায়বেটিক, শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন রোগ থাকে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকে তারাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তবে এর থেকে মুক্ত থাকতে হলে সবইকে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ক্ষনে, ক্ষনে হাত ধোঁয়া, জন সমাগম থেকে ধুরে থাকতে হবে।
যারা বিদেশ থেকে দেশে আসেন তাদের অন্তত ১৪ দিন বাহিরে বের না হয়ে ঘরে থাকতে হবে। একই সাথে দেশ থেকে বিদেশে যাওয়া এবং আসা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবেই এই করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি কম থাকবে।
কবির হেসেন মিজি,১১ মার্চ ২০২০