সার্স-কভ-২ ভাইরাসের বদল কিভাবে হয়েছে, এই ভাইরাসের আসল উত্স কী, কেন এতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তার সঠিক উত্তর এখনো অজানা। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলছে, চীনের ল্যাবরেটরি থেকে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। আর সেই তথ্য লুকাচ্ছে চীন। তবে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এই দাবি অস্বীকার করা হলেও প্রায় এক বছর আগে এই ভাইরাস নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ‘ব্যাট ওম্যান’ নামে পরিচিত উহানের ওই ল্যাবরেটরির এক গবেষক।
উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির অন্যতম প্রধান গবেষক শি ঝেংলি এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। ১১ মাস আগেই সতর্ক করেছিলেন তিনি। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে এই ভাইরাস মহামারির আকার নিতে পারে। শি ও তার টিম বাদুড় থেকে আসা এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছিলেন। উহানের ওই ল্যাবেই গবেষণা চলছিল।
বাদুড়ের এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি ‘ব্যাট ওম্যান’ হিসবেও পরিচিত। জানা যায়, এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার তিনদিনের মাথাতেই নতুন করোনাভাইরাসের জিন নিয়ে তথ্য সামনে এনেছিলেন এই নারী গবেষক। কিন্তু তার উপদেষ্টারা তাকে চুপ করিয়ে রাখেন।
ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির ডেপুটি ডিরেক্টর শি ও আরো তিন গবেষক মিলে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। মার্চ মাসে সেই গবেষণাপত্র প্রকাশ্যে আসে। সেখানেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল যে, সার্স, মার্স ও সোয়াইনের পর ফের করোনাভাইরাস মহামারির আকার ধারণ করতে পারে।
ওই তিনটি রোগই হয়েছিল করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত, যা বাদুড় থেকে আসে। আর এর মধ্যে দুটিই চীন থেকে ছড়িয়ে ছিল। ওই গবেষক লিখেছিলেন, সার্স কিংবা মার্সের মতো করোনাভাইরাস ফের ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। আর চীন থেকেই তা ছড়ানোর আশঙ্কা সবথেকে বেশি।
তিনি আরো বলেছিলেন যে, গোড়া থেকেই সতর্কতা নেওয়া হলে, সংক্রমণ কমানো যেতে পারে। ওই গবেষণাপত্রে স্পষ্ট লেখা ছিল, চীনারা তাজা মাংসই সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর বলে মনে করেন। আর এই খাদ্যাভাসই সংক্রমণের কারণ হয়ে ওঠতে পারে। বেইজিং নিউজের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালেই শি ও তার টিম আবিষ্কার করে যে মানুষ বাদুড় থেকে সরাসরি সংক্রমিত হতে পারে।
গত ফেব্রুয়ারিতে শি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, করোনাভাইরাসের সঙ্গে ল্যাবের কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ গবেষণাগার থেকে ছড়ায়নি ভাইরাস। চীনও ওই দাবি বারবার উড়িয়ে দিয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, উহানের ওই ল্যাবরেটরি থেকেই লিক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাস।
উহানের মাছের বাজারের সঙ্গে ভাইরাসের কোনো সম্পর্ক নেই বলেই মনে করছে বহু বিশেষজ্ঞ। আমেরিকা এই বিষয়ে রীতিমত তদন্ত শুরু করেছে। মার্কিন সচিব মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, কিভাবে গোটা বিশ্বে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ল তার নিখুঁত তদন্ত করবে আমেরিকা।
চীনের ভাইরাস কালচার কালেকশনের কেন্দ্র এই গবেষণাগার। বলা যেতে পারে এটাই এশিয়ার বৃহত্তম ভাইরাস ব্যাংক। যেখানে ১৫০০ ধরনের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ইবোলার মতো ভাইরাস নিয়েও গবেষণা করা হয়। যেসব ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, সেরকম ভাইরাস রয়েছে এই গবেষণাগারে।
সূত্র: ডেইলি মেইল।