Home / আন্তর্জাতিক / কপ-২৮ সম্মেলন ৩০ নভেম্বর -১২ ডিসেম্বর
cop-

কপ-২৮ সম্মেলন ৩০ নভেম্বর -১২ ডিসেম্বর

জলবায়ুতে মানুষের সৃষ্টি ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় ১৫৪টি দেশ ১৯৯২ সালে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে (UNFCCC) স্বাক্ষর করে। তারপর থেকে,জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন (COP) প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় যেখানে আলোচনা করা হয় যে ঠিক কীভাবে এটি কমিয়ে আনার উপায় অর্জন করা উচিত এবং কী অগ্রগতি হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করা। ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ‘কপ-২৮’আয়োজিত হবে।

বাংলাদেশ ও অন্যান্য জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে মিশরে অনুষ্ঠিত হওয়া’কপ-২৭’এর সাফল্যসমূহের মধ্যে রয়েছে একটি’ক্ষতি ও লোকসান’তহবিল সৃষ্টি করা,যা অভিযোজন বিষয়ক বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনের অনুকূল একটি চুক্তি এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহে জলবায়ু প্রযুক্তি-নির্ভর বিভিন্ন সমাধান কাজে লাগানোয় উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘কপ-২৭’এ একটি নতুন পাঁচ বছরব্যাপি কার্যক্রম-নির্ভর কর্মসূচি প্রণয়ন। অবশ্য ক্ষতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি প্রদানের বিষয়টি আরো এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়ায় ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগীদের মাঝে জলবায়ু সংক্রান্ত অগ্রাধিকারভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম,জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন সংক্রান্ত ২৭তম জাতিসংঘ কাঠামোগত সম্মেলনের (কপ ২৭) পরবরর্তীতে এবং ‘কপ-২৮’এর জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক কার্যক্রমের বিষয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় ।

উক্ত সভায় প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.ফারহিনা আহমেদ।

এ প্রসঙ্গে ড.ফারহিনা আহমেদ উল্লেখ করেন “বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ যার দ্রুত উন্নয়ন অত্যাবশ্যক এবং সেলক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থায়ন ও প্রযুক্তির সরবরাহ প্রয়োজন। জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা, জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান এবং মুজিব জলবায়ু ও সমৃদ্ধি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সহায়তা প্রয়োজন।

অধিকন্ত, বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি পর্যায়ে ধরে রাখার লক্ষ্যে উচ্চহারে গ্রিন হাউস গ্যাস নি:সরণকারী দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের নিঃসরণ কমিয়ে আনতে হবে যাতে আমাদের মত দেশগুলোকে ক্রমবর্ধমান গতিতে এবং ঘন ঘন আঘাত হানতে থাকা জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা যায়।”

মিস গোয়েন লুইস আরো বলেন যে,”জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য বিদ্যমান যে বরাদ্দ রয়েছে, বাংলাদেশের তা অপেক্ষা অনেক বেশি অর্থায়ন প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এর সাথে খাপ খাওয়ানো ও ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

অবশ্য উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জীবন ও জীবিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে এবং এ কাঠামো প্রণয়ন করা ও একে কার্যপোযোগী করার ক্ষেত্রে জলবায়ু সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় বিদ্যমান বিভিন্ন সম্পদ কাজে লাগানোর পাশাপাশি আরো ভালোভাবে খাপ খাওয়াতে সরকারকে সহায়তার জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে।”

বাংলাদেশস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের উন্নয়ন পরিচালক মি.ম্যাট ক্যানেল বলেন,”ব্রিটিশ সরকারের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করা একটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় এবং এ পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা প্রদান করার পাশাপাশি ১.৫ ডিগ্রি সীমা ধরে রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কার্যক্রম সমুন্নত রাখছি।

সকল উন্নয়ন ও মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমের মূলধারায় জলবায়ু বিষয়ক কার্যক্রমকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাত সমূহকে নিয়োজিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

আলোচনায় এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে যে জলবায় সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল অর্থায়ন শুধুমাত্র সরকারের তরফ থেকে যোগান দেয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদেরও অবশ্যই সহায়তা প্রদান করতে হবে। যে সকল জনগণ ও জনগোষ্ঠী সর্বাধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদের সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে বিদ্যমান তহবিল অগ্রধিকার ভিত্তিতে ব্যবহার করতে হবে।

জনগণের যদি দুর্যোগ এর আঘাত সহ্য করার সক্ষমতা বেশি থাকে,বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে। পরিশেষে,সর্বোচ্চ নিঃসরণকারীদের প্রতি জরুরি ও জোরালো আহবান এ যে,বৈশ্বিক উষ্ণতার হার ১.৫° সীমার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থবহ প্রতিশ্রুতি প্রদান করতে হবে। ২০২২ সালের নভেম্বরে মিশরের শারম্ এল-শেখ এলাকায়’কপ ২৭’অনুষ্ঠিত হয়।

১৮ নভেম্বর ২০২৩
এজি