কচুয়ায় ধানখেতে ইঁদুরের উপদ্রব, দিশেহারা কৃষকরা

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন ধানের মাঠে ইঁদুরের উপদ্রব চরম ভাবে বেড়েছে। ইঁদুর ধানখেতে কাঁচা ধান গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। খেতে ভরপুর পানি থাকলেও কমছে না ইদুরের উপদ্রব। ফলে রোপা ও বুনা উভয় আমনই ইঁদুরের উপদ্রবের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১৩ হাজার ২শ’ ৩৫ হেক্টর জমিতে রোপা ও বুনা আমন ধানের চাষ হয়েছে। তন্মধ্যে রোপা আমন ৪ হাজার ৬ শ’ ৭৫ হেক্টর ও বুনা আমন ৮ হাজার ৫ শ’ ৬০ হেক্টর।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ধানের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, আমনের খেত গুলো যেন ধারালো কাঁচি দিয়ে কেটে দিয়েছে। জমিতে পানি থাকা সত্ত্বেও আইলে গর্ত করে বাসা বেঁধে থাকা ইঁদুর সাতরিয়ে-সাতরিয়ে কাঁচা ধানের চারা কাটছে প্রতিনিয়ত। তাদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পারছে না কৃষকরা। ইঁদুর মারার জন্য ঔষধ ব্যবহার করেও কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক কৃষক বাঁশের কঞ্চিতে পলিথিন টাঙিয়ে দিচ্ছেন। বাতাসে পলিথিন উড়ানোর শব্দে ইঁদুরের উৎপাত কিছুটা কমলেও গাছ কাটা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না কৃষকরা।

রোপা আমন ধান লাগানোর সময় ছিল (আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে) বৃষ্টিহীন। বৃষ্টির জন্য রোপা আমন লাগতে কৃষকরা ছাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু মিলেনি বৃষ্টি। করোনা মহামারি ও যুদ্ধ বিগ্রহের কারনে বড় রকমের দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে এমনি সম্ভবনার কথা শুনে ফসল উৎপাদনে মরিয়া হয়ে উঠে কৃষকরা। বৃষ্টির পানির আশা ছেড়ে দিয়ে উপযুক্ত সময়ে ১৫/২০ দিন পিছিয়ে স্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ দিয়ে বিলম্বে লাগায় রোপা আমন। এতে কৃষকদের সেচ বাবদ গন্ডা প্রতি (৬ শতক) ১শ’ থেকে দেড় শ’ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়। তদুপরি মূল্য বৃদ্ধিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহারেও গুনতে হয় বাড়তি অর্থ। দেরিতে আমন লাগানো হলেও কাঙ্খিত বৃষ্টির পর সবুজ হয়ে উঠেছে ধানের খেত। কিন্তু ইঁদুরের উৎপাত বাড়ায় এবার লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের।

আইনগিরী গ্রামের নুরু উদ্দীন, নূরপুর গ্রামের আবু তাহের, নোয়াগাঁ গ্রামের কফিল উদ্দীন ও দোয়াটি গ্রামের নিমাই সরকার সহ একাধিক কৃষক জানান, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির অভাবে আমন লাগাতে সমস্যা সৃষ্টি হলেও মৌসুমের শেষের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠার সম্ভবনা দেখছিলেন তারা। সবুজে ভরে উঠেছে গোটা ফসলের মাঠ। এমন সময়ে কাঁচা ধান গাছে ইঁদুরের আক্রমন স্বপ্ন ভঙ্গের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। কাঁচা ধানের গাছ কেটে সাবাড় করে দেয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষা পেতে কীটনাশক ব্যবহার করেও কৃষকরা তেমন ফল পাচ্ছেন না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সোফায়েল হোসেন জানান, ইঁদুর কর্তৃক ফসল বিনষ্টের বিষয়টি প্রাকৃতিক ব্যাপার। দেশীয় পদ্ধতিতে ইঁদুর দমনের পাশাপাশি খেতে জিংক ফসফেট ও ল্যানিরেট ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করা যেতে পারে। তবে এসব ঔষধ একটি মাঠের সকল কৃষক একযোগে ব্যবহার করলে অনেকটা কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাবে।

তিনি আরও জানান, উপ-সহকারি কৃষি অফিসারগন মাঠে মাঠে গিয়ে কৃষকদেরকে কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু, ২০ অক্টোবর ২০২২

Share