Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দোকান ভাঙচুর, খাল দখলের অভিযোগ
ককটেল

ফরিদগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দোকান ভাঙচুর, খাল দখলের অভিযোগ

ফরিদগঞ্জ উপজেলার লতিফগঞ্জ বাজারে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা ত্রাস সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেছে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী। ওই সময়ে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অন্যের ভোগদখলীয় পাকা ভবন ভাঙ্গার চেষ্টা করে। ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে বেআইনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ততক্ষণে দুর্বৃত্তরা ভবনের আংশিক ভাঙতে সক্ষম হয়েছে।

এর আগে সন্ত্রাসীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল দখল করে আরসিসি পিলারের ওপর পাকা দেয়াল ও তার ওপর বিম নির্মাণ করেছে। নিজেদের জমিতে যাওয়ার জন্য ব্রীজ নির্মাণ করতে বেআইনীভাবে ওই কর্মকান্ড সংঘটিত করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। রোববার এলাকায় ঘুরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক লক্ষ্য করা গেছে। দোকান ভাঙ্গার ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রায় ৭০ বছর পূর্বে লতিফগঞ্জ বাজারটি স্থাপিত হয়েছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার অভ্যন্তরে। বাজারের দক্ষিণপাশ ঘেঁষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিআইপি খাল বহমান ও পার্শ্ববর্তী রামগঞ্জ উপজেলার সীমানা। বর্তমানে খালের পাড়ে প্রায় ৭০ টিসহ ওই বাজারে অন্তত চার শতাধীক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খাল পাড়ের প্রায় সকল দোকানঘর পাকা ভবনে। গত কয়েক মাস যাবত ওই দোকানগুলোর মাঝামাঝি স্থানে দু’টি দোকানঘর কৌশলে দখলে নিতে চেয়েছে একদল প্রভাবশালী। কৌশল ভেস্তে গেলে তারা জোরজবরদস্তির পথ বেছে নেয়।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, ঘটনার রাত ১১ টার দিকে অন্তত দেড় হাজার লোকের সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লতিফগঞ্জ বাজার ও খালের ওপর অবস্থান নেয়। ওই সময়ে তারা ককটেল ফাটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

সন্ত্রাসী বাহিনীর এক অংশ দোকানের পেছনে খালের ওপর দিনভর নির্মিত বাঁশের মাচায় অবস্থান নিয়ে দোকানঘর ভাঙ্গা শুরু করে। অপর অংশ বাজারের ভিতরে মহড়া দিতে থাকে। এরই মধ্যে খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহার মিয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপস্থিত হয়ে সন্ত্রাসী বাহিনীকে ছত্রভংগ করে দেয়। তারা কাউকে আটক করতে পারেনি। তবে, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

ককটেল

এলাকাবাসী ও মহিম মোল্লা নাম প্রকাশ করে জানিয়েছেন, প্রভাবশালীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মো: গোফরান, রফিক মাস্টার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ালিউল্লা, ডাক্তার আবদুল কাদের, কামরুল মোল্লাসহ অন্তত ১৫ জন ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তারা আরও জানান, বেআইনীভাবে খালের ওপর পাকা ব্রীজ নির্মাণ করতে পারলে রামগঞ্জ অংশে বিশাল মার্কেট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও, এর প্রায় তিনশত ফিট পশ্চিমদিকে ওই খালের ওপর পাকা ব্রীজ রয়েছে।

এদিকে, দোকান মালিক মহিম মোল্লা জানিয়েছেন, আমার জীবন গেলেও আমি দোকানঘর ছাড়বো না। বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বলেন, খাল দখল ও দোকান ভাঙ্গার সঙ্গে কারা জড়িত জানি না। তবে এমন খবর শুনেছি।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেছেন, খাল দখল করে দেয়াল নির্মাণ ও বাঁশের মাচা নির্মাণ করতে দেখেছি। আমি উপস্থিত হয়ে বেআইনী কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলেছি। তারা আমার বারণ শুনেনি। আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

ব্যবসায়ী মহসীন মিয়ার অভিযোগ, প্রভাবশালীরা কাউকে হুমকি-ধামকি, কাউকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। যে কারণে তারা প্রায় একমাস পূর্ব হতে এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে, সংবাদ সংগ্রহে গেলে কয়েক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে টাকা দেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেন ও নিউজ না করার জন্য পরামর্শ দেন।

এদিকে, মুঠোফোনে সাবেক এমপি মোঃ গোফরান বলেন, আমি আমার জমির ওপর একটি কলেজ করবো। এ জন্য রাস্তার প্রয়োজন। যেখানে রাস্তা হবে সেখানে খালের ওপর দু’টি দোকান আছে। ওই দোকান মালিক লতিফগঞ্জ মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।

ব্রীজ তৈরী করার জন্য আমি তাদের কাছ থেকে ওই জমি কিনে নিয়েছি। কিন্তু, সেখানে অনাহুতভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জনৈক মহিম মোল্লা। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কারা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে দোকান ভেঙ্গেছে আমি জানি না। আমি ওই সবের সঙ্গে জড়িত না। কিন্তু, খালের ওপর পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালের ওপর ব্রীজ করবেন কিভাবে।

এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন দেখি কি করা যায়। উল্লেখ্য, মো: গোফরান, এমপি জাসদ মালেক-রতন অংশের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলী হরি বলেছেন, ঘটনাটি শুনেছি। সরকারী ভূমি ও জানমাল রক্ষার জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শহীদ হোসেন বলেছেন, আইনশৃংখলা রক্ষায় আমরা সময়মতো পদক্ষেপ নিয়েছি ও পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এক প্রশ্নে তিনি বলেছেন, কোনো বিস্ফোরণের খবর পাইনি।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১