করোনায় ভালো নেই চাঁদপুরের সাধারণ ব্যাবসায়ীরা

নভেল করোনাভাইরাসে বিশ্বের প্রায় সব দেশই মারাত্মক স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির কবলে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর আগে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক কোন সঙ্কটই বিশ্বজুড়ে এতটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেনি, যতটা করোনার ধাক্কায় কাঁপছে গোটা বিশ্ব। উন্নত বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রের পাশাপাশি আমাদের পার্শবর্তী রাষ্ট্র ভারতের অর্থনীতিও ভারসাম্য হারাতে বসেছে। এমন বিশ্ব অর্থনৈতিক মান্দায় আক্রান্ত হতে পারে বাংলাদেশও। বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামাল আমদানি সঙ্কটে দেশের ব্যবসায়ীরা বড় অঙ্কের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

এদিকে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ভালো নেই চাঁদপুরের বিপনীবিতানগুলোর ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী ও কর্মচারীরা। করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে তাদের পেশায়ও। গেলো ২৪ মার্চ চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের নির্দেশনার পর থেকে কেবলমাত্র ঔষদের দোকান ছাড়া বন্ধ রয়েছে চাঁদপুরের সকল মার্কেটের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সরকারের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে অনিদৃষ্টকালের জন্য এসকল মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা দোকান বন্ধ করে বাড়িতে অলস সময় পার করছেন। এর ফলে এসকল দোকানের মালিকদের অনেক দিক থেকেই লোকসান গুনতে হচ্ছে। একদিকে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ ও পানির বিল, অন্যদিকে কর্মচারীদের বেতন। তাছাড়া দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকায় ধুলোবালিতে মালামালও নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। একই অবস্থা চাঁদপুর জেলার উপজেলার মার্কেটের দোকানের ব্যাবসায়ী- কর্মচারিদের।

চাঁদপুর শহরের বেশ কিছু মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তারা হতাশার স্বরে জানান, ‘খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে আমাদের। দোকান ভাড়া হিসেবে দোকান মালিককে প্রতিমাসে দিতে হয় ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটি দোকানে ২ থেকে ৭/৮ জন কর্মচারী রয়েছে। একই সাথে বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন খরচও আছে। কিন্তু গত ২৪ তারিখের পর থেকে এক মিনিটের জন্যও দোকান খোলা হয়নি। তাছাড়া এই পরিস্থিতিতে কর্মচারীরাও ফোন করে বেতনের জন্যে কাকুতিমিনতি করছে। আর কর্মচারীরাই বা কি করবে, এই পেশাতেই যে তাদের সংসার চলে। অথচ টানা ১৬ দিন দোকান বন্ধ থাকায় আমরা নিজেরাই অর্থকষ্টে আছি।

৮ এপ্রিল বুধবার চাঁদপুর শহরের রেলওয়ে হকার্স মার্কেট, হাকিম প্লাজা, আহমেদ শপিং কমপ্লেক্স, রজনীগন্ধা সুপার মার্কেট, শেখ মেনশন, ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্সসহ সকল মার্কেট ঘুড়ে দেখা যায়, মার্কেটগুলোর প্রধান গেইটে এবং প্রতিটি দোকানে তালা ঝুলানো রয়েছে।

চাঁদপুর বেশ কয়েকটি মার্কেটের দোকানের সেলসম্যান অর্থাৎ কর্মচারীদের সাথে কথা হলে তারা দুঃখের সাথে জানায়, দোকানে কাজ করে আমরা মাসে যে পাঁচ দশ হাজার টাকা বেতন পাই তাই দিয়ে কোনরকম আমাদের সংসার চলতো। গত ১৬ দিন যাবৎ দোকান বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থাতে মালিকদের কাছে বেতন চাইতে আমাদের নিজের লজ্জা করছে। কিন্তু কি করবো এই ছাড়া যে আমাদের রোজগারের আর অন্য কোন পথ খোলা নেই। তাছাড়া এই অবস্থাতে কারও কাছে যে ধার-দেনা করবো সেই সুযোগও নেই। কারণ তার মতো অবস্থা প্রায় সকলেরই। এ অবস্থাতে আমরা পরিবারের খাবার ব্যবস্থা করা এবং বাসা ভাড়া নিয়ে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছি। এমন একটা পরিস্থিতিতে কারো কাছে যে হাত বাধবো সেই সুযোগও আমাদের নেই।

চাঁদপুর জেলার সবচেয়ে বড় মার্কেট শহরের রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের ব্যাবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফেজ জাকির হোসেন মৃধা বলেন, গত ২৪ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন ঔষধের দোকান ব্যতীত সকল মার্কেটের বিপণিবিতান বন্ধের নির্দেশ দেয়। আমরা সরকারের এই নির্দেশনাকে সম্মান জানিয়ে এবং নিজেদের জীবন বাঁচাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেই।

তিনি বলেন, আমাদের এই মার্কেটে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩৮০টির মতো দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানে মালিক-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার মানুষ এই পেশার সাথে জড়িত। একেকটি দোকানের ভাড়া ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। হঠাৎ করেই দোকান বন্ধ হওয়ার ফলে আমরা খুবই বেকায়দায় পড়েছি। একদিকে দোকান ভাড়া অন্যান্য খরচ অপরদিকে স্টাফদের বেতন। আর দোকানের থেকে ধুলাবালিতে আমাদের মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি কখন শান্ত হয় তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই দিনকে দিন আমাদের দুশ্চিন্তা কেবল ভারী হচ্ছে।

চাঁদপুর সদর লক্ষ্মীপুর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং এর সভাপতি জাকির হোসেন মৃধা আরও জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের মালিকদের পাশাপাশি কর্মচারীরা বেশ বেকায়দায় রয়েছে। অনেকেই আমাকে ফোন করে জানিয়েছে তাদের ঘরে চাল ডাল কিছুই নেই। আমাদের নিজস্ব কোন ফান্ড না থাকায় এই পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না। আমি চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের নিকট অনুরোধ করবো যদি সুযোগ থাকে আমাদের এই বৃহৎ মার্কেটের কর্মচারীদের জন্য সামান্য হলেও ত্রাণ সহায়তা দিলে তারা খুবই উপকৃত হবে।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম,৯ এপ্রিল ২০২০

Share